ইনোভেশনস এন্ড ট্রেন্ডস

বিকেন্দ্রীকরন: যে ধারনার ওপর চলে ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইন

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আনিকা তায়্যিবা

বিকেন্দ্রীকরণ ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তির একটি মৌলিক নীতি। সহজ ভাষায়, বিকেন্দ্রীকরণ বলতে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ যেমন একটি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা একটি বৃহৎ নেটওয়ার্কের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে স্থানান্তর করা বা ছড়িয়ে দেওয়াকে বোঝায়। বিকেন্দ্রিকরণের এই ধারণাটি বিটকয়েন এবং ইথেরিয়ামের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির আদান-প্রদানে স্বচ্ছ, নিরাপদ এবং স্থিতিশীল সিস্টেম তৈরি করে।

ব্লকচেইনে বিকেন্দ্রীকরণের ধারণা

আগেই বলা হয়েছে ব্লকচেইনের প্রেক্ষাপটে, বিকেন্দ্রীকরণ মানে হলো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণ সরিয়ে নিয়ে একটি বিতরণকৃত নেটওয়ার্কের অংশগ্রহণকারীদের হাতে দেওয়া। এই অংশগ্রহণকারীরা সম্মিলিতভাবে নেটওয়ার্কের কার্যকারিতা বজায় রাখে। গতানুগতিক কেন্দ্রীভূত সিস্টেমের বিপরীতে যেখানে একটি একক সত্তা সম্পদ পরিচালনা করে, বিকেন্দ্রীকৃত সিস্টেম অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে আনে।

ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিকেন্দ্রীকরণের গুরুত্ব

ডিজিটাল মুদ্রা অর্থাৎ ক্রিপ্টোকারেন্সির বিকেন্দ্রীকরণ বর্তমানধারার সিস্টেমের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান করে এবং অনন্য সুবিধা প্রদান করে:

১। নির্ভরশীলতাহীন পরিস্থিতি- একটি বিকেন্দ্রীকৃত নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণকারীদের একে অপরকে বা কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষকে বিশ্বাস বা তাদের উপর নির্ভর করার প্রয়োজন হয় না। প্রুফ-অফ-ওয়ার্ক (পি ও ডাব্লিউ) এবং প্রুফ-অফ-স্টেক (পি ও এস) এর মতো কনসেনসাস অ্যালগরিদম লেনদেন যাচাই করে এবং ব্লকচেইনের অখণ্ডতা নিশ্চিত করে।

২। উন্নত ডেটা সমন্বয় বর্তমানধারার সিস্টেম প্রায়শই সাইলোড ডাটাবেস এবং একাধিক স্তরের ডেটা রূপান্তরের কারণে ডেটার অসঙ্গতির শিকার হয়। বিকেন্দ্রীকৃত সিস্টেম একটি ভাগ করা, রিয়েল-টাইম ডেটার দৃশ্য সরবরাহ করে যা ত্রুটি এবং অকার্যকারিতা কমায়।

৩। দুর্বলতার পয়েন্ট হ্রাস কেন্দ্রীভূত সিস্টেম একক ব্যর্থতার পয়েন্টের প্রতি সংবেদনশীল, যেমন আর্থিক জটিলতা, বা দুর্নীতি। বিকেন্দ্রীকরণ দায়িত্ব নেটওয়ার্ক জুড়ে বিতরণ করে, নিশ্চিত করে যে একটি বা একাধিক নোড ব্যর্থ হলেও পুরো সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

৪। সম্পদের কার্যকর বন্টন: বিকেন্দ্রীকৃত নেটওয়ার্কগুলো সম্পদের আরও কার্যকরভাবে বরাদ্দ নিশ্চিত করে, যা কর্মক্ষমতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং সেবার ধারাবাহিকতাকে উন্নত করে। এই স্থিতিশীলতা ক্রিপ্টোর বিপর্যয়মূলক ব্যর্থতার সম্ভাবনা হ্রাস করে।

ব্লকচেইনে বিকেন্দ্রীকরণের ভূমিকা ক্রিপ্টোকারেন্সির নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। | ছবি সংগৃহীত।

ক্রিপ্টোতে বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োগ

ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো বিকেন্দ্রীকরণের বাস্তব উদাহরণ। বিটকয়েন এবং ইথেরিয়াম বিকেন্দ্রীকৃত ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের উপর নির্মিত, যেখানে নোডগুলো সম্মিলিতভাবে লেনদেন যাচাই এবং রেকর্ড করে। এই সিস্টেমগুলো স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ অ্যালগরিদমের উপর নির্ভর করে, যার নাম কনসেনসাস অ্যালগরিদম।

বিকেন্দ্রীকৃত সিস্টেমগুলি সাংগঠনিক কাঠামোতেও প্রসারিত। উদাহরণস্বরূপ, বিকেন্দ্রীকৃত স্বায়ত্তশাসিত সংগঠন কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই পরিচালিত হয় এবং ডিজিটাল চুক্তি ব্যবহার করে নিয়ম এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োগ করে। এই মডেল সকলের সম্মিলিত মতামত এবং স্বচ্ছতাকে উৎসাহিত করে।

ক্রিপ্টোতে বিকেন্দ্রীকরণের কিছু চ্যালেঞ্জ

বিকেন্দ্রীকরণ অনেক সুবিধা প্রদান করে, তবে এটি কিছু সমস্যা নিয়েও আসে:

১। শক্তি খরচ বিকেন্দ্রীকৃত নেটওয়ার্ক, বিশেষত যেগুলো প্রুফ-অফ-ওয়ার্ক (পি ও ডাব্লিউ) কনসেনসাস মেকানিজম ব্যবহার করে যা পরিচালনা করতে উল্লেখযোগ্য শক্তি প্রয়োজন। ২০২১ সালে, বিটকয়েনের শক্তি ব্যবহার ৯০ টেরাওয়াট-ঘণ্টার বেশি ছাড়িয়েছে, যা কিছু দেশের বার্ষিক শক্তি ব্যবহারের সমতুল্য।

২। দক্ষতা এবং প্রসারণযোগ্যতা বিকেন্দ্রীকৃত নেটওয়ার্ক প্রায়শই ধীর লেনদেনের এবং সীমিত প্রসারণযোগ্যতার হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, বিটকয়েন প্রতি সেকেন্ডে ৪-৭টি লেনদেন প্রক্রিয়া করে যা অন্যান্য কেন্দ্রীভূত পেমেন্ট সিস্টেমের তুলনায় অনেক কম।

৩। একীভূত দৃষ্টিভঙ্গির অভাব বিকেন্দ্রীকৃত সিস্টেমে অংশগ্রহণকারীদের একটি সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংযুক্ত করা কিছুটা কষ্টসাধ্য হতে পারে। ক্ষমতার সমান বণ্টন দায়িত্বের অস্পষ্টতা এবং ধীর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

ব্লকচেইনে বিকেন্দ্রীকরণের চ্যালেঞ্জ ক্রিপ্টোকারেন্সির নিরাপত্তা ও কার্যপ্রণালীকে প্রভাবিত করতে পারে। | ছবি সংগৃহীত।

ক্রিপ্টোতে বিকেন্দ্রীকরণ গতানুগতিক কেন্দ্রীভূত মডেল থেকে অনেকাংশেই আলাদা। এটি বিতরণকৃত, স্বচ্ছ এবং নির্ভরযোগ্যতাহীন সিস্টেম তৈরি করে। এর পাশাপাশি এই পদ্ধতিটি উন্নত নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং ন্যায্যতা প্রদান করে। ব্লকচেইন প্রযুক্তি আরও বিকশিত হওয়ার সাথে সাথে, বিকেন্দ্রীকরণ এবং দক্ষতার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা ডেভেলপার এবং স্টেকহোল্ডারদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হিসাবে থাকবে।

“তথ্যসূত্র”

বিজনেস আইডিয়াকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার ৮টি সহজ উপায়

Previous article

বাংলাদেশে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করার নিয়ম

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *