কনসিউমার ইনসাইটসআর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এন্ড মেশিন লার্নিং

এআই বদলে দিচ্ছে গ্রাহকের কেনাকাটার অভিজ্ঞতা।

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির

গ্রাহক সেবার মান উন্নয়নে এআই বা আরটিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স প্রযুক্তি আজ এক বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। ধরুন আপনি ভ্রমণ ভিডিও দেখতে পছন্দ করেন, খেয়াল করে দেখবেন আপনার ফেসবুকের নিউজ ফিডে ভ্রমণ সম্পর্কিত ভিডিও বেশি আসে। একই পদ্ধতি ব্যবহার করে আমাজন, নেটফ্লিক্স, এবং ফেসবুকের মতো বড় বড় কোম্পানি। এআই ব্যবহার করে তাদের গ্রাহকদের জন্য এক ভিন্ন অভিজ্ঞতার ব্যবস্থা করছেন। যেখানে গ্রাহকদের পছন্দ এবং তাদের রুচির  সাথে যায় এমন কিছুই তাদের সামনে বার বার তুলে ধরা হয়। তবে প্রযুক্তির এই অগ্রগতি কেবল ব্যবসার জন্যই নয়, বরং গ্রাহকদের জীবন সহজতর করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। চলুন আজ এই সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানি।

এআই কীভাবে গ্রাহক অভিজ্ঞতা উন্নত করছে

১। ব্যক্তিগতকৃত সেবা প্রদান

ফেসবুক এবং আমাজন এআই ব্যবহার করে তাদের গ্রাহকদের পছন্দের ভিত্তিতে কনটেন্ট এবং পণ্য সাজেস্ট করে। উদাহরণস্বরূপ, ফেসবুকের নিউজ ফিড এআই-এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আপডেট হয়, যা ব্যবহারকারীদের আগ্রহের পছন্দের বিষয়গুলো বার বার সামনে নিয়ে আসে। আমাজন তার গ্রাহকদের কেনাকাটার অভ্যাস বিশ্লেষণ করে নতুন পণ্য সাজেস্ট করে, যা তাদের কেনাকাটার অভিজ্ঞতাকে আরও সহজ করে তোলে। তাই গ্রাহকদের যখন যা প্রয়োজন তাই তারা তাদের সামনে আসে। 

২. দ্রুত এবং কার্যকরী সেবা

চীনের আলিবাবা এআই-এর মাধ্যমে গ্রাহকদের ক্রয় প্রক্রিয়া দ্রুততর করেছে। যেমন ধরুন আপনি আলিবাবার ওয়েবসাইটে এআই চ্যাটবটের সাথে কথার মাধ্যমে আপনার প্রশ্নের উত্তর দ্রুত যময়ে পাচ্ছেন। একইভাবে, ভারতের জিও মার্ট এআই ব্যবহার করে তাদের গ্রাহকদের জন্য দ্রুত ডেলিভারির ব্যবস্থা করেছে।

এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত এবং কার্যকরী সেবা প্রদান।

এআই প্রযুক্তি দ্রুত এবং কার্যকরী সেবা নিশ্চিত করছে। | ছবি সংগৃহীত।

৩. উন্নত বিশ্লেষণ

এআই ব্যবহার করে মার্কেট ট্রেন্ড বিশ্লেষণ করা এখন অনেক সহজ। কোম্পানিগুলো তাদের গ্রাহকদের চাহিদা বুঝতে এবং সেই অনুযায়ী পণ্য ও সেবা প্রদান করতে সক্ষম হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, নেটফ্লিক্স তার গ্রাহকদের দেখা কনটেন্ট বিশ্লেষণ করে নতুন সিনেমা বা সিরিজ সাজেস্ট করে আসছে। এতে করে গ্রাহকদের সময় নিয়ে কষ্ট করে কিছু খুঁজতে হচ্ছে না বা হতাশ হয়ে নেটফ্লিক্স কিছু দেখার মত না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে না।  

৪. গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিতকরণ

এআই গ্রাহকদের অভিজ্ঞতাকে আরও স্মুথ এবং আনন্দময় করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, এআই পরিচালিত কাস্টমার সাপোর্ট সিস্টেম গ্রাহকদের সমস্যার দ্রুত সমাধান দেয়, যা তাদের সন্তুষ্টি বাড়ায়। ধরুন, আপনি স্পটিফাই ব্যবহার করেন আপনার পছন্দের গান শোনার জন্য। স্পটিফাই এআই ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহকদের মনের খবর  ফিলিংস বুঝে আপনাকে গান শোনার পরামর্শ দিবে।

এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিতকরণ।

এআই প্রযুক্তি গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে সহায়ক। | ছবি সংগৃহীত।

ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে এআই-এর প্রভাব

১. রাজস্ব বৃদ্ধিতে অবদান

আমাজন এবং আলিবাবার মতো কোম্পানিগুলো এআই ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের বিক্রয় অনেকগুণ বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। আমাজন তার গ্রাহকদের এআই সেবা দেবার মাধ্যমে তাদের বিক্রি এবং লাভ দুটোই বাড়িয়েছে। ২০২৩ সালে আমাজনের মোট আয় ছিল ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

২. প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা

এআই কোম্পানিগুলোকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এগিয়ে থাকতে সাহায্য করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, এবং ইউরোপের বড় বড় কোম্পানিগুলো এআই ব্যবহার করে তাদের পণ্য ও সেবার মান উন্নত করছে। এআই-এর সাহায্যে কোম্পানিগুলো ভবিষ্যতের জন্য তাদের ব্যবসায়িক কৌশল তৈরি করছে। উদাহরণস্বরূপ, টেসলা তার স্বচালিত গাড়ি তৈরিতে এআই ব্যবহার করছে, যা পরিবহন খাতে একটি বড় পরিবর্তন এনেছে।

এই ব্যপারে মাইক্রোসফটের সিইও সত্য়া নাদেলা বলেন “এআইয়ের ভবিষ্যত হল এমন যন্ত্র তৈরি করা যা মানুষের সক্ষমতাকে শক্তিশালী করবে এবং মানুষকে আরও বেশি অর্জন করতে সাহায্য করবে, তবে এটি এমনভাবে করতে হবে যা ন্যায্য, স্বচ্ছ এবং গোপনীয়তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল।”

এআই প্রযুক্তির সাহায্যে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার কৌশল।

এআই প্রযুক্তি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার পথ সহজ করছে। | ছবি সংগৃহীত।

ভবিষ্যতে ব্যবসা আরও বেশি এআই-নির্ভর হয়ে উঠবে। বড় ডেটা এবং মেশিন লার্নিং-এর সাহায্যে কোম্পানিগুলো আরও দক্ষ এবং উন্নততর গ্রাহক সেবা দিতে সক্ষম হবে।এআই এর যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমনি খারাপ দিকও রয়েছে আর এই খারাপ দিক নিয়ে সতর্ক করেছেন টেসলা এবং স্পেসএক্স-এর সিইও এলন মাস্ক। তিনি বলেন “এআই মানুষের সভ্যতার অস্তিত্বের জন্য একটি মৌলিক ঝুঁকি।”

এআই প্রযুক্তি ইতোমধ্যেই গ্রাহক অভিজ্ঞতা এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। ফেসবুক, আমাজন, নেটফ্লিক্স, আলিবাবার মতো কোম্পানিগুলো এআই ব্যবহার করে তাদের সেবা উন্নত করছে এবং গ্রাহকদের আরও ভালো অভিজ্ঞতা দিচ্ছে। ভবিষ্যতে এআই ব্যবসার মূল চালিকা শক্তিতে রূপান্তর হবে এবং এর প্রভাব আরও বিস্তার হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

“তথ্যসূত্র”

শপআপ: দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রসারের অন্যতম মাধ্যম।

Previous article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *