Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আয়শা মারিয়া |
চীন তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে, যা ভারত সীমান্তের কাছে অবস্থিত। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই বাঁধ বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। আনুমানিক ১৩৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পটি ভারত ও বাংলাদেশে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং সম্ভাব্য বন্যার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
চীনের এই বাঁধ নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য হলো জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা। এই বাঁধটি বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধগুলোর মধ্যে একটি হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা থেকে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এই বিদ্যুৎ চীনের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করতে পারে।
তবে এর ফলে ব্রহ্মপুত্রের জলের ন্যায্য অধিকার থেকে বাংলাদেশের বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। এছাড়াও সবচেয়ে ছোট ভাটির দেশ হওয়ায়, বাংলাদেশ তার বৃহত্তর প্রতিবেশীদের প্রতিযোগিতামূলক স্বার্থের মধ্যে আটকা পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বাঁধ নির্মাণে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে?
ব্রহ্মপুত্র বাঁধ নির্মাণে তার টেকটোনিক প্লেট সীমানায় অবস্থানের কারণে বিশাল প্রকৌশলগত সমস্যার সম্মুখীন, যা ভূমিকম্প প্রবণ। তিব্বতীয় মালভূমি টেকটোনিক প্লেটের উপরে অবস্থানের কারণে ঘন ঘন ভূমিকম্প ঘটে। বাঁধের নির্মাণ স্থানটি মূল ভূখণ্ডের চীনে অবস্থিত। যেখানে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় যা যথেষ্ট জল প্রবাহ নিশ্চিত করে।
ব্রহ্মপুত্রে চীনের বাঁধ নির্মাণে বাংলাদেশের উপর প্রভাব
ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি দেশের মোট জলসম্পদের একটি বড় অংশ। বাংলাদেশের জনসংখ্যার কমপক্ষে ৬০ শতাংশ এই নদীর অববাহিকার উপর নির্ভরশীল। উজানে বাঁধ নির্মাণের কারণে নদীর প্রবাহে কোনো পরিবর্তন হলে তা দেশের জল নিরাপত্তাকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলবে। বাঁধের কারণে উজানের দেশগুলো পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যা ভাটির দেশগুলোর জন্য পানির প্রাপ্যতা কমাতে পারে এবং কৃষি, মৎস্য ও জীবিকাকে বিপন্ন করতে পারে।
বাংলাদেশ চীনা বাঁধ প্রকল্পে অংশীদারিত্বের জন্য আলোচনা করতে পারে, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের যৌথ সুবিধা কাজে লাগিয়ে। ৬০ গিগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নির্মিত এই বাঁধ চীন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যুৎ ভাগাভাগির চুক্তি হলে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে।
ব্রহ্মপুত্র বাঁধ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের উপর কেমন প্রভাব ফেলবে?
পিটিআই নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, কেবল ব্রহ্মপুত্রের জল প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নয়, বরং চীনের এই বাঁধের বিশাল আকার এবং মাত্রার কারণে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য কোনো শত্রুতা তৈরি হলে বিপুল পরিমাণে জল ছেড়ে দিয়ে সীমান্ত এলাকায় বন্যার ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে। আর এই বিষয়টি নিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
ব্রহ্মপুত্র নদের উপর চীনের বাঁধ নির্মাণ নিয়ে তিন দেশেরই সহযোগিতা
একসাথে কাজ করার মাধ্যমে, এই তিনটি দেশ (ভারত, বাংলাদেশ ও চীন) পরিবেশগত উদ্বেগ মোকাবেলা করতে পারে, জলের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে পারে এবং ব্রহ্মপুত্রের সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি কাঠামো তৈরি করতে পারে। এই ধরনের একটি চুক্তি প্রমাণ করবে যে অভিন্ন নদীগুলো বিরোধের উৎস নয়, বরং আঞ্চলিক সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম হতে পারে।
এই লক্ষ্যে, বাংলাদেশকে কূটনৈতিক পর্যায়ে চীন ও ভারতকে আলোচনার টেবিলে আনার প্রচেষ্টা শুরু করা যায়। আলোচনায় মধ্যস্থতা ও সমর্থন করার জন্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথেও যুক্ত হতে হবে। একটি স্বচ্ছ অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার মূল চাবিকাঠি হবে, ব্রহ্মপুত্র তিনটি দেশের জন্যই জীবন ও জীবিকার উৎস হিসেবে টিকে থাকে।
Comments