গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আনিকা তাহসিন
ধরুন ইচ্ছে হলো দূরে কোথাও বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে যাবেন অথবা আত্মীয় স্বজন নিয়ে দেখতে যাবেন কোন দর্শনীয় স্থান। বাস বা ট্রেনের আগেই যে জিনিসটার কথা আমাদের আগে মাথায় আসে তা হল প্রাইভেট গাড়ি। দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সময় সকলে একত্রে মিলে গাড়িতে করে যাওয়ার মজাই আলাদা। আজকাল তাই অনেকেই বিভিন্ন প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে, ঘুরতে-বেড়াতে বা বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রাইভেট কার ভাড়া নিয়ে থাকেন। কেননা অনেকে তো দেখা যায় সাধ থাকলেও সাধ্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আর এই জন্য সবার আগে আমাদের যার কথা মনে পড়ে সে রেন্ট এ কার ব্যবসায়ী।
বাংলাদেশে রেন্ট-এ-কার শিল্প দ্রুত বাড়ছে। ব্যাক্তিগতভাবে হোক বা ও ব্যবসা্র কাজে, স্বল্পমেয়াদী গাড়ি ভাড়া করতে আজকাল মানুষ বেশি আগ্রহী হচ্ছে। দেশের পরিবহন খাতে ভাড়ার গাড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। বিশেষ করে পর্যটক, প্রবাসী এবং পেশাজীবীদের মধ্যে।
জরিপে এসেছে,২০২৪ সালের মধ্যে দেশে এই শিল্পে প্রায় ১৭৮.৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হবে বলে পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। কীভাবে বাংলাদেশে সফলভাবে শুরু করতে পারেন রেন্ট-এ-কার ব্যবসা, জেনে নিন এর বিভিন্ন দিক-
বাংলাদেশের পরিবহন শিল্প ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে । যদিও রাইড-শেয়ারিং পরিষেবা বাংলাদেশে ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবুও, অনেক পর্যটক গাড়ি ভাড়াকে তাদের পছন্দের পরিবহন মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করছে। গ্রাহকদের জন্য সহজলভ্যতা এবং ভ্রমণের সুবিধা থাকায় এই খাতে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এই খাতে প্রবেশের আগে এর বাজারের চাহিদা এবং ব্যবসায়িক কৌশলগুলো বুঝে নেওয়া প্রয়োজন।
রেন্ট-এ-কারের চাহিদা বৃদ্ধির কারণ
১। পর্যটন ও ব্যবসায়িক ভ্রমণ: পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং বিদেশি ব্যবসায়িক ভ্রমণকারীদের আগমন এই সেক্টরের আয় বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলির মধ্যে অন্যতম।
২। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের বৃদ্ধি: ২০২৯ সালের মধ্যে, ৫৯% আয় অনলাইন রেন্ট-এ-কারের মাধ্যমে আসবে জরিপ বলে। যা এই শিল্পের প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের একটি বড় দিক নির্দেশ করে।
৩। গাড়ি মালিকানা নিয়ে ঝুঁকি: অনেক শহুরে বাসিন্দা বিভিন্ন কারণে গাড়ি কিনতে ভয় পান, যেমনঃ গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের অত্যাধিক খরচ, দূর্ঘটনার শিকার হওয়া ইত্যাদি। এসব কারণে স্বল্পমেয়াদী গাড়ি ভাড়ার দিকে ঝুঁকছেন অনেকে, যেন নিজস্ব গাড়ি না থাকা সত্ত্বেও তারা সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
রেন্ট-এ-কার ব্যবসার কিছু চ্যালেঞ্জসমূহ
বাংলাদেশে রেন্ট-এ-কার ব্যবসা শুরু করার আগে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হল শুরুতেই অনেক মূলধন প্রয়োজন, কারণ আপনাকে একাধিক গাড়ি কিনতে হবে, বীমা দিতে হবে এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। যদি আপনি গাড়ি কিনে শুরু করতে না চান সেই ক্ষেত্রে যাদের গাড়ি আছে, তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। বড় কোম্পানি এবং ছোট স্থানীয় ব্যবসাগুলোর মধ্যে কঠোর প্রতিযোগিতা রয়েছে, তাই প্রতিযোগিতামূলক দাম নির্ধারণ করা জরুরী। দুর্ঘটনা বা ক্ষতির ক্ষেত্রে বীমা এবং দায়িত্ব পরিচালনা করাও একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে সেক্ষেত্রে।
এছাড়াও, গ্রাহকদের সঙ্গে বিশ্বাস গড়ে তোলা এবং বিশেষ করে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সহজ বুকিংয়ের সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করতে সহায়ক হতে পারে। এছাড়া একটি শক্তিশালী বিপণন পরিকল্পনা তৈরি করা সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চমানের গ্রাহকদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ির ভাড়া করে তা এক বিশেষ আয়ের উৎস হতে পারে।
রেন্ট-এ-কার ব্যবসা শুরু করার আগে জেনে নিন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ-
১। গাড়ি বহর সংগ্রহ এবং পরিচালনা: রেন্ট-এ-কার ব্যবসার জন্য সঠিক গাড়ি নির্বাচন এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
২। যোগাযোগ বৃদ্ধি বা নেটওয়ার্কিং- যেকোনো ব্যবসায়ই এটি গুরুত্বপূর্ণ। এতে ব্যবসার প্রচার প্রসার সহজে হয়। নিজস্ব গাড়ি না থাকলেও এক্ষেত্রে ব্যবসা শুরু করা যায়।
৩। বিপণন কৌশল: ডিজিটাল মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম এবং অনলাইন বুকিং সিস্টেমের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিপণন কৌশল।
৪। প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নির্ধারণ: বাজার বিশ্লেষণ করে প্রতিযোগিতামূলক দাম নির্ধারণ করা, যাতে গ্রাহক আকর্ষণ করা সম্ভব হয়।
বাংলাদেশে রেন্ট-এ-কার শিল্প একটি সম্ভাবনাময় ব্যবসা ক্ষেত্র, যা আগামী বছরগুলোতে আরও প্রসারিত হবে। বাজারের প্রবৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং ভোক্তাদের চাহিদার সাথে মিল রেখে ব্যবসা পরিচালনা করলে সফলতা নিশ্চিত করা সম্ভব।
Comments