Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা ইসফাকুল কবির |
ফ্রিল্যান্সিং কী?
ভাবুন তো, আপনি এমন একটি কাজ করছেন যে কাজটি করার সময় জায়গা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা পুরোপুরি আপনার। এইরকম স্বাধীনতা আছে শুধু মাত্র ফ্রিল্যান্সিং-য়ে। এখানে আপনি কোনও নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী নন, বরং আপনার স্কিল অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টের জন্য প্রজেক্ট ভিত্তিতে কাজ করতে পারবেন আপনি। এটি অনেকটা নিজের একটি ছোট ব্যবসার মতো, যেখানে আপনি কাজের ধরন, সময়, এবং প্রজেক্ট নিজের ইচ্ছেমতো বেছে নিতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিং এর জগতে গ্রাফিক ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ভিডিও এডিটিং থেকে শুরু করে ডিজিটাল মার্কেটিংসহ আরও অনেক কিছু করেই আপনি চাইলে ইনকাম করতে পারবেন।
কেন ফ্রিল্যান্সিং এত চাহিদাসম্পন্ন?
ফ্রিল্যান্সিংয়ের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে কারণ এটি স্বাধীনতা ও ফ্লেক্সিবিলিটির সুযোগ দেয়। প্রতিদিন নয়টা থেকে পাঁচটা আপনাকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বসে কাজ করতে হবে না। ফ্রিল্যান্সাররা তাদের কাজের সময় নিজেরা ঠিক করতে পারে এবং বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে কাজ করতে পারে। মূলত বহিঃ বিশ্বের উন্নত দেশে ছোট একটি কাজ করিয়ে নিতে একটি কোম্পানির অনেক অর্থ তাদের ব্যয় করতে হয়। কিন্তু সেই একই কাজ কোম্পানিটি আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে করলে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের তরুণদের থেকে খুব কম টাকায় করিয়ে নিতে পারে। যার ফলে ক্লায়েন্টও খুশি এবং বৈদেশিক অর্থ উপার্জন করার কারণে ফ্রিল্যান্সারও খুশি। যে কারণে দিন দিন ফ্রিল্যান্সিং এর চাহিদা বাড়ছে।
এইচএসসির পরেই ফ্রিল্যান্সিং কেন?
ঘরে বসে কাজ করার মজায় আলাদা। আর ছাত্র অবস্থায় আমাদের টাকার কতটা প্রয়োজন আমাদের তাও ভালো করে জানি আমরা। আর এই টাকার সমস্যা খুব সহজেই সমাধান করা সম্ভব ফ্রিল্যান্সিং করার মাধ্যমে। এইচএসসির পর পড়াশোনার পাশাপাশি টুকটাক সময় দিয়ে কোন একটা স্কিল আয়ত্ত করে নিলেই তোমার কাজ শেষ। যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং শিখতে তেমন টাকার প্রয়োজন হয় না এবং এটি কোন নির্দিষ্ট সময় দাবি করে না। তাই এইচএসসির পরেই ফ্রিল্যান্সিং শেখার উত্তম সময় বলে মনে করেন অনেকেই। আর এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে অনেক সময় দিতে হয়। কারো কারো ৩ থেকে ৪ বছর লেগে যায় ভালো অঙ্কের টাকা আয় করে। আর কেউ যদি এইচএসসির পরেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে দেয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠেই সেই ব্যক্তি নিজের টাকা দিয়ে জীবনযাপনের ব্যয় বহন করতে পারবে।
এইচএসসির পর ফ্রিল্যান্সিং কীভাবে শুরু করবেন?
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে পারেন:
প্রথমত একটি নির্দিষ্ট স্কিল নির্বাচন করুনঃ এই কাজটি আপনি প্রথমে নিজের পছন্দ এবং দক্ষতার উপর ভিত্তি করে একটি স্কিল বেছে নিতে পারেন।
দ্বিতীয়ত স্কিল ডেভেলপমেন্ট : ইউটিউব, অনলাইন কোর্স (উডেমি, কোরসেরা) এর মাধ্যমে শেখার চেষ্টা করুন। এছাড়া অনলাইনে অনেক ফ্রি টিউটোরিয়াল আছে যা থেকে আমি একটি নির্দিষ্ট স্কিল আয়ত্ত করতে পারবেন।
তৃতীয়ত নিজের পোর্টফোলিও তৈরি করুন: আপনার কাজের বিভিন্ন উদাহরণ সহ একটি পোর্টফোলিও তৈরি করুন। যা দেখার মাধ্যমে ক্লায়েন্ট আপনার উপর আস্থা রাখতে পারবে যে আপনি কাজটি করতে পারবেন। এবং আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে।
তারপর মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলুন: ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য জনপ্রিয় ওয়েবসাইট হলো ফাইভার, আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডটকম ইত্যাদি সাইটে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে আপনার পছন্দ মত কাজের জন্য আবেদন করুন। প্রথমে ছোট কাজ দিয়ে শুরু করুন। এতে আপনি কাজের অভিজ্ঞতা পাবেন এবং ক্লায়েন্টদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে পারবেন।
শিক্ষার্থী হিসেবে কি কি শিখতে হবে?
একজন শিক্ষার্থী হিসেবে শুরুতে সহজে কয়েকটি স্কিল শিখে রাখতে পারেন,
কনটেন্ট রাইটিং বা ব্লগিং: লেখা ভালো হলে এটি ভালো একটি স্কিল হতে পারে।
গ্রাফিক ডিজাইন: ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর ইত্যাদি শিখে ফ্রিল্যান্সিংয়ে শুরু করতে পারেন।
ভিডিও এডিটিং: দিন দিন ভিডিও কনটেন্টের চাহিদা বাড়ছে। আর তাই ভিডিও এডিটিং এর চাহিদাও বাড়ছে। তাই এই স্কিলটি শিখে নিতে পারেন।
ডিজিটাল মার্কেটিং: সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ই-মেইল মার্কেটিং ইত্যাদির মাধ্যমে অনেকেই বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিংয়ে করছে।
ফ্রিল্যান্সিং কি ভালো ক্যারিয়ার?
ফ্রিল্যান্সিং একটি ভালো ক্যারিয়ার হতে পারে কারণ এটি আপনাকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী কাজ করার স্বাধীনতা দেয়। তবে এই ক্ষেত্রে আপনি কতটা ভালো করবেন তা নির্ভর করে আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার উপর। শুরুতে কিছুটা কঠিন হলেও ধৈর্য ধরে কাজ করলে সফল হওয়া সম্ভব। আপনি চাইলে এটি পার্ট-টাইম বা ফুল-টাইম ক্যারিয়ার হিসেবেও নিতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিং আমাদের মতো দেশের মানুষের জন্য একটি নতুন সুযোগের দুনিয়ায় তৈরি করেছে। আর এখনই সময় এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার।
Comments