বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৩১, ২০২৪
এনভাইরো-লাইফস্টাইলস্কিল এন্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট

কিভাবে প্রফেশনাল সিভি তৈরি করবেন

0

গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির

আমার সবাই আমাদের কাঙ্ক্ষিত চাকরি পেতেচাই। ততে এই চাকরি পাবার মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় দুইটি বাধা প্রথম আপনার সিভি, দ্বিতীয় ইন্টারভিউ। ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যপারটি হলো আপনার সিভি। কারণ আপনার সিভি দেখে ৬-৭ সেকেন্ডের মধ্যেই চাকরিদাতা সিদ্ধান্ত আপনাকে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকবেন কিনা। তাই বুঝতেই পারছেন চাকরি পাবার ক্ষেত্রে সিভি কতটা গুরুতব বহন করে। তাই আজ আমরা জানব কিভাবে আপনি প্রফেশনাল সিভি তৈরি করতে পারেন।              

সিভি কি?

সিভি (CV) বা  Curriculum Vitae (কারিকুলাম ভাইটা) যা মুলত একটি ল্যাটিন শব্দ। একজন ব্যক্তির জীবনের সকল অর্জন এর সংক্ষিপ্ত  বিবরণ হলো  সিভি। বর্তমান চাকুরির বাজারে সিভি বলতে বোঝায় শর্ট সিভি যা সাধারণত দুই পৃষ্ঠার হয়ে থাকে। তবে অ্যাকাডেমিয়ার জগতে সিভি বলতে হেভি এক্সটেনসিভ সিভিগুলো বুঝায়। যা অনেক সময় ৬৯ পৃষ্ঠাও হতে পারে! 

সিভি না কি রেজুমে? 

চাকরিপ্রার্থীদের জন্য অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং শিক্ষার মতো বিভাগগুলি হাইলাইট করে একটি সিভি লেখার জন্য একটি পেশাদার লেআউটের উদাহরণ।

চাকরির আবেদনের জন্য একটি সিভি লিখতে সহজ এবং কার্যকর লেআউট। | ছবি: সংগৃহীত

চাকরির জন্য কোনটা পাঠাবেন কোম্পানিকে সিভি নাকি রেজুমি? আমরা সচরাচর সবাই এই সমস্যাই ভুগি। মুলত সিভি আর রেজুমি দুইটা একই পার্থক্যটা শুধু আকারে। কর্পোরেট জগতে সিভি বলতে শর্ট জীবন বৃত্তান্তকেই বোঝায়। অনেক দেশে আবার চাকরির ক্ষেত্রে রেজুমে আর অ্যাকাডেমিয়াতে সিভি শব্দটির চল বেশি। 

আপনার সিভিতে কোন ব্যপার গুলি খেয়াল রাখবেন 

সিভিতে অনেকেই গদ বাধা তথ্য দিয়ে থাকি তা না করে একটি সিভি একটি সঠিক ফরমেতে লিখতে হবে। সেকশন এবং সাব সেকশন এর মধ্যমে তথ্য গুলিকে লিখতে হবে। প্রথমে হেডার, সেখানে কন্টাক্ট ডিটেইলস, তারপর পার্সোনাল প্রোফাইল। এছাড়া সঠিক ফন্ট বাছাই করা, লে-আউট ঠিক রাখা, অতিরিক্ত তথ্য দেওয়ার বদলে সুনির্দিষ্ট এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য দেয়া ইত্যাদি। এছাড়া আর যে বিষয় গুলিতে খেয়াল রাখবেন,

অবজেক্টিভ/উদ্দেশ্যঃ 

সিভির এই অংশে আপনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী এ ব্যাপারে গুছিয়ে লিখুন।কোম্পানিতে যে কাজের জন্য আবেদন করছেন যেই কাজ সম্পর্কিত যদি অভিজ্ঞতা থাকে তবে তা  সংক্ষেপে তুলে ধরুন।

কন্টাক্ট ইনফরমেশন বা যোগাযোগের তথ্যঃ 

আপনার ভালো নাম, ইমেইল, মোবাইল নাম্বার, লিঙ্কডইন এবং হোম অ্যাড্রেস দিতে হবে ঠিকভাবে।তবে মাথায় রাখতে হবে সিকুয়েন্স যেন ঠিক থাকে, নামের আগে মোবাইল নাম্বার দিবেন না। 

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ 

নিজের পড়াশুনার বিবরণ যদি কেউ ঠিক করে সিভিতে দিতে না পারে প্রার্থীকে কেই বা নিতে চাইবে বলুন! আপনি কোন  প্রতিষ্ঠান থেকে পরেছেন, কত সালে, সেই ডিগ্রির নাম সঠিক ভাবে যোগ করুন। তবে সবার আগে সর্বশেষ যে ডিগ্রি অর্জন করেছেন সেই সম্পর্কে লিখুন। যদি প্রথম বারের মত চাকরির আবেদন করে থাকেন তবে আপনাকে বিশেষ নজর দিতে হবে এই অংশে। পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ, এক্সট্রা ডিসিপ্লিন, কোর্স বা ক্লাবিং এর অভিজ্ঞতাগুলো যোগ করতে পারেন। 

কাজের অভিজ্ঞতাঃ 

অনেকে এই অংশে তার পুরো জীবনের সকল প্রকার চাকরির অভিজ্ঞতা সংযুক্ত করে। তা না করে প্রাসঙ্গিক চাকরি বা কাজের অভিজ্ঞতা সিভিতে দিতে হবে। আপনার আগের কাজের অভিজ্ঞতায় কিভাবে বর্তমান কোম্পানিকে সেবা প্রদান করতে পারবেন সেই সম্পর্কে লিখুন। কারণ এটাই আপনার সিভির সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

স্কিল/ দক্ষতাঃ 

সিভিতে চাকরির পোস্টের সাথে প্রাসঙ্গিক স্কিলগুলো দিতে হবে।  যেখানে অ্যাপ্লাই করছেন সেখানকার  জবের সাথে যে দক্ষতাটা যায়, খাপ খায় সেটিই দিন। অনলাইনে সস্তায় করা যে কোনও বিষয়ে সার্টিফিকেট থাকলেই তা উল্লেখ করবেন না। এজন্যই জব ডেসক্রিপশন ঠিক মতো পড়া জরুরি। 

রেফারেন্সঃ 

আপনার রেফারেন্স হিসেবে কার নাম দিবেন? আপনার বাবার নাকি আত্মীয় স্বজন, এদের মধ্যে কেউ না। আপনার রেফারেন্স হতে পারে আপানার প্রতিষ্ঠানের প্রফেসর, অথবা পূর্বে কাজ করেছেন সেখানকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তবে অবশ্যই যার নাম ব্যবহার করছেন তার অনুমতি নেওয়া ভালো। কখনোই  সিভিতে কখনোই ভুল তথ্য দিবেন না, এতে আপনার জব পাবার সম্ভাবনা কমে যাবে। 

সিভি লিখতে যে ১২টি ভুল সবাই করতে পারেঃ 

১। সঠিক  ই-মেইল ঠিকানা ব্যবহার না করা। অনেকেই আছে যারা ছোটবেলার মজার ছলে বানানো ই-মেইল সিভিতে দিয়ে থাকে যেমন [email protected] অথবা [email protected]। আমরা যত সম্ভব এই সমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকব এবং নিজের পুরো নাম দিয়ে ই-মেইল তৈরি করবো। 

২। ই-মেইল পাঠানোর সময় সাবজেক্ট অংশে my cv, cv for this for এই সমস্ত লিখা থেকে বিরত থাকুন।  যে প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করবেন, সে প্রতিষ্ঠান কী ধরণের ফরমেট অনুসরণ করে আপনার সিভি পাঠাতে বলেছে সেটি ভালোভাবে অনুসরণ করুন। 

৩। ই-মেইল পাঠানর সময় ইংরেজিতে ব্যকরণ গত ভুল এরিয়ে চলুন। কোন বানান নিয়ে সন্দেহ থাকলে নিশ্চিত হয়ে তার পরে সামনের দিকে চলুন। এমন ভুল চাকরিদাতা দেখলে আপনার সম্পর্কে একটি বাজে মনোভাব তৈরি হবে। 

৪। আপনার সিভি সঠিক ভাবে কম্পিউটারে সেভ করুন। অনেক সময় দেখা যায় আমরা শুধু “MY CV”, “MY CURRENT CV” লিখে সেভ করে রাখি যা মটেও উচিত নয়।এই ধরণের নাম ব্যবহার করলে শত শত সিভির মধ্যে আপনার CV কোনটা তা বের করা কঠিন হয়ে  পরবে চাকরিদাতাদের জন্য। এই ক্ষেত্রেও “Name_CV.pdf” এই ধরনের ফরমেট ব্যবহার করতে পারেন।

একটি সিভি লেখার জন্য পরিষ্কার এবং সংক্ষিপ্ত টেমপ্লেট, পরিচিতির বিবরণ, যোগ্যতা এবং কাজের ইতিহাসের মতো মূল বিভাগগুলি প্রদর্শন করে।

সিভি লেখার জন্য টেমপ্লেট এর ব্যবহার এর চিত্র। | ছবি: সংগৃহীত

৫। অনেক সময় আমরা সিভি ও ছবি আলাদা পাঠায়। এই ক্ষেত্রে চাকরিদাতার পক্ষে অনেক সিভির মধ্যে আপনার সিভির জন্য আলাদাভাবে আবার ছবি খুঁজে বের করবেন যা কষ্টসাধ্য। 

৬।সিভি কি pdf ফরমেটে পাঠাচ্ছেন তো? যদি আপনি সিভি মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে তাহলে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন ধরুন আপনি যে ফন্টে লিখেছেন তা চাকরিদাতার  কম্পিউটারে নেই সে ক্ষেত্রে আপনার সিভির পুরো ফরমেট এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। তাই ভালো হয় সিভি pdf ফরমেটে পাঠানো। 

৭। ভুল করেও বাংলা ভাষায় ই-মেইল এর সাবজেক্ট লিখবেন না। কারণ এই বিষয়টি গুগল বা জিমেইল ভালো ভাবে নেয় না। সেক্ষেত্রে আপনার করা ই-মেইলটা Spam বা Junk ই-মেইল হিসেবে চিহ্নিত হবার সম্ভাবনা থাকে। 

৮। সিভি পাঠানর সময় ই-মেইল বডি ফাঁকা না রাখি। আপনি যে প্রতিষ্ঠানে বা যে ব্যক্তির কাছে সিভি পাঠাচ্ছেন তার সম্পর্কে জেনে তার পজিশন উল্লেখ করে সিভি পাঠান। তাঁকে সুন্দর ভাবে আপনর সিভি পরার এবং কভার লেটার পরার অনুরোধ করুন। 

৯। সিভির সাথে কভার লেটার যুক্ত করুন। অনেক প্রতিষ্ঠান শুধু সিভি চায় না সাথে কভার লেটারও চায়সেক্ষেত্রে কভার লেটারে উল্লেখ করুন। উক্ত চাকরির জন্য আপনি কেন যোগ্য, আপনি যদি ফ্রেশার হন তাহলে উল্লেখ করুন চাকরিটির ব্যাপারে আপনার আগ্রহ কতটা। অবশ্যই কভার লেটার পাঠাবেন সিভির মত pdf ফরমেটে। 

১০। সিভি লিখার সময় উদ্ভট আঁকাবাঁকা ফন্টে না লিখে ফরমাল ফন্টে লিখা ভালো। সে জন্য আপনি  টাইমস নিউ রোমান ফন্টে ব্যবহার করতে পারেন। 

১১। সিভিতে লিখার সময় বেশ কিছু শব্দ আছে যা আপনাকে মিথ্যা প্রমাণ করে। যেমন ধরুন আপনি লিখেছেন “আমি যেকোনো ধরনের কাজ করতে প্রস্তুত”। এর মানে আপনি যে কোনও কাজ করতে পারবেন? আপনি যে নির্দিষ্ট পদের জন্য আবেদন করছেন, সেই সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা লিখুন। 

১২। সিভিতে ভুল কিছু এবং বারিয়ে কিছু লিখবেন না। আপনার যদি নির্দিষ্ট কাজের ক্ষেত্রে ২ বছর ৫ মাসের অভিজ্ঞতা থাকে তবে লিখবেন না, “আমার কাজের অভিজ্ঞতা দুই বছরের বেশি”। আপনার তো ৩ বছরের  অভিজ্ঞতা নেই। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ২ বছর লিখাই উত্তম। 

সর্বশেষ, সিভি প্রতিনিয়ত আপডেট করে লাভ নেই। যদি না আপনি চকরির জন্য আবেদন না করেন। তাই প্রতিনিয়ত আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকরির জন্য আবেদন করুন। এতে আপনর অভিজ্ঞতা বাড়বে পাশাপাশি আপনার চাকরি হবার সম্ভাবনাও বাড়বে।  

 তথ্যসূত্র 

বাজারে দুর্দান্ত ফিচার নিয়ে এসেছে আইফোন ১৬

Previous article

ঘরে বসে সহজেই কেক এবং অন্যান্য বেকড পণ্যের ব্যবসা শুরু করবেন যেভাবে

Next article

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পপুলার পোস্ট'স