ব্র্যান্ডিং স্ট্রাটেজিস

বিকাশের মার্কেটিং কৌশল

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির

বিকাশ বাংলাদেশের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) খাতে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করা বিকাশ। ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড এর উদ্যোগে, বাজারে বিকাশের মতো আরও অনেক (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান থাকলেও বিকাশ তার ভিন্ন ধারার মার্কেটিং এর মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে একটি আস্থার জায়গা তৈরি করে নিয়েছে। বিকাশের সাফল্যের পেছনে তাদের সুপরিকল্পিত এবং কার্যকর মার্কেটিং কৌশল রয়েছে। যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই আর্টিকেলে।

১. ব্র্যান্ডিং এবং সচেতনতা বৃদ্ধি

বিকাশ তার ব্র্যান্ডিং কৌশলে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন এবং সেবার সুবিধাসমূহ তুলে ধরতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারণা এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের সেবা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করে, যা গ্রাহকদের মধ্যে বিকাশের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি করে। কোভিড-১৯ মহামারির সময়, বিকাশের মাধ্যমে দ্রুত আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকারের উদ্যোগগুলো সাধারণ মানুষের কাছে বিকাশের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ব্র্যাক বিকাশের মাধ্যমে ৭,২৫০ জন প্রবাসী কর্মীকে জরুরি সহায়তা হিসেবে ৩ কোটি টাকা প্রদান করেছে।

বিকাশের ব্র্যান্ডিং এবং সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যকর কৌশল। | ছবি সংগৃহীত।

২. সেবা বৈচিত্র্যকরণ

বিকাশ তার সেবার পরিসর ক্রমাগত বৃদ্ধি করে চলেছে। শুরুতে শুধু টাকা পাঠানোর সেবা প্রদান করলেও, বর্তমানে মোবাইল রিচার্জ, বিল পেমেন্ট, অনলাইন শপিং পেমেন্ট, সঞ্চয় এবং ঋণ সেবা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করেছে। সেবার এই বৈচিত্র্যকরণ গ্রাহকদের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে সহায়তা করে এবং বাজারে বিকাশের অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।

শুধু তাই নয়, বিকাশ মানুষের কাছে এখন আস্থার নাম। কারণ বিকাশ তাদের হাতের মুঠোয় পুরো ব্যাংকিং সেক্টর টা নিয়ে এসেছে। এখন, দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক থেকেই সরাসরি টাকা বিকাশে নিয়ে আসা যায়। চাইলে বিকাশ থেকে ব্যাংক-এ টাকা রাখাও যায়। সব থেকে বড় ব্যপার হলো, আপনি ব্যাংক-এ যাযা করতে পারবেন টা সবই সম্ভব বিকাশের মাধ্যমে যেমন, মাসিক কিস্তির মাধ্যমে টাকা জমানো। বিকাশ ২০২৩ সালে তাদের নতুন একটি সেবা চালু করেছে “বিকাশ মিনি লোন” নামে, যেখানে গ্রাহকরা সহজেই ৫০০-২০,০০০ টাকার ঋণ নিতে পারেন। 

৩. প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন

বিকাশ তার অ্যাপ্লিকেশন এবং সেবা ব্যবস্থায় নিয়মিত প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করে আসছে। সহজ এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেস, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং দ্রুত লেনদেনের সুবিধা প্রদান করে গ্রাহকদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করে আসছে বিকাশ। এছাড়াও, ডিজিটাল ব্র্যান্ডিং এর দিকে বিকাশ বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে। তারা প্রতিটি বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে শুধু এই মার্কেটিং এর মাধ্যমে। বেশ কিছু পরিচিত মুখ নিয়ে তারা টিভি বিজ্ঞাপন বানিয়েছে। যার ফলে মানুষ বিকাশ কে অনেক বেশি আপন আপন ভাবতে শুরু করেছে। এছাড়া বিকাশ ২০২২ সালে “ডাবল ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন” চালু করে, যা গ্রাহক দের মাঝে বিকাশের প্রতি আরও আস্থা বাড়িয়েছে।

বিকাশের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও নিরাপদ করেছে। | ছবি সংগৃহীত।

৪. অংশীদারিত্ব এবং সম্প্রসারণ

২০২৩ সালে বিকাশ এবং ফেসবুক একসাথে একটি ক্যাম্পেইন চালু করে, যেখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিকাশ পেমেন্ট গ্রহণ করে। যা সেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দের ব্যবসায়িক লেনদেন আরও সহজ করে দিয়েছে। বিকাশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যেমন ব্যাংক, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম এবং ইউটিলিটি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্ব স্থাপন করেছে। এতে করে গ্রাহকরা এক প্ল্যাটফর্মেই বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে পারেন, যা তাদের সময় এবং খরচ সাশ্রয় করে। 

অন্যদিকে বিকাশ ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেস সহ সোনালী ব্যাংক পিএলসি, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক সহ দেশের প্রায় ২০ টিরও বেশি ব্যাংক এর থেকে বিকাশে সরাসরি টাকা লেনদেন করা যায়। 

৫. গ্রাহককেন্দ্রিক প্রচারণা

বিকাশ তার মার্কেটিং কৌশলে গ্রাহকদের প্রয়োজন এবং অভ্যাসকে গুরুত্ব দেয়। বিভিন্ন সময়ে অফার, ক্যাশব্যাক এবং প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে এবং তাদের লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। যেমন বিকাশের মধ্যমে বিল পেমেন্টে করলে ২০% ক্যাশব্যাক-এর মতো প্রচারণা গ্রাহকদের আগ্রহ বাড়িয়েছে। বিকাশ দেশের গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে আরও আস্থার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এর কারণ শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি। এছাড়া সরকারের তরফ থেকে যে শিক্ষা বৃত্তি আসছে গ্রামের অসহায় মানুষের কাছে তাও মানুষের কাছে পৌঁছায় এই বিকাশের মাধ্যমেই। তাই ধীরে ধীরে বিকাশ  তাদের কাছে আপন হয়ে উঠেছে।

বিকাশের গ্রাহককেন্দ্রিক প্রচারণা তাদের সেবা গ্রহণে ব্যবহারকারীদের উৎসাহিত করছে। | ছবি সংগৃহীত।

৬. সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম

প্রতিটি কর্পোরেট কোম্পানির সামাজিক কিছু দায়বদ্ধতা থাকে। যেটাকে কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা  বা সিএসআর নামে সব কোম্পানির কাছে পরিচিত। দেশের অন্যন্য প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে সচেতন না। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বিকাশ, তারা সামাজিক দায়বদ্ধতার নীতিমালা অনুসরণ করে চলে। 

বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। চিকিৎসা, শিক্ষা খাতে অনন্য রেখে আসাছে বিকাশ। এরই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ, বিকাশ ২০২২ সালে ‘বেস্ট সিএসআর ইন এডুকেশন’ পুরস্কার অর্জন করে দ্য ডেইলি স্টার এবং সিএসআর উইন্ডো বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।  এছাড়াও, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে অংশীদারিত্বে অসহায় মানুষদের নিকট ভাতা বিতরণ কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান করেছে। এছাড়া বিকাশ আরও বিভিন্ন সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে, যা তাদের ব্র্যান্ড ইমেজকে আরও সুদৃঢ় করে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তাদের অবদান সাধারণ মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে। এইতো ২০২৪ সালের বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেছে বিকাশ। 

বিকাশের সুপরিকল্পিত মার্কেটিং কৌশল, সেবা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণ, গ্রাহককেন্দ্রিক প্রচারণা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম তাদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। এই কৌশলগুলো অনুসরণ করে বিকাশ বাংলাদেশের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস খাতে তার শীর্ষস্থান বজায় রেখেছে।

“তথ্যসূত্র”

বাংলাদেশে শিক্ষার নতুন দিগন্ত ‘এডটেক’

Previous article

কর্মজীবী মায়েদের জন্য জীবন ও কর্মের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার গুরুত্ব ও কৌশল

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *