টেক রিভিউস

ফোল্ডিংয়ের নতুন যুগে হুয়াওয়ে মেট এক্সটি

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আয়শা মারিয়া

হুয়াওয়ে সম্প্রতি একটি অত্যন্ত উদ্ভাবনী ডিভাইস- মেট এক্সটি প্রকাশ করেছে। এই ত্রি-ফোল্ডিং স্মার্টফোনটির ১০ ইঞ্চির ফোল্ডিং স্ক্রিন, স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটের সীমারেখা পার করে ফেলেছে। ফোনটি নিয়ে যতই কথা বলা হবে  ততই বোঝা যাবে ফোনটি কতটা অত্যাধুনিক। ফোনটির ত্রি-ফোল্ডিং ডিজাইন, অবিশ্বাস্য ক্যামেরা সিস্টেম এবং শক্তিশালী কিরিন প্রসেসর এটিকে স্মার্টফোনের ভবিষ্যতের একটি ঝলক হিসেবে তুলে ধরেছে।

মেট এক্সটির প্রথম চোখে পড়ার বিষয় হল এর পাতলা ডিজাইন। মাত্র ৩.৬ মিলিমিটার পুরুত্বে এই ফোনটি অবিশ্বাস্যভাবে স্লেন্ডার এবং অন্যান্য প্রধান স্ট্রিম হরাইজোন্টাল ফোল্ডেবল ফোনগুলোর তুলনায় আরও আকর্ষণীয়। বাজারের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ফোল্ডেবল ফোনগুলির মধ্যে হুয়াওয়ে মেট এক্সটি অন্যতম। বর্তমানে ফোনটির দাম ১৯,৯৯৯ ইউয়ান (প্রায় ২,৮০০ ডলার; ,২০০ পাউন্ড; ,২৪৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলার) থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ স্টোরেজ ভেরিয়েন্টের জন্য ২৩,৯৯৯ ইউয়ান বা প্রায় ৩,৪২০ ডলার পর্যন্ত এবং বাংলাদেশে এটির দাম ৪৮০,০০০ টাকা। এর অতিরিক্ত দামের কারণে মেট এক্সটি আলটিমেট ডিজাইন হুয়াওয়ে-এর জন্য বিক্রয় বাণিজ্যে খুব বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছেনা।

ইন্টারন্যাশনাল ডাটা কর্পোরেশনের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক রিপোর্ট অনুযায়ী, হুয়াওয়ে বিশ্বের ১ নাম্বার ফোল্ডেবল ফোন নির্মাতা। হুয়াওয়ে বিশ্বব্যাপী ২৭.৫% বাজার শেয়ার দখল করেছে, যখন স্যামসাং তার ভালভাবে পর্যালোচিত জেড ফোল্ড এবং জেড ফ্লিপ সিরিজের সাথে ১৬.৪% দখল করেছে।

মেট এক্সটির অভ্যন্তরীণ স্ক্রিন এবং হিঞ্জ

আপনি যখন এই ফোনটিকে সামনে থেকে দেখবেন তখন আপনার কাছে এটিকে একটি সাধারণ স্মার্টফোনের ডিজাইনের মতই মনে হবে। চীনা প্রযুক্তি জায়ান্টের নতুন ডিভাইসটি তিনটি স্ক্রিন আকার অফার করে: ভাঁজ করা অবস্থায় একটি ৬.৪ ইঞ্চির সিঙ্গেল স্ক্রিন এবং এটিতে একটি ক্যান্ডি বার ফোনের অনুরূপ অনুপাত রয়েছে। একটি পাশ খোলা অবস্থায় ৭.৯ ইঞ্চির ডুয়াল-পেন এবং উভয় হিঞ্জ সম্পূর্ণ খোলা অবস্থায় একটি ১০.২ ইঞ্চির কিউএইচডি রেজোলিউশনের ডিসপ্লে রয়েছে। এটি যেমন ডকুমেন্ট সম্পাদনা এবং বিনোদন কার্যক্রম, যেমন- সিনেমা দেখা বা গেম খেলা উভয়ের জন্য উপযুক্ত করে তোলে। ফোনটিতে দুটি হিঞ্জ রয়েছে, যা এটিকে বিভিন্নভাবে ভাঁজ করতে সাহায্য করে।

হুয়াওয়ে মেট এক্সটির অভ্যন্তরীণ স্ক্রিন এবং হিঞ্জের ডিজাইন, যা ফোল্ডেবল প্রযুক্তির উন্নতি প্রদর্শন করে।

হুয়াওয়ে মেট এক্সটির অভ্যন্তরীণ স্ক্রিন এবং হিঞ্জের উদ্ভাবনী ডিজাইন। | ছবি সংগৃহীত।

ডিসপ্লেতেও দুটি সূক্ষ্ম ক্রিজ রয়েছে যা অন্যান্য ফোল্ডেবলের মতো স্ক্রিনের নিচে দিয়ে চলে। পুরোপুরি ভাঁজ করা অবস্থায়, মেট এক্সটির পুরুত্ব মাত্র ১২.৮ মিলিমিটার, যা “জেড ফোল্ড ৬” এর ১২.১ মিলিমিটারের চেয়ে খুব বেশি নয়। সম্পূর্ণ খোলা অবস্থায়, স্ক্রিনটি একটি এলটিপিও ওএলইডি, যার রেজোলিউশন ৩১৮৪ x ২২৩২ পিক্সেল, ৯০ হার্জ রিফ্রেশ রেট এবং ১৬:১১ অনুপাত। ডিজাইনটি আপনার পকেটে একটি পূর্ণ-আকারের ট্যাবলেট বহন করার অনন্য অভিজ্ঞতা দিবে।

মেট এক্সটির ডিজাইন পরিচিত মনে হলেও আলাদা

যদিও মেট এক্সটি আলটিমেট ডিজাইন বাণিজ্যিক বাজারে আসা প্রথম ত্রি-ফোল্ডিং ফোন, তবে এর ডিজাইন এর সাথে অন্যান্য স্মার্টফোনের  মিল রয়েছে। ফোনটিকে উল্টে পেছন দিকে দেখলে, অষ্টভুজাকৃতির ক্যামেরা বাম্পটি অনেকটা অনারের “ম্যাজিক ভি ফোল্ড ২”-এর মতো দেখায়। আসলে, ডিভাইসের সামগ্রিক ডিজাইনিং রঙ থেকে শুরু করে বর্ডার এবং ফিনিশিং পর্যন্ত – অনারের হালকা ওজনের বই-স্টাইল ফোল্ডেবল, “ম্যাজিক ভি ৩”-এর অনুরূপ। এই সাদৃশ্যের পেছনে মুল কারণ হলো-  হুয়াওয়ে ২০২০ সালের শেষের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে অনার বিক্রি করার আগে সাত বছর ধরে এর মালিক ছিল।

মেট এক্সটির ক্যামেরা বাম্পে একটি ৫০-মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, ১২-মেগাপিক্সেল আল্ট্রাওয়াইড-এঙ্গেল ক্যামেরা এবং একটি ১২-মেগাপিক্সেল পেরিসকোপ-স্টাইল টেলিফোটো ক্যামেরা রয়েছে। এছাড়াও মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরার জন্য বাম প্রান্তে একটি ছোট কাটআউট রয়েছে। উজ্জ্বল এবং কম আলোর পরিস্থিতিতে তোলা ছবি সাধারণত মেট এক্সটির স্ক্রিনে ভালো দেখায়। তবে, কয়েক মিনিটের জন্য টেলিফোটো লেন্স পরীক্ষা করার সময় এবং পূর্ণ ১০x জুম করার সময় মৃদু ইনডোর আলোতে স্পষ্ট শট তোলাতে এটির প্রচেষ্টা বেশ লক্ষণীয়।

এছাড়াও এই ফোনটি খোলা অবস্থায় কীবোর্ড দুটি ভাগে বিভক্ত হতে পারে, যা টাইপ করার সময় আরও আরামদায়ক করে এবং ফোনটির ধাতব ফ্রেম এবং চামড়ার মতো পিছনের অংশের কারণে উচ্চমানের অনুভূতি দেয়

হুয়াওয়ে মেট এক্সটি’র পারফর্মেন্স

হুয়াওয়ে মেট এক্সটিতে কিরিন ৯০১০ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে, যা হুয়াওয়ে নিজেই তৈরি করেছে। এটি ১৬ জিবি র‍্যাম এবং ১টিবি স্টোরেজ রয়েছে

ফোনটির মাল্টিটাস্কিং দুটি স্প্লিট-স্ক্রিন অ্যাপ এবং একটি ফ্লোটিং উইন্ডোতে সীমাবদ্ধযা বর্তমান বই-স্টাইল ফোল্ডেবলের চেয়ে অনেক বেশি নয়। হুয়াওয়ের প্রতিটি স্ক্রিন সেকশন মাল্টিটাস্কিংয়ের জন্য দুর্দান্ত কাজ করে। এই ফোনটিতে ৫৬০০ এমএচ এর ব্যাটারি সহ আপনি ঘন ঘন চার্জ না করেই সারাদিন ফোনটি চার্জড রাখতে পারবেন। এর পারফর্মেন্স অনুযায়ী এটির দাম উপযুক্ত, কারণ এটি অন্যান্য অনুরূপ ফোনের তুলনায় খুব শক্তিশালী, স্টাইলিশ এবং সাশ্রয়ী।

তবে ফোনটিতে মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরা ভিডিও কলের জন্য ঠিক আছে, তবে উচ্চ-মানের সেলফির জন্য এটি আদর্শ নয়।  এছাড়াও আপনি এটিতে মেমোরি কার্ড ব্যবহার করে আরও স্টোরেজ যোগ করার সুযোগ পাবেন না।

হুয়াওয়ে মেট এক্সটি’র স্পেশিফিকেশন নিচের ছবিতে বিস্তারিত দেওয়া হলো-

হুয়াওয়ে মেট এক্সটি’র স্পেশিফিকেশন, যা তার শক্তিশালী পারফরম্যান্স এবং আধুনিক বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি বিস্তারিত প্রদর্শন।

হুয়াওয়ে মেট এক্সটি’র স্পেশিফিকেশন: শক্তিশালী পারফরম্যান্স এবং আধুনিক বৈশিষ্ট্য। | ছবি সংগৃহীত।

“তথ্যসূত্র”

কর্মজীবনে ভারসাম্য রক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কার্যকরী ভূমিকা

Previous article

পরিবেশবান্ধব পোশাক শিল্পে বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *