স্কিল এন্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট

ক্যারিয়ার পরিকল্পনা ফ্রিল্যান্সিং,পার্ট-টাইম এবং ফুল-টাইম চাকরির তুলনামূলক বিশ্লেষণ

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আয়েশা আক্তার

আধুনিক চাকরি বাজার প্রতিনিয়ত আমাদেরকে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্সিং এর মতো পেশার চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী কোন পেশাকে নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করবেন, তা নিয়ে নানা দ্বিধা-দ্বন্দে ভুগতে থাকেন। আজকে আমরা ফ্রিল্যান্সিং,ফুল-টাইম এবং পার্ট-টাইম জব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো যাতে আপনারা সহজেই নিজের পছন্দমতো ক্যারিয়ার নির্ধারণ করতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সিং

ফ্রিল্যান্সিং বলতে একটি স্বাধীন পেশাকে বোঝায়। কোনো ব্যক্তি কাজ করতে অন্যদের বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট প্রকল্পে যোগদান করে এবং নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে সেবা প্রদান করে। মূলত ফ্রিল্যান্সিংয়ে ব্যক্তি একাধিক ক্লায়েন্ট বা কোম্পানির জন্য একটি প্রকল্প বা চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করে থাকে। এটি কোনো স্থায়ী পেশা নয়। এখানে সকল কাজ প্রকল্প বা চুক্তিভিত্তিক হয়ে থাকে। ফ্রিল্যান্সাররা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা কোম্পানি দ্বারা নিযুক্ত হয় না বরং তারা নিজস্ব সময়সূচী এবং কাজের অবস্থান নিজের মতো সেট করতে পারে।

ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা-অসুবিধা

ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে বিশ্লেষণমূলক চিত্র।

ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে স্বাধীনতা এবং এর চ্যালেঞ্জের চিত্র। | ছবি সংগৃহীত।

ফ্রিল্যান্সিং-এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আপনি কাজের সময়সূচী এবং কাজের অবস্থান নিজের মতো ঠিক করতে পারেন। আবার, ফ্রিল্যান্সাররা তাদের ক্লায়েন্ট এবং প্রকল্পগুলো নিজের মতো বেছে নিতে পারে। ফলে তারা নিজের দক্ষতা এবং আগ্রহের সাথে মানানসই কাজ করতে পারে। ফ্রিল্যান্সিং করে গতানুগতিক ফুল টাইম জব থেকেও বেশি আয় করা সম্ভব। ফ্রিল্যান্সাররা সারা বিশ্বের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করতে পারে, যা তাদের নেটওয়ার্কিং বাড়াতে সাহায্য করে।

কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং এর বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে। প্রথমত, ফ্রিল্যান্সিং কোনো স্থায়ী চাকরি নয় যা অনেকের কাছেই একটি বড় সমস্যা। আবার, ফ্রিল্যান্সাররা তাদের ক্লায়েন্টদের খুঁজে বের করার জন্য অনেক সময় ব্যয় করে থাকে। ফ্রিল্যান্সারদের ক্যারিয়ারের সম্পদ এবং ক্যারিয়ারের অগ্রগতির সুযোগের সীমিত অ্যাক্সেস রয়েছে। ফ্রিল্যান্সাররা স্বাস্থ্য বীমা বা অবসর পরিকল্পনার মতো কর্মচারী সুবিধা পান না। ফ্রিল্যান্স কাজের অ্যাপ্লিকেশনের জন্য প্রায়ই একটি শক্তিশালী পোর্টফোলিও এবং অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়, যা এই ক্ষেত্রে নতুনদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।

খণ্ডকালীন চাকরি

খণ্ডকালীন চাকরির সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে একটি নির্দেশনামূলক চিত্র।

খণ্ডকালীন চাকরি: সুবিধা ও সুযোগ। | ছবি সংগৃহীত।

খণ্ডকালীন বা পার্ট-টাইম জব বলতে এমন কাজের ব্যবস্থাকে বোঝানো হয় যেখানে একজন ফুল-টাইম কর্মচারীদের তুলনায় এক জন ব্যক্তি প্রতি সপ্তাহে কম ঘন্টা কাজ করে থাকেন। খণ্ডকালীন চাকরি খোঁজার পদ্ধতি ফুল-টাইম চাকরি খোঁজার চেয়ে বেশ ভিন্ন  হয়ে থাকে। যদিও খণ্ডকালীন কাজে ফুল-টাইম কাজের মতো একই সুবিধা বা ক্যারিয়ারের অগ্রগতির সুযোগ থাকে না, তবে খণ্ডকালীন চাকরি আপনার অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করবে যা আপনাকে ফুল-টাইম চাকরির ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।

খণ্ডকালীন চাকরির সুবিধা-অসুবিধা

খণ্ডকালীন কর্মসংস্থান বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে। যেমন- খণ্ডকালীন চাকরি আপনাকে ফুল টাইম কাজের জন্য প্রস্তুত করে, অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করে, আপনার সিভিকে শক্তিশালী করে এবং নেটওয়ার্কিং বৃদ্ধির সুযোগ করে দেয়। পার্ট-টাইম জবের একটি নির্দিষ্ট সময়সূচী থাকে, ফলে শিক্ষার্থীরা সহজেই নিজেদের লেখাপড়া ও অন্যান্য কাজ ঠিকভাবে ম্যানেজ করতে পারে। আবার, পার্ট-টাইম চাকরি থেকে প্রাপ্ত অর্থ শিক্ষার্থীদেরকে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে। অনেক সময় পার্ট-টাইম কাজের পারফর্ম্যান্স ভালো হলে, একই কোম্পানিতে ফুল-টাইম কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়।

কিন্তু খণ্ডকালীন কর্মসংস্থানেরও অসুবিধা রয়েছে। যেমন স্বাস্থ্য বীমা এবং অবসর পরিকল্পনার মতো সুবিধা খণ্ডকালীন চাকরিতে পাওয়া যায় না। যারা পার্ট-টাইম চাকরি করে, তারা সাধারণত কোম্পানির কোনো কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে পারে না।

ফুল-টাইম কর্মসংস্থান

ফুল-টাইম কর্মসংস্থানের সুবিধা ও দিকনির্দেশনা নিয়ে বিশ্লেষণমূলক চিত্র।

ফুল-টাইম কর্মসংস্থান: সুবিধা ও সুযোগ। | ছবি সংগৃহীত।

একজন ফুল-টাইম কর্মচারী সাধারণত প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৪০ ঘন্টা কাজ করে থাকে। ফুল-টাইম কাজ করলে একটি নির্দিষ্ট বেতন সুবিধা এবং কাজের নিরাপত্তা পাওয়া যায়। আবার সরকারি চাকরিতে অবসর ভাতা,পেনশন সুবিধা, বোনাসসহ নানা সুবিধা পাওয়া যায়। তবে ফুল-টাইম চাকরি করার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকতে হবে। ফুল-টাইম চাকরি খুঁজে পাওয়া তুলনামূলক কঠিন।

ফুল-টাইম চাকরির সুবিধা-অসুবিধা

ফুল-টাইম কর্মসংস্থান চাকরির নিরাপত্তা, একটি স্থির আয়, স্বাস্থ্য বীমা এবং অবসর পরিকল্পনার মতো বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে। এছাড়াও প্রমোশনের সুযোগ, নেটওয়ার্কিং কিংবা নিজের দক্ষতা প্রমাণ করার নানা সুযোগ ফুল-টাইম চাকরিতে রয়েছে।

ফুল-টাইম কাজেরও কিছু অসুবিধা রয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অসুবিধা হলো সীমিত নমনীয়তা। অর্থাৎ, ফুল-টাইম জব ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত হয়ে থাকে। কর্মচারীকে ঠিক সময়ের মধ্যে অফিসে আসতে হয়। আবার কোনো কাজের ডেডলাইন থাকলে তা যথাযথ সময়ের মধ্যে করতে হয়। এখানে নিজেরমতো কাজ করার তেমন সুযোগ থাকে না। ফুল-টাইম চাকরির ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বাধীনতা থাকে না। বসের চাহিদামতো সকল কাজ করতে হয়।

ফুল-টাইম,পার্ট-টাইম নাকি ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার হিসেবে আপনি কোন পেশাকে বেছে নিবেন, তা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করছে। আপনি নিজের দক্ষতা, চাহিদা অনুযায়ী পেশা নির্ধারণ করতে পারেন। আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, তাহলে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করুন। আবার যদি ফুল-টাইম বা পার্ট-টাইম চাকরি করতে চান, তাহলে সে অনুযায়ী দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি অভিজ্ঞতাও অর্জন করুন। পেশা নির্ধারণের ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজের পছন্দকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। তাহলে আপনি সফলতা অর্জন করতে পারবেন।

“তথ্যসূত্র”

ক্রেডিট না ডেবিট: কোন কার্ডের ব্যবহার অধিক সুবিধাজনক?

Previous article

এইচএসসির পর ফ্রিল্যান্সিং কীভাবে শুরু করবেন?

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *