ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন

তথ্য প্রযুক্তি যুগের বিস্ময় ‘ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তি’

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আনিকা তায়্যিবা

ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তিঃ

তথ্য প্রযুক্তির প্রসারের যুগেও ডিজিটাল টুইন শব্দটার সাথে আমরা খুব একটা পরিচিত নই। সহজ ভাষায়, ডিজিটাল টুইন হলো কোন বাস্তব জিনিসের যমজ তৈরি করা। এটি হতে পারে বাস্তবে থাকা কোনো বস্তু, সিস্টেম বা প্রক্রিয়ার ভার্চুয়াল মডেল তৈরি করা। এই ভার্চুয়াল মডেলটি সেন্সরের মাধ্যমে বাস্তব সময়ের বা রিয়েল টাইম ডেটা সংগ্রহ ও ব্যবহার করে এর আচরণকে অনুকরণ করে এবং কর্মক্ষমতা নিরীক্ষণ করে। এটি বাস্তব জগতের সম্পদের জীবনচক্র, কর্মক্ষমতা এবং কার্যকারিতা উন্নত করার জন্য কার্যকর একটি প্রযুক্তি। ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তি দ্বারা ছোট যন্ত্রাংশ যেমন দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র থেকে শুরু করে বৃহৎ সিস্টেম যেমন কোনো প্রযুক্তি, এমনকি সম্পূর্ণ শহর অনেক কিছুই ভার্চুয়ালভাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে।

ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করেঃ

ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তি ভার্চুয়াল পরিবেশে বাস্তব জীবনের বিভিন্ন আধুনিক সিস্টেম এবং প্রক্রিয়া পুনরুত্পাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন সুসংগঠিত ধাপের মাধ্যমে এই নতুন ধারার প্রযুক্তি কাজ করে থাকে। যেমন:

১। উপাত্ত সংগ্রহ:
বাস্তব বস্তুর উপর স্থাপিত সেন্সরগুলোর মাধ্যমে এর তাপমাত্রা, চাপ, কম্পন এবং কার্যক্ষমতা সম্পর্কিত ডেটা বা উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।

২। উপাত্ত প্রেরণ:
সংগৃহীত উপাত্তগুলো ইন্টারনেট অফ থিংস (আই ও টি) নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রেরণ করা হয়।

৩। মডেল সিমুলেশন:
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এ আই) এবং মেশিন লার্নিং (এম এল) অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ভার্চুয়াল পরিবেশে সেই নির্ধারিত বস্তুর আচরণ অনুকরণ করা হয়।

৪। প্রতিক্রিয়া ও অন্তর্দৃষ্টি:
ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তি সম্পদের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি বা ধারণা প্রদান করে। এবং এর সাথে পূর্বাভাসমূলক বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য পরিস্থিতি যাচাই করে।

ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তির কার্যপ্রক্রিয়া। | ছবি সংগৃহীত।

ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তির কিছু সুবিধা

১। কর্মক্ষমতা উন্নতি:
ডিজিটাল টুইনের মাধ্যমে বাস্তব সময়ের ডেটা বিশ্লেষণ করে অপারেশনাল কর্মক্ষমতা উন্নত করা যায় এবং সিস্টেমের দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায়, যেহেতু এর মাধ্যমে ভার্চুয়াল পরিবেশে সেই সিস্টেমের একটি প্রতিলিপি তৈরি করা হচ্ছে।

২। পূর্বাভাসমূলক রক্ষণাবেক্ষণ:
সেন্সর ডেটার মাধ্যমে সমস্যা দ্রুত চিহ্নিত করা যায়, যা বড় ধরনের ত্রুটি প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

৩। দূরবর্তী পর্যবেক্ষণ:
ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তির সাহায্যে বস্তুর সুবিধাগুলো আগে থেকেই থেকে পর্যবেক্ষণ করা যায়, যা বিপজ্জনক কাজের ঝুঁকি কমায়।

৪। উৎপাদন সময় হ্রাস:
নতুন কোন পণ্যের ডিজাইন এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ার আগেই ভার্চুয়ালি তা মডেল তৈরি করে পরীক্ষা করা যায়, যাতে সময় ও খরচ সাশ্রয় হয়।

৫। টেকসই উন্নয়ন:
শক্তি ব্যবহার পর্যবেক্ষণ এবং প্রসেস অপ্টিমাইজেশনের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম নিশ্চিত করা যায়।

৬। সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজতর করা: 

বাস্তব সময়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব।

৭। খরচ সাশ্রয়:

এর মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ ও অপারেশন খরচ কমিয়ে আনা যায়।

৮। ব্যাপক প্রয়োগযোগ্যতা: 

বিভিন্ন শিল্পে সহজেই আজকাল ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তি ব্যবহার উপযোগী।

৯। ঝুঁকি হ্রাস:

নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধিতে এই প্রযুক্তির ভূমিকা অনেক।

ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা। | ছবি সংগৃহীত।

ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তির অসুবিধা

১। উচ্চ প্রাথমিক খরচ:

সেন্সর, আই ও টি বা ইন্টারনেট অব থিংস, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অবকাঠামো স্থাপনে বড় ধরনের ব্যয় প্রয়োজন।

২। জটিল সংযোজন:

বিদ্যমান সিস্টেমের সঙ্গে প্রযুক্তিটি সংযুক্ত করা সময়সাপেক্ষ।

৩। ডেটা নিরাপত্তার ঝুঁকি:

বৃহৎ ডেটার ব্যবস্থাপনায় সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকে।

ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তির ব্যবহার ক্ষেত্র

  • নির্মাণ:
    • আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রকল্পের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ডিজিটাল টুইন ব্যবহৃত হয়।
    • প্রকল্পের অগ্রগতি এবং স্থাপত্য নকশার উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • উৎপাদন শিল্প:
    • উৎপাদন চক্রের প্রতিটি ধাপে ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
    • যন্ত্রাংশ পর্যবেক্ষণ এবং কর্মক্ষমতা বিশ্লেষণে এটি অপরিহার্য।
  • জ্বালানি:
    • বায়ুকল, সৌর প্রকল্প এবং পরিশোধনাগারের মতো সম্পদের কর্মক্ষমতা অপ্টিমাইজেশনে সহায়ক।
  • অটোমোবাইল:
    • গাড়ির ডিজিটাল মডেল তৈরি এবং পূর্বাভাসমূলক রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবহৃত হয়।
  • স্বাস্থ্যসেবা:
    • হাসপাতাল, ল্যাব এবং মানব অঙ্গের ভার্চুয়াল মডেল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
    • চিকিৎসার কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য উপযোগী।
  • স্মার্ট শহর:
    • শহরের পরিকল্পনা, শক্তি ব্যবস্থাপনা এবং অবকাঠামো উন্নয়নে ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তির বিভিন্ন ব্যবহার ক্ষেত্র। | ছবি সংগৃহীত।

শেষ কথা

ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তি বাস্তব এবং ভার্চুয়াল জগতের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এ আই), মেশিন লার্নিং (এম এল) এবং আই ও টি বা ইন্টারনেট অব থিংস-এর সমন্বয়ে এটি শিল্পের কর্মক্ষমতা বাড়ানো, ঝুঁকি হ্রাস, এবং উদ্ভাবন ত্বরান্বিত করার সুযোগ করে দেয়। যদিও এর বাস্তবায়নে উচ্চ ব্যয় এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে, ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তি ভবিষ্যতের টেকসই এবং দক্ষ কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এর ক্রমাগত উন্নয়নের ফলে প্রযুক্তিটির প্রয়োগ ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হবে এবং এটি আমাদের বাস্তব জগতের ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

“তথ্যসূত্র”

২০২৫ শেষ হওয়ার আগেই শুরু করুন ৫টি সেরা অনলাইন ব্যবসা

Previous article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *