Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আয়েশা আক্তার |
বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন শিল্প পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত। ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনইপি) অনুসারে, ফ্যাশন শিল্প প্রতি বছর ১০% কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের এই গতি যদি অব্যাহত থাকে, তবে ২০৩০ সাল নাগাদ তা ৫০%-এর বেশি বৃদ্ধি পাবে। আর তাই সাসটেইনেবল অ্যাপারেল কোয়ালিশন (এসএসি) গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এ সীমাবদ্ধ করতে ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫% গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ফ্যাশন শিল্পকে পরিবেশ-বান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে সবুজ পোশাক কারখানা। আজকে আমরা বাংলাদেশের সবুজ পোশাক শিল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
বাংলাদেশ এবং পরিবেশ-বান্ধব পোশাক শিল্প
বাংলাদেশ বিশ্ববাজারের ৭.৯% শেয়ার সহ তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক। আর তাই বাংলাদেশ পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী কার্বন নিঃসরণের অন্যতম সহায়ক। এই সমস্যা সমাধানের জন্য গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ অসংখ্য সার্টিফাইড গ্রিন ফ্যাক্টরি স্থাপন করে সবুজ ও টেকসই উৎপাদনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) অনুসারে, বর্তমানে বাংলাদেশে ২২৯টি সার্টিফাইড পরিবেশ-বান্ধব পোশাক কারখানা রয়েছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের সেরা ১০টি গ্রিন কারখানার মধ্যে ৯টিই বাংলাদেশে অবস্থিত। যা পোশাক শিল্প টেকসয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাপী নেতা হিসাবে খ্যাতি এনে দিয়েছে।
দেশের ২২৯টি সার্টিফাইড পরিবেশ-বান্ধব পোশাক কারখানার মধ্যে ৯১টি কারখানার মর্যাদাপূর্ণ এলইইডি প্ল্যাটিনাম সার্টিফিকেশন রয়েছে, যা ইউএস গ্রীন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) দ্বারা পুরস্কৃত হয়েছে। উপরন্তু, ১২৪টি কারখানা গোল্ড সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে, ১০টি কারখানা রৌপ্য অর্জন করেছে এবং ৪টি কারখানা প্রত্যয়িত প্রশংসাপত্রের সাথে স্বীকৃত হয়েছে। এছাড়াও, বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে ৫৬টিই বাংলাদেশে অবস্থিত। যা মোট কারখানার অর্ধেকেরও বেশি। ইউএসজিবিসি তথ্য অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২১৬ টি সবুজ কারখানা রয়েছে, এবং চীন এক নম্বর আরএমজি রপ্তানিকারক তার ১৭৩টি সবুজ কারখানা রয়েছে।
২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশী পোশাক এবং টেক্সটাইল নির্মাতারা ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) দ্বারা প্রত্যয়িত “পরিবেশ-বান্ধব” কারখানা স্থাপন করার কাজ শুরু করে। সবুজ কারখানা যা “পরিবেশ-বান্ধব কারখানা ” নামেও পরিচিত মূলত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকে দক্ষতার সাথে রোধ করে এবং পরিবেশ দূষণ এবং শক্তি খরচ কমায়৷
এলইইডি প্লাটিনাম সার্টিফিকেশন প্রাপ্ত দেশের প্রথম আরএমজি কারখানা ‘ভিনটেজ ডেনিম’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জিল্লুর রহমান মৃধা বলেন, “পরিবেশ-বান্ধব ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও ৪৬% শক্তি খরচ কমিয়েছে, কার্বন ফুটপ্রিন্ট ৪৫% কমিয়েছে এবং জল ব্যবহারের খরচ কমিয়েছে ৫৩%”।
খরচ এবং সুবিধা বিশ্লেষণ
সবুজ কারখানা শুধু পরিবেশ দূষণ রোধ কিংবা কার্বন নিঃসরণ কমানোর কাজ করে না, একইসাথে কারখানার ব্যয়ও কমায়। যদিও একটি সবুজ কারখানা স্থাপন করতে একটি ঐতিহ্যবাহী কারখানার তুলনায় ২৫-৩০% বেশি খরচ হয়। কিন্তু পরবর্তীতে অন্যান্য খরচ অনেক কম হয়। মূলত সবুজ কারখানা স্থাপনে স্বল্পমেয়াদে বেশি ব্যয় হলেও পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদে খরচ অনেক কম হয়। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে বিনিয়োগের রিটার্ন ফিরে পাওয়া যায়।
একটি সবুজ কারখানায় উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কম জল ব্যবহার করা হয় এবং ছাদের সৌর প্যানেল এবং ওজোন ওয়াশিং মেশিনের মাধ্যমে কম রাসায়নিক এবং বেশি নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে। জিরো কার্বন নিঃসরণের পাশাপাশি বাংলাদেশে বর্তমানে দূষণ বন্ধ করতে বিপজ্জনক রাসায়নিকের জিরো ডিসচার্জও শুরু হয়েছে।
পরিবেশ দূষণ বর্তমান বিশ্বের একটি অন্যতম সমস্যা। আর তাই পৃথিবী জুড়ে প্রতিটি শিল্প খাতকেই পরিবেশ-বান্ধবে রূপান্তর করার প্রচেষ্টা চলছে। পরিবেশ-বান্ধব পোশাক শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে।
Comments