ইনফরমেশন টেকনোলজি

স্টারলিংক বনাম ক্যাবল ইন্টারনেট: ভবিষ্যতে প্রাধান্য পাবে কোনটি?

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আনিকা তায়্যিবা

বর্তমান সময়ের দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির জগতে দুইটি নাম বারবার উঠে আসে—চিরচেনা ক্যাবল ইন্টারনেট এবং স্পেসএক্সের স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট। এই দুইটি ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রযুক্তির প্রতিটিরই রয়েছে স্বতন্ত্র সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেখানে সম্প্রতি স্টারলিংকের সেবা প্রদানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, এটি জানা জরুরী ইলন মাস্কের স্টারলিংক কি ক্যাবল ইন্টারনেটের বিকল্প হতে পারবে কিনা। চলুন আজ জানা যাক বিস্তারিত।

ক্যাবল ইন্টারনেট:

ক্যাবল ইন্টারনেট সাধারণত কো-অ্যাক্সিয়াল ক্যাবল ব্যবহার করে কাজ করে, যেটি একসময় টিভি সিগনাল ট্রান্সমিশনের জন্য ব্যবহৃত হতো। এই ওয়্যারড সংযোগ ব্যবহারকারীদের বাড়িতে বা অফিসে সরাসরি উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়। শহরাঞ্চলে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয় এবং যার গতি সাধারণত ১০০ এমবিপিএস থেকে শুরু করে ১ জিবিপিএস পর্যন্ত হয়ে থাকে। ক্যাবল ইন্টারনেটের লেটেন্সি খুবই কম থাকে, ফলে গেম খেলা, ভিডিও কল ইত্যাদিতে ভালোভাবে কাজ করে।

ক্যাবল ইন্টারনেট সংযোগের একটি সাধারণ চিত্র, যা স্টারলিংক বনাম ক্যাবল ইন্টারনেট তুলনার প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয়েছে।

স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট:

অপরদিকে স্টারলিংক একটি লো-আর্থ-অরবিট স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে। এটি সাধারণ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট থেকে আলাদা, কারণ স্টারলিংকের স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবী থেকে ৩৪১-৫৮০ কিমি দূরে অবস্থান করে। এই কারণে লেটেন্সি অনেক কম হয়—মাত্র ২০-৪০ মিলিসেকেন্ড, যেখানে প্রচলিত স্যাটেলাইটে তা ৬০০ মিলিসেকেন্ড বা তার বেশি। ব্যবহারকারীরা স্টারলিঙ্কে গতিও পান বেশি।

স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবার একটি চিত্র, যা স্টারলিংক বনাম ক্যাবল ইন্টারনেট আলোচনার অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যৎ প্রভাব

বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি স্টারলিংকের সেবা চালুর অনুমতি দিয়েছে, যা দেশের ডিজিটাল খাতে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এতে দেশের প্রযুক্তির আরও যা ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে তা হলো-

১। ডিজিটাল বৈষম্য কমানো:
গ্রামীণ ও অবকাঠামোবিহীন এলাকায় স্টারলিংক ইন্টারনেট পৌঁছাতে পারে, যেখানে ক্যাবল ইন্টারনেট দেওয়া সম্ভব নয়। এতে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং ই-কমার্সে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।

২। অর্থনৈতিক সম্ভাবনা:
গ্রামাঞ্চলের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, ফ্রিল্যান্সার ও শিক্ষার্থীরা বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে কাজ করতে পারবে। ফলে দেশের অর্থনীতির ডিজিটাল রূপান্তরে এটি বড় ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্টারলিংক বনাম ক্যাবল ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ প্রভাব বোঝাতে একটি প্রতীকী চিত্র ব্যবহৃত হয়েছে।

তবে, ভালো দিকের সাথে এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে-

  • স্টারলিঙ্ক এর উচ্চমূল্যের ডিভাইস ও সাবস্ক্রিপশন ফি অনেকের নাগালের বাইরে হতে পারে যা অনেকে নিতে পারবেন না।
  • স্টারলিঙ্ক এর পরিষেবা পেতে খোলা আকাশের বা একেবারে খোলা স্থানের প্রয়োজন। এর পাশাপাশি এর সেবা আবহাওয়ার উপরেও খানিকটা নির্ভরশীল। খারাপ আবহাওয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে।
  • জাতীয় টেলিকম অবকাঠামো ও নীতিমালার সঙ্গে স্টারলিঙ্ক এর পরিষেবা সমন্বয় করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

ডিজিটাল বৈষম্য কমানোর সম্ভাবনা তুলে ধরতে স্টারলিংক বনাম ক্যাবল ইন্টারনেট প্রসঙ্গে একটি ধারণামূলক চিত্র।

স্টারলিংক ও ক্যাবল ইন্টারনেট—উভয় প্রযুক্তিরই নিজস্ব শক্তি ও দুর্বলতা রয়েছে। তবে বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে ইন্টারনেট এখনো সমানভাবে সকলের কাছে বিস্তার পায়নি, স্টারলিংক হতে পারে একটি গেম চেঞ্জার, যদিও এর চ্যালেঞ্জগুলো মাথায় রাখা জরুরী। যদি সঠিকভাবে ইলন মাস্কের নতুন এই প্রযুক্তি বাস্তবায়িত হয়, তবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোকেও ডিজিটাল বাংলাদেশের মূলধারায় আনা সম্ভব হবে। তবে চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করাই হবে এর সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

“তথ্যসূত্র”

ব্র্যান্ড মার্কেটিংয়ে নতুন দিগন্তঃ ইউজার জেনারেটেড কন্টেন্ট

Previous article

আমেরিকার অতিরিক্ত শুল্ক আরোপে বৈশ্বিক চেইন ইন্ডাস্ট্রিতে নেতিবাচক প্রভাব

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *