Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আয়শা মারিয়া |
স্টাইলিশ ডিজাইন, আরামদায়ক যাত্রা, এবং কম খরচে পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে স্বদেশী প্রযুক্তিতে তৈরি ‘বাঘ’ ইকো ট্যাক্সি! বাঘ ইকো মোটরস বাংলাদেশে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এই তিনচাকার গাড়ি নিয়ে এসেছে এবং এই গাড়িগুলো দেশেই তৈরি হচ্ছে।
“বাঘ” নামের এই পরিবেশবান্ধব গাড়িটি হবে বিশ্বের প্রথম অ্যাপ-ভিত্তিক গাড়ি কোম্পানি। কারণ উবার ও পাঠাও এর মতো রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলোর নিজস্ব গাড়ি নেই। ব্যাটারি চালিত হলেও এই গাড়িগুলোতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর অ্যাসিডযুক্ত ব্যাটারি থাকবে না। সৌরশক্তি ও লিথিয়াম ব্যাটারির সমন্বয়ে তৈরি এই পরিবেশবান্ধব গাড়ির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাঘ’।
বর্তমানে, গাড়িটির দুটি মডেল রয়েছে। একটির ক্ষমতা ১৫০০ ওয়াট এবং অন্যটির ক্ষমতা ১৮০০ ওয়াট।
শুধু ব্যবসা করার উদ্দেশ্যেই বাঘ ইকো মোটরস এমন উদ্যোগ নেয়নি। তারা দেশ, পরিবেশ ও মানুষের জন্যও কাজ করছে। এটি এমন একটি কোম্পানি যা আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশের মধ্যেই বৈদ্যুতিক যানবাহন তৈরি করছে। কোম্পানিটি ইতোমধ্যে সোলার গাড়ি, মোটরসাইকেল, সোলার ভ্যান, সোলার ইকো ট্যাক্সি সহ বেশ কিছু ব্যাটারিচালিত যানবাহন তৈরি করেছে।
অ্যাপ-ভিত্তিক এই গাড়িতে ড্রাইভারসহ মোট সাতজন যাত্রী চড়তে পারবেন। যাত্রীদের জন্য থাকবে ওয়াই-ফাই, জিপিএস, টেলিভিশন এবং ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরার সুবিধা। যাত্রীরা এটিএম কার্ডসহ যেকোনো মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ ব্যবহার করে ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন।। এছাড়াও প্রতিটি গাড়িতে থাকবে সোলার চার্জিং সিস্টেম এবং ব্যাটারি চার্জিং সিস্টেম। ফলে গাড়িকে ব্যাটারি চার্জ করার জন্য রাস্তার মাঝে থামতে হবে না। একবার চার্জে এটি ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলবে। গাড়িতে ব্যবহৃত ব্যাটারি এবং চার্জারে একটি মাইক্রোচিপ থাকবে যাতে একটি অ্যাপ প্রিলোড করা থাকে। গাড়ির কাঠামোর উচ্চমানের স্টিল এটিকে অন্যদের তুলনায় আরও টেকসই করে তোলে।
নিরাপত্তা যেখানে অগ্রাধিকার
গাড়িটির নিরাপত্তা বিষয়ক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি হলো, যাত্রীর সিটের সাথে রাখা ‘প্যানিক বাটন’। এই বাটনে চাপ দিলে তৎক্ষণাৎ গাড়ির গতি ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটারে নেমে আসবে। এরপর গাড়িটি ২০ মিনিটের জন্য অচল হয়ে যাবে এবং একই সঙ্গে এই বাটন গাড়ির নিয়ন্ত্রণকক্ষে একটি সংকেত পাঠানোর মাধ্যমে প্যানিক বাটনটি কর্তৃপক্ষকেও সতর্ক করতে সক্ষম। এর ফলে কর্তৃপক্ষ ট্যাক্সির কার্যক্রম তৎক্ষণাৎ নিষ্ক্রিয় করতে পারে। তিন চাকার এই অটোরিক্সাতে রয়েছে একটি নিরাপত্তা ক্যামেরাও। যা কেন্দ্রীয় সার্ভারে সমস্ত ভিডিও রেকর্ড সংরক্ষণ করে থাকে। অন্যান্য গাড়ির তুলনায় বড় চাকা দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও কমিয়ে দেবে। এছাড়াও এই গাড়িতে রয়েছে এমবেড করা রিয়াল-টাইম জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম।
থ্রি-হুইলারের জন্য একটি মনিটরিং সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে, যা রিক্সাটির রিয়েল-টাইম অবস্থান দেখাবে এবং একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এর রক্ষণাবেক্ষণের বিবরণ দেখতে পাবেন তারা। গাড়িটিতে উচ্চ-গ্রেডের ইস্পাত ব্যবহার করা হয়েছে যা সাধারণত বড় যানবাহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ইস্পাত গাড়ির সহনশীলতা এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়েছে এটি।
পাশাপাশি অ্যান্টি-লক ব্রেক সিস্টেম (এবিএস) সহ একটি হাইড্রোলিক ব্রেকিং সিস্টেমও থাকবে। গাড়িতে ব্যবহৃত একটি ৪৮০ ওয়াটের সোলার প্যানেল দিনের বেলায় ৪০ শতাংশ চার্জ সঞ্চয় করতে পারে। যার ফলে অতিরিক্ত ৪০ কিলোমিটার যেতে পারবে গাড়িটি। গাড়িটিতে ড্যাশবোর্ড মনিটরিং সিস্টেম, চুরি-বিরোধী প্রযুক্তি এবং গতি পর্যবেক্ষণসহ আরও অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
তুলনামূলক কম খরচে যাত্রা
এই গাড়ির বিদ্যুৎ খরচ কম হবে। এর আগে যেখানে ইউনিট প্রতি খরচ ছিল ১৭ টাকা, ‘বাঘ’ প্রতি ইউনিট খরচ হবে ৭ টাকা। প্রতি কিলোমিটার খরচ হবে ৪০-৪৫ পয়সা। এছাড়া গাড়িটির ৬০ ভোল্টের ব্যাটারী সম্পূর্ণ চার্জ হতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লাগবে। একবার চার্জ দিলে ১২০ কিলোমিটার চলবে। আর সোলার পাওয়ারের মাধ্যমে আরও ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার চলবে। ব্যাটারির গ্যারান্টি পাঁচ বছর এবং সার্ভিস ওয়ারেন্টি থাকবে দুই বছর।
আরামদায়ক যান
বিদ্যুৎ চালিত এই গাড়িটি প্রায় শব্দহীন। অন্যদিকে, এর অভ্যন্তরীণ বায়ুচলাচল ব্যবস্থা এবং ফ্যান এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে ভেতরের তাপমাত্রা কখনোই ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না হয়।
এছাড়া যাত্রীরা সবসময়ের জন্য পাবেন আনলিমিটেড ইন্টারনেট পরিষেবা। সাথে ফোন বা ল্যাপটপের ব্যাটারী শেষ হয়ে গেলে পাওয়া যাবে চার্জ দেওয়ার সুব্যবস্থা। গাড়িতে রয়েছে একটি ট্যাবলেটও। যা বিনোদন বা অফিসিয়াল কাজের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
বাঘের মতে, বিদ্যুৎ অপচয় ও অপব্যবহার রোধে এই বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোতে সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে গাড়ি চার্জ দেওয়ার জন্য অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে না। চালক যদি অবৈধভাবে চার্জ দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে তথ্যটি তার আইওটি (ইন্টারনেট অফ থিংস) ডিভাইসের মাধ্যমে বাঘ ইকো মোটরসের ডেটা সার্ভারে পাঠানো হবে। এই শব্দহীন গাড়ি প্রথম পক্ষের ইন্স্যুরেন্সের আওতায় থাকবে। সব মিলিয়ে বলা যায় এর কোনো রক্ষণাবেক্ষণ খরচ নেই।
Comments