কোম্পানি ফরেনসিকস

চালডাল: বাংলাদেশের নিত্যপণ্যেরবাজারে এক নতুন দিগন্ত

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আনিকা তায়্যিবা

ঠিক এখন হয়তো আপনার হাতে আছে একটি মোবাইল ফোন। আপনি স্ক্রল করছেন একের পর এক। জানেন কি, হাতের এই মোবাইলটা দিয়েই বাজার থেকে কিনে নিতে পারবেন চাল, ডাল্, ডিম, দুধ। শুধু তাই নয়, ধরুন, হঠাৎ আসা অতিথিকে আপ্যায়ন করতে বাড়িতে কিছুই নেই। চাইলেই অর্ডার করতে পারবেন যা খুশি তাই। মুদিখানার বাজারকে এভাবে ক্রেতার হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে চালডাল.কম।

২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত, চালডাল বাংলাদেশের গ্রোসারি শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত এই স্টার্টআপের যাত্রা শুরু হয়েছিল সহপ্রতিষ্ঠাতা জিয়া আশরাফ, ওয়াসিম আলিম এবং তেজাস বিশ্বনাথের হাত ধরে। ক্রেতাদের দোরগোড়ায় মানসম্মত পণ্য সরবরাহের লক্ষ্যে শুরু হওয়া চালডাল আজ বিশ্বস্ত এবং গ্রাহকনির্ভর একটি কমার্স প্ল্যাটফর্ম। বর্তমানে প্রায় ১৪. মিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল সংগ্রহ করে তারা  ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন, চেরুবিক ভেঞ্চার্স, এবং ৭ পারসেন্ট ভেঞ্চার্স এর মতো বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছে।

চালডালের পথচলা

সাল ২০১২। চালডালের সহপ্রতিষ্ঠাতা জিয়া আশরাফ একটি তৈরি পোশাক কারখানায় অপারেশনের প্রধান হিসেবে কাজ করেন। তিনি কারখানার শ্রমিকদের কঠোর কাজের পরিবেশ কম মজুরি দেখে তাদের নিয়ে নতুন কিছু তৈরি করার কথা ভাবলেন। এই ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে বন্ধু ওয়াসিম এবং তেজাসকে নিয়ে শুরু করেন ব্যবসার পরিকল্পনা।

চালডালের পথচলা সম্পর্কিত প্রতীকী চিত্র, যা তাদের ব্যবসার বৃদ্ধি ও নিত্যপণ্যের বাজারে উদ্ভাবনী পদক্ষেপকে তুলে ধরে।

চালডালের পথচলা: ব্যবসার বৃদ্ধি ও নতুন দিগন্ত উন্মোচনের প্রতীক। | ছবি সংগৃহীত।

প্রথমদিকে তারা একটি তৈরি পোশাক কারখানা খোলার কথা ভাবেন, কিন্তু রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর তারা এই পরিকল্পনা বাদ দেন। পরের বছর ডিজিটাল ব্যবসার ধারণা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হতে শুরু করলে জিয়া কমার্স নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। এই ধারণা থেকেই তিনি ঢাকায় গ্রোসারি পণ্য সরবরাহের পরিকল্পনা করেন।  চাল এবং ডালের মতো নিত্যপণ্যের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয়তা থেকে ব্যবসার নাম রাখেন চালডাল।

একটি নতুন ধারার ব্যবসা হওয়ায় শুরুতে চালডালএর জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল অনেক। তবে জিয়ার পোশাক শিল্পে কাজের অভিজ্ঞতা মান নিয়ন্ত্রণ এবং বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনায় অনেক সাহায্য করে। তারা বাজারে একটি অনন্য মানদণ্ড স্থাপন করে, যেমন বি এস টি আই সনদপ্রাপ্ত পণ্য বিক্রি এবং মানসম্পন্ন সরবরাহকারীদের সাথে চুক্তি নিশ্চিত করা। 

এছাড়াও চালডাল এমন একটি কমার্স প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে যা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্যও সহায়ক। জিয়ার পরিবারের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ভাইয়ের প্রতি তার দায়বদ্ধতা তাকে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করেছে যেখানে শ্রবণ বাক প্রতিবন্ধী গ্রাহকদের চ্যাট অপশনের মাধ্যমে সাহায্য করার ব্যবস্থা রয়েছে।

মহামারির সময় ব্যবসায়িক প্রসার

মহামারির সময় চালডালের ব্যবসায়িক প্রসার, যা তাদের কার্যক্রমে উদ্ভাবনী ধারণা এবং পরিস্থিতির সঙ্গে অভিযোজনকে তুলে ধরে।

মহামারির সময় চালডালের ব্যবসায়িক প্রসার এবং অভিযোজনের প্রতীক। | ছবি সংগৃহীত।

চালডাল মানুষকে ঘরে বসে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করে থাকে। তাই মুদিবাজার করতে এখন আর মানুষ কে বাইরে বেরতে হয়না। কোভিড১৯ মহামারির লকডাউনের সকলে যখন ঘরে বন্দি, বাজার করতে বাইরে যেতে অপারগ, তখনই চালডালের ব্যবসা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। মহামারির আগে দৈনিক গড়ে ,৫০০ অর্ডার পেলেও, লকডাউনের সময় প্রায় ১৬,০০০ অর্ডারে পৌঁছায়। এই চাহিদা পূরণের জন্য, চালডাল দ্রুত তার গুদাম কর্মীসংখ্যা বাড়ায়। মহামারির সময় অনেকেই চালডালের সেবার উপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে এবং কোম্পানিটি তার সেবার মান বজায় রেখে ব্যবসার প্রসার অব্যাহত রাখে।

চালডাল -এর টেকসই পন্থা

চালডাল মান নিশ্চিত করতে বি এস টি আই এর সাথে সরাসরি চুক্তি করে এবং স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে তাজা শাকসবজি সংগ্রহ করে। তারা বাজারে স্থিতিশীলভাবে উন্নতি করার জন্য অন্য উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করে

“চালডাল ভেজিটেবল নেটওয়ার্ক” নামে আরও একটি উদ্যোগ গ্রহন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে তারা কৃষকদের কাছ থেকে  তাদের নিজেদের উৎপাদিত শাকসবজি সংগ্রহ করে এবং গ্রাহকদের সরবরাহ করে থাকে। এছাড়াও তারা পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করে বাজার মূল্যের কাছাকাছি দাম ধরে গ্রাহকদের উন্নতমানের সেবা দিয়ে থাকে।

চালডাল-এর টেকসই পন্থা, যা তাদের পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসায়িক উন্নয়নকে তুলে ধরে।

চালডাল-এর টেকসই পন্থা এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের প্রতীক। | ছবি সংগৃহীত।

চালডালের ভবিষ্যৎ

চালডাল বর্তমানে বাংলাদেশের নতুন স্টার্টআপগুলোর জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি তার মান বজায় রেখে সফলতার শীর্ষে পৌঁছেছে, যা অন্যান্য স্টার্টআপের জন্য প্রেরণার উৎস। সঠিক মানের পণ্য সরবরাহ, অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা এবং স্থানীয় ব্যবসায় সহযোগিতা চালডালকে বাংলাদেশের গ্রোসারি তথা ই-কমার্স ক্ষেত্রে বিশেষ পরিচিতি দিয়েছে যা ভবিষ্যতে নতুন উদ্যোক্তাদের ও অনুপ্রেরণা যোগাবে।

“তথ্যসূত্র”

বাংলাদেশীদের ভরসা বিকাশে

Previous article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *