Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির |
পিজ্জাবার্গ একটি দেশিও পিজ্জা ব্র্যান্ড যারা দৈনিক গড়ে ৭০০০ টি পিজ্জা বিক্রি করে থাকে। মাত্র ৬ বছরের তারা ঢাকার ভেতরে ১৪ টি রেস্টুরেন্ট দিতে সক্ষম হয়েছে। এর থেকেও বড় কথা তারা একটা কমিউনিটি তৈরি করে ফেলেছে। তাদের এই সফলতার পেছনে অন্যতম হাতিয়ার পিজ্জাবার্গের মিম মার্কেটিং। আজকে কথা হবে কীভাবে খরচ না করেও মিম মার্কেটিং -এ মাধ্যমে ব্যবসা সফল ভাবে চালিয়ে নেওয়া যায়।
মিম মার্কেটিং বুঝার আগে আমাদের বুঝতে হবে পিজ্জার উৎপত্তি কীভাবে। পিজ্জা মূলত ইতালির খাবার। তবে ২য় বিশ্ব যুদ্ধের পরে , যুদ্ধ শেষ করে ইউরোপ থেকে আমেরিকার সৈন্যরা দেশে গিয়ে বলে আমরা পিজ্জার মত একটা খাবার খেয়েছি। সেখান থেকেই পিজ্জার জনপ্রিয়তা শুরু আমেরিকাতে। বর্তমানে পুরো বিশ্বের ২ লক্ষ ৫০ হাজারটি পিজ্জার দোকানের মধ্যে ১ লক্ষ দোকান আমেরিকাতে। আর বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটাও করে আমেরিকা। তাই বর্তমানে বাংলাদেশে যে পিজ্জা তৈরির যে প্রক্রিয়া দেখা যায় তা মূলত আমেরিকা ধাঁচের।
এবার আসা যাক পিজ্জাবার্গের মিম মার্কেটিং নিয়ে। দেশের বাজারে যদি মার্কেটিং নিয়ে চিন্তা করি তাহলে বেশির ভাগ মানুষ বলবে দেখতে সুন্দর হতে হবে, উচ্চ শ্রেণিকে টার্গেট করতে হবে এমন কিছু ভাল গান থাকতে হবে কিংবা সুন্দর মডেল ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু এই সব ধারণাকে বাদ দিল পিজ্জাবার্গ। তাদের মতে মার্কেটিং হতে হবে এমন কিছু যা
মানুষকে কোনো কিছুতে করতে বা কিনতে আগ্রহী করে তুলবে।
সাধারণত মার্কেটিং হয়ে থাকে এভাবে, “আজকে আমাদের পিৎজায় ১০% ছাড় চলছে” কিংবা ” আজ দুইটি পিজ্জার সাথে ১টি পিজ্জা ফ্রি”। কিন্তু পিজ্জাবার্গ সেই একই কাজ করছে কিছুটা ভিন্ন ভাবে। তারা পোস্ট এ সুন্দর একটি পিজ্জার ছবি দিয়ে লিখে, “বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ৫% ফ্রি তবে বাড়ি নোয়াখালীর হলে ৪%”।
যার ফলে মানুষ এইটা নিয়ে কথা বলে। তারা কমেন্ট বক্সে গিয়ে তাদের নোয়াখালির বন্ধুদের মেনশন দেয়, হাসি ঠাট্টা করে। এই ব্যাপারে পিজ্জাবার্গে মালিক মির মেহেদি,”পিজ্জাবার্গে একটা ব্র্যান্ড, আমরা শুধু পিজ্জা বিক্রি করি না, আমরা জীবনধারা বিক্রি করি।”
বর্তমানে হিউমারকে প্রকাশ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। যা হতে পারে বিভিন্ন ছবির মাধ্যমে, ভিডিও, অডিও ইত্যাদি। কোন কিছু মিম হতে গেলে তার দুইটা বিশিষ্ট থাকা লাগে। প্রথমত এইটা একটু সেলফিস ধরনের হতে হবে। দ্বিতীয়ত, এটা অনেক বেশি ছড়িয়ে পরতে চায়। সফল মিম সেই গুলো যেটা একজন আরেক জনের সাথে শেয়ার করে এবং ছড়িয়ে যায়।
২০০৭ সালের একটি গবেষণায় এসেছে আমরা দৈনিক গড়ে ৫০০ টি বিজ্ঞাপন দেখি। কিন্তু আমরা বিজ্ঞাপন খুব একটা পছন্দ করি না। এক গবেষণায় দেখা গেছে অন্যান্য জেনারেশনের চেয়ে জেন-জেড সব থেকে বেশি বিজ্ঞাপন অপছন্দ করে, তারা সব থেকে বেশি বিজ্ঞাপন এড়িয়ে চলে। কিন্তু জেনারেশন জেড দের মিম এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিলে তারা বিরক্ত হয় না। আমরা গড়ে দিনে ২০-৩০ টা মিম দেখে থাকি। যার মধ্যে প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৫০% মিম আমরা শেয়ার করি হতে পারে টা অনলাইনে কিংবা বন্ধুদের। গতানুগতিক গ্রাফিক্স দিয়ে পোস্ট করলে যেখানে পণ্যের গ্রোথ বৃদ্ধি পায় ৫% সেখানে মিম এর মাধ্যমে পোস্ট শেয়ার করলে তার জনপ্রিয়তা বাড়ে ৬০%।’’
আর এই ব্যাপারটা কেই সঠিকভাবে ব্যবহার করেছে পিজ্জাবার্গে। মির সাহেবের মতে মার্কেটিং- এ কোন কিছুই খারাপ না। পিজ্জাবার্গে এর মার্কেটিং হেড সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার সালমান মুক্তাদির। তার তৈরি করা বিভিন্ন ভিডিও যেটা মূলত একটা হাস্যকর ভিডিও কিন্তু প্রায় এক লক্ষ ৪৪ হাজার মানুষ রিয়্যাক্ট করেছে ভিডিওটিতে।
এছাড়া তাদের পোস্টের ক্ষেত্রে তারা তরুণ প্রজন্মের সাথে যায় এমন বিষয়ের সাথে তারা মিল রেখে পোস্ট দেয়। যেমন ধরুন “মানি হেইস্ট” এর সাথে মিল রেখে তারা পোস্ট দেয় ( টোকিও নো = মিরপুর ইয়েস, লিসবন নো = উত্তরা ইয়েস) যে ব্যাপারটি তরুণরা অনেক বেশি কানেক্ট করতে পারবে।
তারা জানে যে বাংলাদেশ আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের কত বড় ফ্যান বেজ আছে । তাই তারা তাদের উদ্দেশ্য করে পোস্ট দেয়, যে আর্জেন্টিনা ফ্যানরা কোন পিৎজাটা পছন্দ করে। ব্রাজিলের ফ্যানরা কোন পিৎজা পছন্দ করে, অন্য দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ কোন পিজ্জা পছন্দ করে। যে ব্যাপারটি অবশ্যই মানুষকে কানেক্ট করতে পেরেছে।
এভাবে পিজ্জাবার্গে মিম মার্কেটিং এর মাধ্যমে তারা তাদের বিজনেস বাড়াচ্ছে। এখন বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে তাদের ব্রাঞ্চ আছে।
Comments