Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আনিকা তায়্যিবা |
তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের জীবন অনেক সহজ হয়েছে তা বলাই বাহুল্য। তবে এরই সাথে বেড়েছে ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা নিয়ে ভাবনা। ব্লকচেইন হচ্ছে এর একটি যুগোপযোগী সমাধান। ব্লকচেইন একটি নিরাপদ ডাটাবেস, যা একটি নেটওয়ার্কের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ভাগ করা হয়। এটি একটি বিতরণকৃত ডাটাবেস যেখানে তথ্য পরিবর্তন বা যোগ করার ক্ষমতা অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিভক্ত যাকে বলা হয় ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার টেকনোলজি। এই পদ্ধতি ব্লকচেইনকে আরও নিরাপদ ও কার্যকর করে তোলে।
ব্লকচেইনের কাজ করার পদ্ধতি
ব্লকচেইনে যখন কোনো তথ্য যোগ বা পরিবর্তন করা হয়, তখন তা একটি “ব্লক”-এ সঞ্চিত হয়। তাই মূলত একে বলা হয় ব্লকচেইন। প্রতিটি ব্লক পূর্ববর্তী ব্লকের সাথে ক্রমান্বয়ে সংযুক্ত থাকে এবং একটি অপরিবর্তনীয় চেইন বা শৃঙ্খল তৈরি করে। এই চেইন ক্রমানুসারে এবং স্থায়ীভাবে ডেটা রেকর্ড রাখে, যা একটি নিখুঁত অডিট হিস্ট্রি তৈরি করে পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য।
এই চেইনে ডেটা যোগ করার আগে নেটওয়ার্কের অধিকাংশ নোডের অনুমোদন প্রয়োজন, যা কনসেনসাস মেকানিজম নামে পরিচিত। যে কেউ চাইলেই যেকোনো জায়গা থেকে তথ্য পরিবর্তন বা যোগ করতে পারবে না। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যরয়েছে প্রুফ অফ ওয়ার্ক এবং প্রুফ অফ স্টেক পদ্ধতি।
ব্লকচেইনের কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য
১. ক্রিপ্টোগ্রাফিক নিরাপত্তা: ব্লকচেইনে প্রবেশ বা তথ্য যোগ করতে দুটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক কী লাগে , এর মধ্যে একটি হচ্ছে পাবলিক কী , অপরটি প্রাইভেট কী।
২. ডিজিটাল লেজার: ব্লকচেইন একটি সম্পূর্ণ অনলাইন ডাটাবেস।
৩. বণ্টিত নেটওয়ার্ক: ব্লকচেইন পাবলিক বা প্রাইভেট নেটওয়ার্কে ভাগ করা হয়।
ব্লকচেইনের ব্যবহার ক্ষেত্রসমূহ
ব্লকচেইন প্রযুক্তির বহুমুখী প্রয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে, যা বিভিন্ন শিল্প ও খাতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে সক্ষম। এর প্রধান ব্যবহার ক্ষেত্রগুলো হলো:
- ক্রিপ্টোকারেন্সি:
ব্লকচেইনের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রয়োগ হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি, যেমন বিটকয়েন এবং ইথেরিয়াম। এটি লেনদেনকে নিরাপদ, স্বচ্ছ, এবং মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই সম্ভব করে তোলে। - স্মার্ট কন্ট্রাক্ট :
ব্লকচেইন স্বয়ংক্রিয় চুক্তি কার্যকর করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি এমন এক পদ্ধতি যেখানে পূর্বনির্ধারিত শর্ত পূরণ হলে চুক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়। যেমন, বীমা দাবির স্বয়ংক্রিয় নিষ্পত্তি। - সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা:
ব্লকচেইনের মাধ্যমে সরবরাহ শৃঙ্খল ট্র্যাকিং সহজ হয়। এটি পণ্য উৎপত্তি, গুণগত মান এবং সরবরাহের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। - ডেটা সুরক্ষা:
ব্লকচেইন ডেটা এনক্রিপ্ট করে এবং একটি স্থায়ী, অপরিবর্তনীয় লেজারে সংরক্ষণ করে, যা ডেটা ফাঁস এবং সাইবার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। - স্বাস্থ্যসেবা:
রোগীর মেডিকেল রেকর্ড সুরক্ষিত এবং সহজলভ্য রাখতে ব্লকচেইন ব্যবহৃত হয়। এটি তথ্য ভাগাভাগি ও গোপনীয়তা বজায় রাখতে সহায়ক। - নির্বাচনী ব্যবস্থা:
ব্লকচেইনের মাধ্যমে নিরাপদ ও স্বচ্ছ ভোটিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। এটি ভোটার পরিচয় নিশ্চিত করে এবং ফলাফলের নির্ভুলতা বাড়ায়। - ব্যাংকিং ও ফিনটেক:
ব্লকচেইন আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেন দ্রুত এবং খরচসাশ্রয়ী করে তোলে। ব্যাংকিং সেক্টরে এটি ঋণ প্রদান এবং হিসাবনিকাশেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থাপনা:
ব্যক্তির ডিজিটাল পরিচয় সুরক্ষিত রাখতে ব্লকচেইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি পরিচয় চুরি প্রতিরোধে কার্যকর।
চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ
ব্লকচেইন প্রযুক্তি প্রচুর সম্ভাবনা সত্ত্বেও এখনো বড় পরিসরে এটি কার্যকর হয়ে উঠতে পারেনি। এর জটিলতা, উচ্চ শক্তি খরচ এবং প্রতিযোগিতামূলক প্রযুক্তি এর প্রসারকে সীমাবদ্ধ করছে। তবে ভবিষ্যতে ব্লকচেইনের সম্ভাবনা রয়েছে ডেটা ডেমোক্রেটাইজেশনের। এর পাশাপাশি এবং বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে সমাধান প্রদানেও ব্লক চেইন ভূমিকা রাখবে।
শেষ কথা
ব্লকচেইন এমন একটি প্রযুক্তি যা নিরাপদ, স্বচ্ছ এবং বিতরণকৃত পদ্ধতিতে ডেটা সংরক্ষণ এবং লেনদেনের সুযোগ প্রদান করে। এর সঠিক ব্যবহার কেবলমাত্র নির্ভরযোগ্যতা এবং দক্ষতাই বাড়াবে না, বরং স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তাও নিশ্চিত করবে।
Comments