Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আয়েশা আক্তার |
প্রতিদিন আমরা চব্বিশ ঘণ্টা করে সময় পাই। মিনিটের কাঁটা হিসেব করলে ১৪৪০ মিনিট! এতো সময় পাওয়ার পরেও, অনেকসময় কোনো কাজ করতে গেলে আমরা খেই হারিয়ে ফেলি। পরীক্ষা, প্রেজেন্টেশন কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজের সময় মনে হয় নিজেকে অতল সমুদ্রের গভীরে দেখতে পাই। আমরা বুঝতে পারি না কিভাবে কাজ শুরু করবো। এইসকল সমস্যা আমরা খুব সহজেই সমাধান করতে পারি ‘ইট দ্যা ফ্রগ বা ব্যাঙ খাওয়া’ মেথড অনুসরণ করে। ‘ব্যাঙ খাওয়া’ বলতে কিন্তু মোটেও উভচর প্রাণী ব্যাঙ খাওয়ার কথা বলা হয়নি। এটি মূলত একটি সময় ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। চলুন ব্যতিক্রমী এই পদ্ধতি নিয়ে আজকে বিস্তারিত জেনে নেই।
‘ইট দ্যা ফ্রগ বা ব্যাঙ খাওয়া’ বলতে কি বোঝায়?
‘ইট দ্যা ফ্রগ বা ব্যাঙ খাওয়া’ মূলত একটি সময় ব্যবস্থাপনা কৌশল। এই কৌশল অনুসরণ করে মানুষ নিজেদের কঠিন কাজগুলো শনাক্ত করে তা আগে শেষ করে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ‘ব্যাঙ খাওয়া’ হলো আপনার দিনের সবচেয়ে কঠিন কাজ শনাক্ত করার এবং অন্য যেকোন কাজ করার আগে এটি সম্পূর্ণ করার প্রক্রিয়া। এই কৌশল অনুযায়ী সকালে কঠিন কাজ (ব্যাঙ খাওয়া ) সম্পন্ন করতে হবে। যদি দুটি ব্যাঙ খেতেই হয় তবে আগে বড়টি খাও। কোন কাজটি বেশি চ্যালেঞ্জিং তা শনাক্ত করুন এবং প্রথম কাজটি করুন।
ইতিহাস
বিখ্যাত আমেরিকান লেখক এবং হাস্যরসাত্মক মার্ক টোয়েন বলেছেন,
“যদি ব্যাঙ খাওয়া আপনার কাজ হয়, তবে সকালে প্রথমে এটি করা ভালো। এবং যদি দুটি ব্যাঙ খাওয়া আপনার কাজ হয় তবে প্রথমে সবচেয়ে বড়টি খাওয়া ভালো।”
টোয়েনের এই উদ্ধৃতিটির পর এই কৌশলটি বেশ সাড়া ফেলে। কিন্তু ‘ইট দ্য ফ্রগ’ ধারণা নিয়ে সর্বপ্রথম ১৭৯০ সালে ফরাসি লেখক নিকোলাস চ্যামফোর্ট তার নিজের মাতৃভাষায় লিখেছিলেন। এই বাক্যটি চ্যামফোর্ট লিখেছিলেন মোনসিয়র ডি ল্যাসে নামের একজন ব্যক্তির জন্য। কিন্তু রহস্যময় এম ডি লাসারি এবং চ্যামফোর্ট উভয়েই বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এই শব্দগুচ্ছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। লেখক ব্রায়ান ট্রেসি ২০০১ সালে “ইট দ্যাট ফ্রগ!: ২১ গ্রেট ওয়েস টু স্টপ প্রোক্রাস্টিনেটিং অ্যান্ড গেট মোর ডান ইন লেস টাইম” নামের একটি বই লিখেন। বইতে তিনি “ব্যাঙ খাওয়া” ধারণাটি বর্ণনা করেছেন এবং কীভাবে আরও বেশি সফলভাবে ধারণাটি প্রয়োগ করা যায় তা নিয়ে কথা বলেছেন।
কীভাবে কাজ করে?
এই পদ্ধতি আসলে বেশ সহজ। এই পদ্ধতি অনুসারে প্রথমে কোন কাজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কোন কাজের অগ্রাধিকার বেশি তা চিহ্নিত করতে হবে। এই কাজগুলোকে “ব্যাঙ” বলা হয়। একবার যদি আপনি এগুলোকে আপনার প্লেট থেকে পরিষ্কার করে ফেলেন তাহলে বাকি দিনটি খারাপ যাবে না। অর্থাৎ সবচেয়ে জরুরি কাজটি চিহ্নিত করে তা তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে।
ব্যাঙ খাওয়ার ৩টি বিশেষ টিপস
আপনি যদি মার্ক টোয়েনের মতো সকালে প্রথমে ব্যাঙ খেতে চান তবে এই তিনটি টিপস অনুসরণ করার চেষ্টা করুন।
প্রথমত, নিয়মিত ব্যাঙ খাওয়ার অভ্যাস করা। যদিও আপনার ব্যাঙগুলো দিনের সবচেয়ে বড় কাজ এবং আপনার লক্ষ্যের দিকে অগ্রগতি করার জন্য আপনাকে নিয়মিত সেই বড় কাজগুলো সম্পাদন করতে হবে। আপনি যত বেশি ব্যাঙ খাবেন, তত বেশি অগ্রগতি দেখতে পাবেন। আপনার খাওয়া প্রতিটি ব্যাঙ অনেক বড় লক্ষ্যের একটি ছোট অংশ। এভাবে আপনি যখন ১০০টি ব্যাঙ খাবেন, তখন পিছনে ফিরে তাকালে দেখতে পারবেন আপনি কতটা অগ্রগতি করেছেন।
দ্বিতীয়ত, ব্যাঙ খাওয়া নিয়ে আগে থেকেই পরিকল্পনা করবেন না। ব্যাঙের পরিকল্পনা করা উচিত সর্বাধিক একদিন আগে। সর্বোত্তম অনুশীলন হলো আগের দিন পরিকল্পনা করা। কারণ এতে আপনার মনোযোগ বিঘ্ন হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।
তৃতীয়ত, সর্বদা সকালে ব্যাঙ খাওয়া। ব্যাঙ খাওয়ার পুরো বিষয় হল এটিকে পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া যাতে অন্যান্য কাজ করার সময় আপনাকে এটি নিয়ে চিন্তা করতে না হয়। ব্যাঙ মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং এবং এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করা কঠিন। মূল বিষয় হলো কঠিন কাজটি অবিলম্বে সম্পন্ন করে বিলম্বিত করার প্রলোভনকে পরাস্ত করা। একইসাথে, আপনি যখন অন্যান্য কাজ করবেন তখন আপনার ভয় বা দুশ্চিন্তা থাকে না।
সকালের সময় সর্বোত্তম কেনো?
এই পদ্ধতিতে সকালের সময়কে সর্বোত্তম বলা হয়েছে। আচরণ বিজ্ঞানী ড্যান এরিয়েলের গবেষণা থেকে জানা যায়, ‘আমরা জেগে ওঠার পরপরই বেশ উজ্জীবিত হয়ে থাকি। ঘুম থেকে ওঠার প্রায় দুই ঘন্টা পর আমরা নিজেদের শীর্ষ শক্তি, ফোকাস এবং অনুপ্রেরণার সময়ে থাকি। যদি আমরা এই মূল্যবান ঘন্টাগুলি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে আমাদের বেশিরভাগই আমরা যা অর্জন করতে চাই তারচেয়ে অনেক বেশি সফল হব।”
‘ইট দ্যা ফ্রগ বা ব্যাঙ খাওয়া’ কৌশলটি শুধু দিনের জন্য একটি কাজ সম্পূর্ণ করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজটি সম্পন্ন করার পরে দিনের বাকি সময়ে খুব সহজেই ছোট ছোট কাজগুলি সম্পূর্ণ করা যায়। এই পদ্ধতিটি মনোযোগও বৃদ্ধি করে। অনেক সময় একসাথে অনেক কাজ করতে গিয়ে কিংবা তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে আমরা কাজ এলোমেলো করে ফেলি, কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। এই কৌশল অবলম্বন করে খুব সহজেই আমরা সফল হতে পারি।
Comments