ব্র্যান্ডিং স্ট্রাটেজিস

কোকা-কোলার বিজ্ঞাপনে বাংলাদেশের জনগণের ক্ষোভের কারন

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির

২০২৪ সালের ১১ জুন , কোকা-কোলা বাংলাদেশ একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। যেখানে কোকা-কোলা দাবি করে যে তারা ইসরায়েলের পণ্য নয়। গাজা সংকট চলাকালীন সময়ে এই ধরনের প্রচারণা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিজ্ঞাপনটি বিশেষভাবে বিতর্কিত হয়ে ওঠে, কারণ এতে বলা হয়েছিল, “ফিলিস্তিনে কোকা-কোলার একটি কারখানা আছে।” বাস্তবে, এই কারখানাটি পশ্চিম তীরের একটি ইসরায়েলি বসতিতে অবস্থিত। যা তৈরিই করা হয়েছে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে।

বাংলাদেশের জনগণের প্রতিক্রিয়া

বিজ্ঞাপন প্রচারিত হওয়ার পরপরই সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকেই অভিযোগ করেন, বিজ্ঞাপনটি “সংবেদনশীল ইস্যুতে উদাসীন এবং ভুল তথ্যপূর্ণ।” একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, “ইসরায়েলি আগ্রাসনের পটভূমিতে এমন মিথ্যা তথ্য প্রদর্শন করাটা সরাসরি প্যালেস্টাইনের প্রতি অসম্মান।”

বিজ্ঞাপনটিতে কাজ করা অভিনেতা ও ক্রিয়েটিভ টিমও সাধারণ জনগণের সমালোচনার মুখে পড়েছিল। তাদের মধ্যে একজন অভিনেতা জানিয়েছেন, “আমি শুধু কোম্পানির সরবরাহ করা তথ্য দিয়ে বিজ্ঞাপনটি তৈরি করেছি, কোনো রাজনৈতিক অবস্থান নেই।” তবে অনেক দর্শক ও আমজনতা এই ঠুনকো যুক্তি মানতে নারাজ।

কিন্তু কেন এই প্রতিক্রিয়া কোকা-কোলার প্রতি?

বাংলাদেশের জনগণের ইসরায়েল-বিরোধী অবস্থান ঐতিহাসিকভাবে দৃঢ়। ইসরায়েল এর ব্যাপারে বাংলাদেশ কতটা শক্ত তা বুঝতে চাইলে বাংলাদেশের পাসপোর্টই যথেষ্ট। বাংলাদেশের পাসপোর্টে সব সময়েই ইসরায়েলের নাম উল্লেখ করে বলা হতো, এই দেশ ছাড়া আর সব দেশ ভ্রমণের জন্য পাসপোর্টটি বৈধ। তার উপরে গত বছর থেকে চলে আসা ফিলিস্তিন বনাম ইসরায়েলের যুদ্ধ বাংলাদেশের মানুষের মনে আরও রাগের জন্ম দিয়েছে নেতানিয়াহু বাহিনীর প্রতি।  ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সহানুভূতি এবং ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতি নিন্দার কারণে, অনেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত  ব্র্যান্ডগুলিকে বর্জন করে। যদিও কোকা-কোলা সরাসরি ইসরায়েলকে সমর্থন করে এমন কোনো প্রমাণ নেই, তবু কিছু মানুষ বিশ্বাস করে, এটি ইসরায়েলের অর্থনীতিতে অবদান রাখে।

একটি প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে কোকা-কোলার প্রতি মানুষের ভাবনা ও অনুভূতির প্রতিফলন।

কোকা-কোলার প্রতি প্রতিক্রিয়া ও অনুভূতির প্রকাশ। | ছবি সংগৃহীত।

জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি

বাংলাদেশের জনগণ মনে করে, গাজা সংকটের সময়ে এই ধরনের প্রচারণা অপ্রয়োজনীয়। তারা আশা করে, কোম্পানিগুলো যেন তাদের বিপণন কৌশলে আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলিকে বিবেচনা করে। কোকা-কোলা এই ঘটনা থেকে বড় একটি শিক্ষা হতে পারে যে, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সংবেদনশীলতাগুলো অগ্রাহ্য করে বিপণন কৌশল গ্রহণ করা তাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই তাদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন কোকা-কোলা নিয়ে। এমনই একজন লিখেছেন, “ঈদে কাউকে কোকা কোলা খেতে দেখলে প্রশ্ন করুন র*ক্ত খাচ্ছেন কেন ভাই!? সুধু কোকা কোলা না! সেভেন আপ, মিরিন্ডা,স্প্রাইট,মাউন্টেন ডিউ, কিনলে,পেপসি বয়কট। বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন- মোজো,ফ্রেস কোলা, আফি,টাইগার,স্পিড সহ বাংলাদেশী পন্য।” অনেক মানুষ ফেসবুকে “বয়কট কোকাকোলা” -র ডাক দেন। বিভিন্ন বিজ্ঞাপন এবং ভিন্ন ধরণের ছবি শেয়ারের মাধ্যমে তারা কোকাকোলা প্রতি তাদের মত প্রকাশ করেন।

কোকা-কোলার বিরুদ্ধে বয়কটের বার্তা প্রদর্শনকারী একটি প্রতিবাদমূলক চিত্র।

কোকা-কোলার বিরুদ্ধে বয়কটের প্রতিবাদ। | ছবি সংগৃহীত।

মোজোর উত্থান ও উৎপাদন সক্ষমতা

কোকা-কোলার এই বিতর্কের ফলে বাংলাদেশের বাজারে স্থানীয় ব্র্যান্ড মোজোর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের মোজো ২০০৬ সালে বাজারে আসে এবং বর্তমানে প্রায় ৪৭টি দেশে রপ্তানি হয়। কিছু সূত্র মতে, মোজোর উৎপাদন সক্ষমতা বাংলাদেশের সম্পূর্ণ চাহিদা মেটাতে সক্ষম নয়, যা সরবরাহ সংকটের কারণ হতে পারে। এবং এখন বাজারে ঘটছেও তাই, মানুষ মোজো কিনতে এসে দোকানে মোজো পাচ্ছে ন। তবে মোজো মানুষের কাছে সবথেকে বেশি কাছাকাছি যেতে পেরেছে ফিলিস্তিনের জন্য ডোনেশন বা সাহায্যের হাত বািড়য়ে দেবার কারণে।

কোকা-কোলার বর্তমান পরিস্থিতি

বিতর্কের পর কোকা-কোলা বাংলাদেশ বিজ্ঞাপনটি তাদের ইউটিউব চ্যানেল থেকে সরিয়ে নেয়। এবং তাদের ফেসবুক পেইজে মন্তব্য করার অপশন বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে, কোকা-কোলার বিক্রি বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। কোকা-কোলার বাংলাদেশে বাজার শেয়ার প্রায় ২৩% হ্রাস পেয়েছে শুধু এই বিতর্কিত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। এই ঘটনার আগে কোকা-কোলার শেয়ার বাজারে অবস্থান ছিল প্রায় ৪২%।

কোকা-কোলার বর্তমান পরিস্থিতি ও কোম্পানির সাম্প্রতিক কার্যক্রমের প্রতিফলন।

কোকা-কোলার বর্তমান পরিস্থিতির চিত্র। | ছবি সংগৃহীত।

কোকা-কোলার বিতর্কিত বিজ্ঞাপন বাংলাদেশের বাজারে তাদের অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যেখানে স্থানীয় ব্র্যান্ড মোজো সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে। তবে, মোজোর জন্য উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি, যাতে তারা ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে পারে এবং বাজারে তাদের অবস্থান সুসংহত করতে পারে। এই কাজে দেশের বাকি কমল পানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গুলোরও কাজ করার জায়গা আছে।

“তথ্যসূত্র”

উচ্চশিক্ষার জন্য জিআরই পরীক্ষার নিবন্ধন যেভাবে করবেন

Previous article

বেতন আলোচনা সফল করার কিছু সহজ কৌশল

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *