Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আয়শা মারিয়া |
আপনি কি কাজের ক্ষেত্রে আপনার উৎপাদনশীলতা বাড়াতে চান? তবে টু-ডু লিস্ট, ক্যালেন্ডার এবং অতিরিক্ত কফি পানের পরিবর্তে আপনার প্রয়োজন হলো নিয়মিত ঘুম। বর্তমান প্রতিযোগীতার এই যুগে ব্যক্তিগত জীবন বা কর্মক্ষেত্রের যেকোনো কাজে উৎপাদনশীলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ঘুম এবং উৎপাদনশীলতা কিভাবে একে অন্যের সাথে জড়িত এ বিষয়ে কিন্তু আমাদের সবারই কম বেশি ধারণা আছে। কারণ আপনারা অনেকেই জানেন যখন ঘুমের চক্র নষ্ট হয় তখন আপনার জীবনে তা কীরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
ঘুমের অভাব বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যদিও বেশিরভাগ কারণই ক্ষতিকর নয়, তবে সেগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকাও জরুরী। ঘুমের অভাবের কারণ এবং প্রভাব সবার জন্য কিন্তু একই রকম নয়। কিছু মানুষের অনেক চেষ্টা্র পরেও পর্যাপ্ত ঘুম হয় না।
সহজভাবে বললে, ঘুমের অভাব হল পর্যাপ্ত ঘুম না পাওয়ার ফল। বিশেষজ্ঞরা প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে কমপক্ষে সাত ঘণ্টা ঘুমাতে পরামর্শ দেন। তবে, ৩৫% আমেরিকান প্রতি রাতে সাত ঘণ্টার কম ঘুমায় এবং ৭০% পর্যন্ত নিয়মিত ঘুমের অভাব বোধ করে। তবে যদি এটি কয়েক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে, তাকে দীর্ঘস্থায়ী ঘুমের অভাব বলা হয়।
সাধারণত ঘুমের অভাব যাদের হয়, একাধিক চাকরি বা দীর্ঘ শিফটে কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে এটি বেশ সাধারণ। শিফট ধরে কাজ করা কর্মীরাও ঘুমের অভাবের সাথে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে পারে না, কারণ তাদের রুটিন প্রাকৃতিক ঘুম-জাগরণ চক্রের সাথে মেলে না।
কম ঘুমের কারণে কাজের উপর যেসব প্রভাব পড়ে
মাত্র কয়েক রাত কম ঘুমালেও কাজের ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এইভাবে কম ঘুমালে এক বা দুই রাত পুরোপুরি ঘুম না হওয়ার মতোই শরীরের কার্যক্ষমতা কমে যায়।
কম ঘুমের লক্ষণ শুধু ক্লান্তি নয়। মানুষ বিরক্ত হয়ে পড়তে পারে, স্পষ্টভাবে চিন্তা করতে বা স্মৃতি সৃষ্টি করতে সমস্যা হতে পারে। আসলে, ঘুমের অভাব মানসিক কার্যক্রমের অভাবের দিকে পরিচালিত করে। ঘুম না হলে আপনি কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে পারেন এবং ভুল করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অনিদ্রায় ভোগা মানুষদের মনোযোগ কমে যায় এবং এমনকি তাদের কাজের দায়িত্ব পালন করতেও সমস্যা হয়।

কম ঘুমের কারণে কাজের উপর বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, যা কর্মদক্ষতা ও মনোযোগ কমিয়ে দেয়। | ছবি সংগৃহীত।
কম ঘুম যেকোনো দুর্ঘটনা বা কর্মস্থলে নেতিবাচক দিকেও পরিচালিত করতে পারে। যারা ঘুমের অভাবে ভোগে তাদের কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা ৭০% বেশি। ঘুমের অভাবের কারণে আমেরিকান শ্রমিক শক্তি ১.২৩ মিলিয়ন কর্মদিবস হারায়। ২০০৫ সালে ঘুমের অভাবের অর্থনৈতিক ব্যয় ২৮০ থেকে ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে ছিল।
স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য কিছু উপায়
ঘুমের মান উন্নত করার জন্য কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে। যেমন-
নিয়মিত সময়সূচী: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং একই সময়ে ঘুম থেকে উঠুন। এটি আপনার শরীরকে ঘুমের একটি নির্দিষ্ট ছন্দে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
দৈনিক শারীরিক পরিশ্রম: নিয়মিত ব্যায়াম বা বাইরে বের হওয়া ঘুম ভালো করতে সাহায্য করে। তবে ঘুমের আগে খুব বেশি পরিশ্রম করা এড়িয়ে চলুন।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ঘুমের আগে নিকোটিন ও ক্যাফেইনযুক্ত খাবার-দাবার এড়িয়ে চলুন। এগুলো আপনাকে জাগিয়ে রাখতে পারে। ভারী খাবার এবং অ্যালকোহলও ঘুমের মধ্যে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
ঘুমের আগে একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন
ইলেকট্রনিক্স এড়িয়ে চলুন: ঘুমের আগে এক ঘণ্টা ইলেকট্রনিক্স যেমন টিভি, মোবাইল ফোন এবং কম্পিউটার ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। এগুলো থেকে নির্গত আলো মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে এবং আপনাকে জাগিয়ে রাখতে পারে।
রিলাক্সেশন টেকনিক: ঘুমের আগে গরম পানিতে স্নান করুন, ধ্যান করুন, বই পড়ুন বা মৃদু সঙ্গীত শুনুন। এতে আপনার মন শান্ত হবে।
ঘুমের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন
অন্ধকার রাখুন: আলো ঘুমকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ঘর অন্ধকার রাখার জন্য আই মাস্ক ব্যবহার করুন বা পর্দা টেনে রাখুন।
ঠান্ডা পরিবেশ: ঘুমের সময় শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। ঘরের তাপমাত্রা এমন রাখুন যাতে আপনি খুব গরম বা খুব ঠান্ডা না বোধ করেন।

ঘুমের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন, যা স্বাস্থ্যের উন্নতি ও ভালো ঘুম নিশ্চিত করতে সহায়ক। | ছবি সংগৃহীত।
দিনে ছোট্ট ঘুম
দুপুরের ঘুম: যদি দিনের মধ্যে ঘুম আসে, তাহলে ১০-২০ মিনিটের জন্য একটি ছোট্ট ঘুম নিন। এটি আপনাকে সতেজ করে তুলবে এবং কর্মক্ষমতা বাড়াবে।
ঘুমের অভ্যাস পরিবর্তন করতে সময় লাগবে। ধৈর্য ধরে চেষ্টা করুন এবং আপনার শরীরের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ঘুমের রুটিন খুঁজে বের করুন। ভালো ঘুমের ফলে আপনি সুস্থ থাকবেন এবং কাজে আরও ভালো পারফর্ম করতে পারবেন।
স্বাস্থ্যকর ঘুমের রুটিন আমাদেরকে আরও উৎপাদনশীল করে তুলতে পারে
ঘুম আমাদের স্বাস্থ্য এবং উৎপাদনশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের মস্তিষ্ক ও শরীরকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে, আমাদের মেজাজ উন্নত করে এবং সুস্থ মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখে। ঘুম হলো আরও উৎপাদনশীল এবং অনুপ্রাণিত হওয়ার চাবিকাঠি।
আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রতিদিন কমপক্ষে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। ঘুমের মান উন্নত করতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং ঘুমের অভ্যাস অনুসরণ করুন এবং একটি শান্ত পরিবেশ তৈরি করুন।
Comments