মার্কেট এনালাইসিস

ব্র্যান্ড মার্কেটিংয়ে নতুন দিগন্তঃ ইউজার জেনারেটেড কন্টেন্ট

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির

ডিজিটাল যুগে মার্কেটিং কৌশল পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। আর এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে ব্যবহারকারী-সৃষ্ট কনটেন্ট যা সবার কাছে পরিচিত ইউজার জেনারেটেড কন্টেন্ট হিসেবেএটি এমন এক কৌশল যেখানে ভোক্তারাই কোনো ব্র্যান্ডের প্রচারণার অংশ হয়ে ওঠেন, যা প্রচলিত বিজ্ঞাপনের তুলনায় অনেক বেশি আলাদা। বিশ্বব্যাপী বড় বড় কোম্পানি এখন এই কৌশলকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের বিজনেসের উন্নতি ঘটাচ্ছে। বাংলাদেশের বাজারেও বেশ কিছু কোম্পানি আছে যারা এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে তাদের নির্দিষ্ট ক্রেতা দের কাছে নিজেদের পন্য তুলে ধরছেন। 

বাংলাদেশে ইউজিসি এর উত্থান

দেশের বাজারে ডিজিটাল দুনিয়ার সম্প্রসারণ খুব বেশি দিন হয়নি। তবে করোনার আক্রমণের পর থেকে  দেশের মানুষ এখন সব রকম কাজেই অনেকটা ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৪০ মিলিয়ন সক্রিয় ইন্টারনেট ,ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং টিকটক ব্যবহারকারী আছে। আর তাই এই বড় একটা জনগোষ্ঠীর ডিজিটাল চাহিদা মেটাতে তৈরি হয়েছে অনেক ইউটিউবার এবং কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। এই ডিজিটাল অগ্রগতির  মাঝে ইউজার জেনারেটেড কন্টেন্ট এর ব্যবহারবড় বড় কোম্পানি গুলোকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এই ইউজিসি মূলত গ্রাহকরা যখন তাদের অভিজ্ঞতা এবং মতামত অনলাইনে শেয়ার করে সেই ডাটা গুলোকে ব্যবহার করেই কোম্পানি গুলো তাদের কন্টেন্ট কেমন হবে তা ঠিক করে। 

যখন একজন গ্রাহক আপনার ব্র্যান্ডের প্রচার করে এমন কনটেন্ট শেয়ার করেন, তখন সেটি মানুষ দেখতে চায়। কারণ, একজন ব্যক্তি নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তিরা কোম্পানির সেই পণ্য সম্পর্কে ভালো কিছুই নিয়ে আসে। ধুরুন যে বিষয়টি তার জীবনে ব্র্যান্ডের পন্যের ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রেও এক বিশাল অর্জন।

বাংলাদেশে ইউজার জেনারেটেড কন্টেন্টের উত্থান তুলে ধরা হয়েছে একটি চিত্রের মাধ্যমে।

ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট কীভাবে ব্র্যান্ডের প্রচার করে?

ইউজিসি এমন একটি শক্তিশালী মাধ্যম যা আপনার ব্র্যান্ডের উদ্দেশ্য সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেয়। বিশেষ করে যখন এই বার্তাটি সরাসরি ব্র্যান্ডের কাছ থেকে আসে না, তখন এটি আরও কার্যকর হয়। মানুষ ব্র্যান্ডের সরাসরি প্রচারের চেয়ে অন্য ব্যক্তিদের সুপারিশকে বেশি বিশ্বাস করে। এটি পরীক্ষিত এবং কার্যকরী কৌশল; গ্রাহকদের হাতে পণ্য দিন, তাদের ব্যবহার করতে দিন এবং তারা কীভাবে এটি উপভোগ করছেন, তা শেয়ার করতে দিন। এই কনটেন্ট ইমেইল, ওয়েবপেজ এবং সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করা যায়, যা এনগেজমেন্ট এবং বিক্রয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। প্রকৃত গ্রাহকদের বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরার মাধ্যমে এটি ব্র্যান্ডের প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়।

ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে ইউজিসি-এর প্রভাব

বর্তমানে ইনফ্লুয়েন্সাররা ইউজিসি-কে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। যেমন ধরুন আমরা সবাই কোন মোবাইলটি কিনব তা কেনার আগে কয়েকটা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর দের ভিডিও দেখি। তার পর তাদের বলা কথার উপর ভরসা করে আমরা মোবাইল কিনতে যায়। গবেষণা বলছে আগামী এক বছরে গ্লোবাল মার্কেটারদের সোশ্যাল মিডিয়া বিনিয়োগ ৫৩% বৃদ্ধি পাবে। আরও একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০% এর বেশি গ্রাহক কোনো পণ্য কেনার আগে অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও দেখে তার পর সিদ্ধান্ত নেন।  বর্তমানে ইনফ্লুয়েন্সারদের বলা পণ্যগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা দিন দিন বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি বাইক কিনবেন, আপনার বাজেট ২ লক্ষ টাকা। আপনি অবশ্যই চাইবেন একটু ভিডিও দেখে নেওয়া যাক। এবং আপনি অনেক ভিডিও পেয়ে যাবেন ২ লক্ষা টাকার মধ্যে সেরা ৫টি বাইক এমন শিরনামে।

ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে ইউজার জেনারেটেড কন্টেন্টের প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে একটি চিত্রে।

ই-কমার্স যুগে ইউজিসি-এর ভূমিকা

কোভিড মহামারির সময় ই-কমার্স জনপ্রিয় হওয়ার ফলে প্রচলিত খুচরা বাজার বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই এখন দেশে এমন কোন কোম্পানি নেই যাদের শুধু অফলাইনে পাওয়া যায় কিন্তু অনলাইনে পাওয়া যায় না। এখন সব কোম্পানিই তাদের টার্গেটেড কাস্টমার ধরতে অনলাইনে আনাগোনা শুরু করেছে। ফ্যাশন পণ্য থেকে শুরু করে ফুড, গৃহস্থালি , বাইক, ট্রাভেল সব ক্ষেত্রেই কনটেন্ট ক্রিয়েটর তাদের পেইজে এই বিষয় গুলি নিয়ে কথা বলে।

ইনফ্লুয়েন্সার ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি: নতুন মার্কেটিং কৌশল

বর্তমানে ইনফ্লুয়েন্সার ম্যানেজমেন্ট এজেন্সিগুলো কেবল কনটেন্ট তৈরি করে। ইউজিসি-র মাধ্যমে ব্র্যান্ড সচেতনতা, আনুগত্য এবং সংযুক্তি বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে ১৬.৪ বিলিয়ন ডলারের বাজারে পরিণত হয়েছে।

ইউজিসি-এর মাধ্যমে গ্রাহকরা নিজেদের সহজেই ব্র্যান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারে। যা ব্র্যান্ড এবং ভোক্তা উভয়ের জন্য বেশ লাভজনক একটি ব্যপার।

“তথ্যসূত্র”

স্টার্টআপকে সফল করার অন্যতম উপায় ডিজিটাল মার্কেটিং

Previous article

স্টারলিংক বনাম ক্যাবল ইন্টারনেট: ভবিষ্যতে প্রাধান্য পাবে কোনটি?

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *