বিজনেস আইডিয়াস

ঘরে বসে সহজেই কেক এবং অন্যান্য বেকড পণ্যের ব্যবসা শুরু করবেন যেভাবে

0
ছবি: সংগৃহীত
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আয়েশা আক্তার

জন্মদিন, বিয়ে, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কিংবা যেকোনো অনুষ্ঠান, কেক ছাড়া আমরা কল্পনাই করতে পারি না। কেক খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ও বেশ মুশকিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে হোমমেড কেক বেকারির জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। বিশেষত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এই সৃজনশীল উদ্যোগ নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ঘরে বসে কেক বানিয়ে ব্যবসা শুরু করার এই প্রবণতা এখন দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু তাই নয়,  নারীদের জন্য এক নতুন আয়ের উৎস হয়ে উঠেছে হোমমেড কেক বেকারি।

হোমমেড কেক বেকারি বলতে কি বুঝায়? 

হোমমেড কেক বেকারি বলতে এমন ব্যবসাকে বোঝানো হয় যেখানে কেক এবং অন্যান্য বেকড পণ্য (যেমন কাপকেক, ব্রাউনি, কুকিজ,ডেজার্ট ইত্যাদি) ব্যক্তিগত বাড়ি বা ছোট রান্নাঘর থেকে তৈরি এবং বিক্রি করা হয়। সাধারণত, অনলাইনের মাধ্যমে এই ব্যবসা পরিচালনা করা হয়। ক্রেতারা অনলাইনে পণ্য অর্ডার করেন এবং বিক্রেতা সেই পণ্য হোম ডেলিভারি করে থাকেন।

‘হোমমেড কেক বেকারি’ এর সাথে দোকান কিংবা পেস্ট্রি শপের মূল পার্থক্য হলো হোম মেড কেকগুলো সাধারণত স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে তৈরী করা হয় । এছাড়াও হোমমেড কেক এর ক্ষেত্রে খাবারের গুনগত মান এবং ক্রেতার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। ক্রেতা চাইলে নিজ পছন্দের ডিজাইন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ কেক অর্ডার করতে পারেন। দোকানের কেক এর এই সুবিধা পাওয়া যায় না। 

বর্তমানে গৃহিণী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী অনেকেই এই ব্যবসায় বেশ আগ্রহী। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে ঘরে বসেই এই ব্যবসা শুরু করা যায়। 

ব্যবসা পরিকল্পনা তৈরীঃ 

যদি কেক বেকারি নিয়ে আগ্রহ থাকে এবং বেকারি থেকে আয় করার ইচ্ছা থাকে , তাহলে প্রথমেই একটি ব্যবসা পরিকল্পনা করতে হবে। কোনো প্রকার পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া এই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব নয়। কি নামে ব্যবসা শুরু করবেন তা ঠিক করতে হবে। ব্যবসা কিছুটা বড় হলে , রেজিস্ট্রেশন এর বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে। নামের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের লোগোও ঠিক করতে হবে। ব্যবসা শুরু করার জন্য কিছু পরিমাণ অর্থ হাতে রাখতে হবে। 

নির্দিষ্ট রান্নাঘর ও যাবতীয় সরঞ্জামাদি   

কেক বেকিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সরঞ্জাম সহ একটি সম্পূর্ণ সজ্জিত রান্নাঘর।

একটি রান্নাঘর সম্পূর্ণরূপে কেক বেক করার জন্য সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতি দিয়ে সজ্জিত। | ছবি: সংগৃহীত

হোমমেড কেক বেকারি ব্যবসার মূল ভিত্তি হলো রান্নাঘর। ব্যবসার শুরুতেই কেক বানানোর সকল যন্ত্রপাতি কিনতে হবে। অনেক কেক যাতে একই সময়ে তৈরী করতে পারেন, এমন প্রস্তুতিও রাখতে হবে। সাধারণ কিছু সরঞ্জাম যেমন ভাল মানের মিক্সার, নন-স্টিক কেক ট্রে, ডিজিটাল স্কেল, কুলিং ব়্যাক, পরিমাপের চামচ, মিশ্রণের বাটি, কাঠের চামচ, কেকের মিশ্রণ তৈরি এবং আইসিং-এর জন্য রাবারের স্প্যাটুলা, কেক কেস, বিভিন্ন ইঞ্চির মোল্ড এবং একটি ভাল ওভেন। শুরুতেই এই কয়েকটি সরঞ্জাম থাকলেও ব্যবসা বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী আরো অনেক ধরনের সরঞ্জামের প্রয়োজন হতে পারে। 

খরচ এবং মূল্য নির্ধারণঃ 

ব্যবসার শুরুতে অনেকেই কেকের দাম অনেকটা সস্তা রাখতে চায়। মূলত, ক্রেতা ধরার লক্ষ্যেই এই প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটা লাভজনক হবেনা। কারণ, পরে দাম বাড়ালে, ক্রেতারা সেই অর্থ দিতে ইচ্ছুক নাও হতে পারেন। বেকিংয়ে দক্ষতা যেমনই হোক না কেন, ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য কেকের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা জরুরি। এক্ষেত্রে পারিশ্রমিকের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।

ডেলিভারিঃ

ব্যবসার শুরুতেই কেক ডেলিভারি নিয়ে পরিকল্পনা থাকতে হবে। অনেক হোম বেকার ব্যক্তিগতভাবে কেক বাড়ি বাড়ি ডেলিভারি করেন বা ক্রেতারা তাঁদের বাড়ি এসে কেক নিয়ে যান। আবার অনেকে বিভিন্ন ডেলিভারি কোম্পানির মাধ্যমে কেক ডেলিভারি করে থাকেন। এক্ষেত্রে কোনো একটি কোম্পানির সাথে কথা বলে চুক্তি করা যেতে পারে। 

মার্কেটিং এবং ব্র্যান্ডিংঃ  

বর্তমানে মার্কেটিং এর জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বেশ জনপ্রিয়। ব্যবসার শুরুতে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে একটি পেইজ খুলে সেখানে কেকের ছবি শেয়ার করলে তা অনেক মানুষের কাছে পৌঁছায়। আবার, কেক বানানোর ভিডিও বিশেষ করে কেক ডেকোরেশনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়। এর মাধ্যমেই ব্যবসার মার্কেটিং করা যায়। শুধু তাই নয়, ফুড ভ্লগারদের বাসায় কেক বানিয়ে পাঠানো হলে , তাদের রিভিউ ব্যবসাকে সফল করতে অনেকটাই সাহায্য করে । 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ব্র্যান্ডিং। অর্ডারগুলি সরবরাহ করার সময় কেকের সাথে বিজনেস কার্ড পাঠানো যেতে পারে। বাক্স এবং অন্যান্য প্যাকেজিং ব্যবস্থা কাস্টমাইজ করা যায়। এতে লোগো এবং ব্র্যান্ডের নাম সুস্পষ্টভাবে পৌঁছে যাবে ক্রেতাদের কাছে। এই বিষয়গুলো সাধারণত মানুষের উপর দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলে।

বর্তমান সময়ে হোমমেড কেক ব্যবসা মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর তাই এই ব্যবসার প্রতিদ্বন্দ্বীও অনেক। এই ব্যবসায় সফল হতে হলে দক্ষতার পাশাপাশি ধৈর্য্য প্রয়োজন । নিত্যনতুন ডিজাইন শিখতে হবে। তা না হলে ক্রেতারা অন্য প্রতিষ্ঠানের দিকে চলে যাবে। মনে রাখতে হবে এই ব্যবসায় ক্রেতার সন্তুষ্টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই ক্রেতার সাথে সুসম্পর্কও বজায় রাখতে হবে। 

 “তথ্যসূত্র” 

কিভাবে প্রফেশনাল সিভি তৈরি করবেন

Previous article

মার্ক জুকারবার্গের ফেসবুক আবিষ্কারঃ যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *