হেলথ এন্ড ওয়েলনেস

শিশুদের জন্য ইউটিউবকে সুরক্ষিত করতে অভিভাবকদের ৬টি করণীয় পদক্ষেপ

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আয়েশা আক্তার

ইউটিউব জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রতিটি নতুন মুভি, ভিডিও গেম, কার্টুন, গান বা টিভি শো, শিক্ষামূলক ভিডিও সবকিছুই ইউটিউবে পাওয়া যায়। ডিজিটাল এই যুগে ইউটিউবের প্রতি শিশুদের নির্ভরশীলতাও প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে। বর্তমানে প্রায় সময় দেখা যায় ইউটিউবে কার্টুন দেখা ছাড়া বাচ্চারা নিজেদের খাবার পর্যন্ত খেতে চায় না। যেহেতু এই প্ল্যাটফর্মটি শিশুদের কথা বিবেচনা করে তৈরি করা হয়নি, তাই প্রতিনিয়ত অভিভাবকরা শিশুদের ইউটিউব ব্যবহার নিয়ে চিন্তিত থাকেন। অভিভাবক থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ সকলের মনেই প্রশ্ন জাগে- ইউটিউব কি আসলেই বাচ্চাদের জন্য নিরাপদ? অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য আজকে আমরা আলোচনা করবো ইউটিউবের এমন কিছু ফিচার নিয়ে যার মাধ্যমে সহজেই ইউটিউবকে বাচ্চাদের ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা যায়।

ইউটিউব

ইউটিউব একটি ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম। যেখানে ব্যবহারকারী ভিডিও দেখতে, তৈরি করতে এবং শেয়ার করতে পারে। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামের মতো এই প্ল্যাটফর্মে মেসেজ দেওয়া, ভিডিও-অডিও কল করা যায় না। এই প্ল্যাটফর্ম মূলত ভিডিও দেখা, গান শোনা, সিনেমা দেখা এসব কাজে ব্যবহৃত হয়। ২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ইউটিউব যাত্রা শুরু করে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের তথ্য অনুযায়ী, ইউটিউবের প্রতি মাসের সক্রিয় ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ২.৭ বিলিয়নেরও বেশি।

ইউটিউবের হোমপেজ, যেখানে শিশুদের জন্য সুরক্ষিত ও উপযোগী কনটেন্ট প্রদর্শিত হয়েছে।

ইউটিউব: শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ এবং উপযোগী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করছে, যেখানে তাদের জন্য মানসম্মত কনটেন্ট পাওয়া যাবে। | ছবি: সংগৃহীত।

ইউটিউব ব্যবহারে বয়সসীমা

ইউটিউবে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে সাধারণত বয়স ১৩+ হতে হবে। তবে এই প্ল্যাটফর্মে ভিডিও দেখার জন্য কোনো অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হয় না। তাই বয়সসীমা নিয়ে বিধিনিষেধ নেই। একটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট থাকলেই ইউটিউবে ভিডিও দেখা যায়।

ইউটিউবের নিরাপত্তাজনিত সেটিংস

আমরা সকলে নিয়মিত ইউটিউব ব্যবহার করলেও ইউটিউবের নিরাপত্তাজনিত সেটিংস সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই সুস্পষ্ট ধারণা নেই। নিচে ৬টি ফিচার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে যার মাধ্যমে আমরা সহজেই বাচ্চাদের জন্য একটি নিরাপদ এবং বয়স উপযোগী ইউটিউবের ব্যবস্থা করতে পারবো।

ইউটিউবের নিরাপত্তাজনিত সেটিংস পৃষ্ঠা, যেখানে শিশুদের জন্য নিরাপত্তা বিকল্পগুলি দেখানো হয়েছে।

ইউটিউব: শিশুদের নিরাপত্তার জন্য সেটিংসের গুরুত্ব। | ছবি: সংগৃহীত।

ধাপ ১- ফ্যামিলি অ্যাকাউন্ট সেটআপ করা

১৩ বছরের কম বয়সী বাচ্চার জন্য ফ্যামিলি অ্যাকাউন্ট সেটআপ করতে পারেন। গুগল অ্যাকাউন্টের সাথে ফ্যামিলি লিংক দ্বারা এটি পরিচালিত হয়৷ এর মাধ্যমে বাচ্চারা কীভাবে অ্যাপটি ব্যবহার করে তা পিতামাতা পরিচালনা করতে পারে। ফ্যামিলি অ্যাকাউন্ট মূলত ইউটিউবের সামগ্রী সেটিংস এবং সবকিছুর নিয়ন্ত্রণের অ্যাক্সেস অভিভাবকদের দিয়ে থাকে। যেমন- সন্তান কোন ধরনের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে পারে, অ্যাপে কতক্ষণ সময় ব্যয় করতে পারে সবকিছুই অভিভাবক পরিচালনা করতে পারে।

ধাপ ২- রেস্ট্রিকশেন মোড চালু করা

এটি মূলত অনুপযুক্ত ভিডিও ফিল্টার করতে সাহায্য করে। তবে প্ল্যাটফর্মে ভিডিও অনেক বেশি হওয়ার কারণে এটি ১০০% কার্যকর নয়। এই বৈশিষ্ট্যটি চালু করতে প্রথমে ইউটিউবের ‘সেটিংস’-এ যেতে হবে। তারপর স্ক্রিনের নীচে ড্রপ ডাউন মেনুতে ক্লিক করতে হবে এবং ‘রেস্ট্রিকশেন মোড: অন’ নির্বাচন করুন।

ধাপ ৩- কাস্টম পাসওয়ার্ড তৈরি করা

আপনি একটি কাস্টম পাসওয়ার্ড সেট আপ করতে পারেন যাতে আপনার সন্তান আপনার ফ্যামিলি অ্যাকাউন্টের অ্যাক্সেস নিতে না পারে। এরজন্য প্রথমে লক আইকনে চাপুন এবং ‘আমার নিজের পাসকোড সেট করুন’ নির্বাচন করুন।

ইউটিউবে কাস্টম পাসওয়ার্ড তৈরি করার পৃষ্ঠা, যেখানে নিরাপত্তার জন্য পাসওয়ার্ড কাস্টমাইজ করার প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

ইউটিউব: শিশুদের জন্য নিরাপত্তা বাড়াতে কাস্টম পাসওয়ার্ডের গুরুত্ব। | ছবি: সংগৃহীত।

ধাপ ৪- ভিডিওর প্রাইভেসি নিশ্চিত করুন

যদি আপনার সন্তান ইউটিউবে তাদের নিজস্ব ভিডিও পোস্ট করে, তাহলে আপনি তাদের আপলোড করা ভিডিওর প্রাইভেসি নিশ্চিত করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার সন্তানের সাথে কথা বলে নিতে পারেন। এজন্য আপনাকে ‘লাইব্রেরি’ অপশনে যেতে হবে তারপর ‘আপনার ভিডিও’ নির্বাচন করতে হবে। সেখান থেকে আপনি নিম্নলিখিত বিকল্পগুলি থেকে অপশন সেট করতে পারেন:

পাবলিক: যাদের ইউটিউবে অ্যাকাউন্ট নেই তারা সহ সবাই ভিডিওটি দেখতে পারবে৷

ব্যক্তিগত : শুধুমাত্র নির্ধারিত ব্যক্তিরা দেখতে পারবে।

তালিকাভুক্ত নয়: এটি ভিডিওটিকে ব্যক্তিগত করে তোলে যাতে ভিডিওটির সরাসরি লিঙ্ক না থাকলে কেউ এটি দেখতে না পারে৷

ইউটিউবে ভিডিওর প্রাইভেসি নিশ্চিত করার পৃষ্ঠা, যেখানে প্রাইভেসি সেটিংস সম্বন্ধিত তথ্য প্রদর্শিত হয়েছে।

ইউটিউব: ভিডিও প্রাইভেসি নিশ্চিত করতে সচেতনতা বৃদ্ধি। | ছবি: সংগৃহীত।

ধাপ ৫- অটো-প্লে

অটো-প্লে একটি শেষ হওয়ার পরে ভিডিওগুলিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালানো বন্ধ করে দেয়। এটি আপনার সন্তানকে অ্যাপের দ্বারা প্রস্তাবিত ভিডিওগুলি দেখা থেকে বিরত করবে৷ এটি চালু করতে, যেকোনো ভিডিওর ওয়াচ স্ক্রিনে যান। তারপর অটো-প্লে চালু করুন।

ধাপ ৬- প্লে-লিস্ট তৈরি করুন

আপনার সন্তান যে ভিডিওগুলো দেখতে পারে তা নির্দিষ্ট করতে আপনি ইউটিউবে প্লেলিস্ট তৈরি করতে পারেন।সন্তান ভিডিও দেখার আগে সেগুলি উপযুক্ত কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তারপর প্লেলিস্টে তৈরি করতে হবে। একটি প্লেলিস্টে একটি ভিডিও যুক্ত করতে আপনি যে ভিডিওটি যোগ করতে চান তার নীচে ‘সংরক্ষণ করুন’ নির্বাচন করুন। আপনি যে প্লে-লিস্টটি যোগ করতে চান সেটি নির্বাচন করুন বা ‘নতুন প্লে-লিস্ট তৈরি করুন’ বেছে নিন।

ইউটিউব কিডস

ইউটিউব কিডস হলো ইউটিউবের তৈরি একটি আলাদা অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট যা মূলত শিশুদের কথা বিবেচনা করে তৈরি করা হয়েছে। এই অ্যাপ অনুপযুক্ত কোনো ভিডিও , এড রোধ করতে সাহায্য করে এবং নানা ধরনের ফিল্টার, বিধিনিষেধ অফার করে। সন্তানের বয়সের উপর নির্ভর করে আপনি সেটিংস চালু করতে পারেন৷ এই অ্যাপে তিনটি বয়স-ভিত্তিক সেটিংস রয়েছে:

ইউটিউব কিডস অ্যাপের হোমপেজ, যেখানে শিশুদের জন্য উপযুক্ত কনটেন্ট প্রদর্শিত হয়েছে।

ইউটিউব: শিশুদের জন্য নিরাপদ কনটেন্টের প্ল্যাটফর্ম। | ছবি: সংগৃহীত।

  • প্রিস্কুল- বয়স ৪ অথবা তার কম
  • ছোট- বয়স ৫-৮ বছর
  • একটু বড়- বয়স ৯-১২ বছর

শুধু তাই নয়, আপনি একাধিক সন্তানের জন্য পৃথক ব্যবহারকারী প্রোফাইল তৈরি করতে পারেন। যদিও প্ল্যাটফর্মটি প্রাপ্তবয়স্কদের বিষয়বস্তু থেকে বিরত রাখতে বিভিন্ন ফিল্টার ব্যবহার করে, কিন্তু এগুলো সর্বদা ১০০% কার্যকর হয় না। তাই আপনার সন্তান যখন ভিডিও দেখছে তা তার জন্য উপযুক্ত কিনা সেবিষয় নিশ্চিত করার জন্য অভিভাবকদের তত্ত্বাবধান করা উচিত।

যেহেতু ইউটিউব কিডস একটি ফ্রি অ্যাপ, অভিভাবক চাইলে বাচ্চাদের জন্য এই অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। আবার এই আর্টিকেলে আলোচনাকৃত ৬টি ফিচার ব্যবহার করেও খুব সহজেই ইউটিউবকে বাচ্চাদের জন্য উপযোগী করে তোলা যায়।

“তথ্যসূত্র”

 

ঘরে বসেই স্কিল ডেভেলপমেন্টের সুযোগ দিবে এই ৫টি ওয়েবসাইট

Previous article

বাংলাদেশ সরকার কেন ক্রিপ্টোকারেন্সিতে অনিচ্ছুক?

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *