স্কিল এন্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট

সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তিও হোক শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যম

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আয়শা মারিয়া

আপনি কি কখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটিয়েছেন? আকর্ষণীয় ভিডিও কিংবা পোস্ট দেখতে দেখতে সময়ের পর সময় পার করে দিয়েছেন? আপনার মতো কিন্তু এমন অনেকেই আছেন যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব সহজেই আসক্ত হয়ে পড়ছেন।

এখন ভাবুন, যদি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নতুন কিছু শেখাও যদি এতটাই আকর্ষণীয় হয়, ঠিক যেমন সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারিরা সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন পোস্ট দেখার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। তবে বিষয়টি কেমন হবে?

আমরা যেমন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটাই, তেমনিভাবে শেখাকেও কিভাবে আনন্দদায়ক ও আকর্ষণীয় করে তুললে শিক্ষার্থীরা আগ্রহ নিয়ে শিখবে, তা  আজকের আলোচনায় জানবো।

সোশ্যাল মিডিয়া কেন এতো আসক্তিজনক ?

সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তিজনক হওয়ার পিছনে কয়েকটি মনস্তাত্ত্বিক ও নিউরোলজিক্যাল কারণ রয়েছে। যেমন- সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণকে ট্রিগার করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পুরস্কারের অনিশ্চয়তা (লাইক, কমেন্ট, নতুন ফলোয়ার) স্লট মেশিনের কৌশলের অনুরূপ। এই পরিবর্তনশীল শক্তিবৃদ্ধির কৌশল ব্যবহারকারীদের তাদের নোটিফিকেশন এবং ফিডগুলি ক্রমাগত চেক করতে বাধ্য করে।

এছাড়াও আপডেট এবং নোটিফিকেশনের অবিরাম প্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, ট্রেন্ড বা আলোচনা থেকে বাদ পড়ার ভয় সৃষ্টি করে, ব্যবহারকারীদের ক্রমাগত সংযুক্ত এবং জড়িত থাকতে বাধ্য করে।

উন্নত অ্যালগরিদম ব্যবহারকারীর পছন্দ অনুযায়ী কন্টেন্ট কমিউরেট করে, যা ফিডটিকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং ব্যক্তিগত আগ্রহের সাথে খাপ খাইয়ে তোলে। এই ব্যক্তিগতকরণ ব্যবহারকারীরা প্ল্যাটফর্মে ব্যয় করা সময় বাড়ায়। যত বেশি মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে, তত বেশি মূল্যবান এটি প্রতিটি ব্যবহারকারীর জন্য হয়ে ওঠে।

সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির কারণ ও এর প্রভাব বিশ্লেষণ।

সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি কেন এতো প্রবল এবং কীভাবে এটি আমাদের উপর প্রভাব ফেলে? | ছবি সংগৃহীত।

কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির সাথে সাথে শেখাকেও গ্রহণযোগ্য করা যায়

লুইস ভন আহ্ন নামে একজন গুয়াতেমালার উদ্যোক্তা, বিশ্বাস করেন- সোশ্যাল মিডিয়া মানুষকে যেভাবে আসক্তিপূর্ণ করে তেমন করে কোনো কিছু শেখাকেও যে আসক্তিপূর্ণ করা সম্ভব।

তিনি পরামর্শ দেন যে, সোশ্যাল মিডিয়া দ্বারা ব্যবহৃত কৌশল গ্রহণ করে, ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট রাখার উদ্দেশ্যে আমরা নতুন কিছু শেখাকে আরও উপভোগ্য এবং অ্যাক্সেসযোগ্য করে তুলতে পারি। নিচে কিছু পদ্ধতি বর্ণ্না করা হলো-

১। গেমিফিকেশন

গেমিফিকেশন শেখাকে আরও আকর্ষণীয় এবং অনুপ্রেরণাদায়ক করার জন্য, ব্যাজ এবং লিডারবোর্ডের মতো গেম মেকানিক্সকে অন্তর্ভুক্ত করে। ঠিক যেমন সোশ্যাল মিডিয়া লাইক এবং ফলোয়ার কাউন্ট দিয়ে আপনাকে আকৃষ্ট করে রাখে, তেমনি গেমিফিকেশন অর্জনের অনুভূতি প্রদান করতে পারে এবং ব্যবহারকারীদের শিখতে থাকার জন্য উৎসাহিত করে থাকে।

২। ফ্রিমিয়াম মডেল

সবার জন্য শিক্ষা অ্যাক্সেসযোগ্য করা, বিনামূল্যে একটি মৌলিক সংস্করণ অফার করে এবং অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্যের জন্য আপগ্রেড করার বিকল্প রাখা। এটি অনেক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম দ্বারা ব্যবহৃত ফ্রিমিয়াম মডেলের অনুরূপ।

৩। মোবাইল লার্নিং

শেখার বিষয়বস্তুটি মোবাইল-বান্ধব নিশ্চিত করতে হবে যেন যে কেউ যেকোনো জায়গা থেকেই শিখতে পারে এবং সোশ্যাল মিডিয়া ফিড চেক করার মতো সুবিধাজনক করে তোলে। শেখার অ্যাপস এর মাধ্যমে দ্রুত কন্টেন্ট অ্যাক্সেস করতে, ট্র্যাক করতে এবং নোটিফিকেশন পেতে অনুমতি দেয় এমন শেখার অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার শিখতে হবে।

সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির পাশাপাশি শিক্ষাকে গ্রহণযোগ্য করার উপায়।

সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির সাথে শিক্ষাকে কীভাবে কার্যকরভাবে একীভূত করা যায়? | ছবি সংগৃহীত।

৪। ভাবপ্রবণ জড়িতকরণ

গল্প, সাফল্যের গল্প, কেস স্টাডি এবং দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগের উদাহরণ শেখার প্রক্রিয়াকে আবেগময় করে তুলতে পারে। শিক্ষা সামগ্রী কর্মীদের দৈনন্দিন কাজ এবং কর্মজীবনের লক্ষ্যের সাথে সম্পর্কিত হলে তা আরও অর্থপূর্ণ এবং অনুপ্রেরণাদায়ক হয়ে ওঠে।

৫। অগ্রগতি নিরীক্ষণ এবং দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া 

ড্যাশবোর্ড, প্রগতি বার এবং মাইলস্টোন ব্যবহার করে কর্মীরা তাদের শিক্ষার অগ্রগতি সহজে পর্যবেক্ষণ করতে পারে।

আসক্তিমূলক শিক্ষার সুবিধাসমূহ

আসক্তিমূলক শিক্ষা সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারিদের শেখার প্রতি আকৃষ্ট করে এবং তাদেরকে আরও বেশি করে শিখতে উৎসাহিত করে। এটি শেখার অভিজ্ঞতাকে আরও আনন্দদায়ক এবং মজাদার করে তোলে, যার ফলে ব্যবহারকারিরা আরও বেশি করে শেখে এবং তাদের শেখা জ্ঞান দীর্ঘস্থায়ী হয়। এছাড়াও, আসক্তিমূলক শিক্ষা স্বাধীন শেখার অভ্যাস গড়ে তোলে এবং তাদেরকে নিজেদের শেখার জন্য উৎসাহী করে তোলে। এটি শেখার প্রতি তাদের আগ্রহ বৃদ্ধি করে এবং তাদেরকে নতুন দক্ষতা অর্জন করতে সাহায্য করে।

অতএব আমাদের নিকট এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, শেখার প্রক্রিয়াকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মতো আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে, সেখানেও একই উপাদান যোগ করতে হবে যা আপনাকে স্ক্রিনের সাথে আসক্ত করে রাখে: যেমন – নিয়মিত অংশগ্রহণ, পারস্পরিক ক্রিয়া এবং মজা।

“তথ্যসূত্র”

আত্মবিশ্বাসই যখন সফলতার চাবিকাঠি

Previous article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *