গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আয়শা মারিয়া
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বিজনেস কার্ডের মাধ্যমে যতটা না মানুষকে আকর্ষিত করা সম্ভব অন্য কোনো মাধ্যমে তা এতো সহজে সম্ভব নয়। প্রফেশনাল ব্যক্তি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম ও যোগাযোগের তথ্য উল্লেখ করা থাকে ব্যবসায়িক কার্ড বা ভিজিটিং কার্ডে যার দ্বারা সেবা গ্রহীতারা বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি অফিস আদালতের কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, ব্যবসায়ি ও অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ব্যক্তিবর্গের পদবি, ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার খুব সহজেই জানতে পারে।
কেন আপনি ব্যবসায়িক কার্ড প্রিন্টের ব্যবসা শুরু করতে পারেন?
বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত মার্কেটিং কলা-কৌশলের মধ্যে বিজনেস কার্ড অন্যতম একটি কৌশল এবং এই ব্যবসাটিতে লাভ এর পরিমান খুব একটা মন্দ নয়। একজন উদ্যোক্তা ভিজিটিং কার্ড প্রিন্টের ব্যবসাটি শুরু করে সহজেই স্বাবলম্বী হতে পারেন। বর্তমানে এটি লাভজন একটি ব্যবসা হিসেবে শিক্ষিত ও অর্ধ- শিক্ষিত যুবকদের নিকট জনপ্রিয়তা লাভ করছে। কম্পিউটারের উপর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা এবং স্বল্প মূলধন নিয়ে গ্রাহকদের চাহিদার নিরিখে ব্যবসাটি পরিচালনা করা যেতে পারে।
এই ব্যবসাটি শুরু করতে একজন উদ্যোক্তাকে আনুমানিক ১০০০০০ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে এবং এখান থেকে আপনি মাসিক ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন।
কী ধরণের আইডি কার্ড প্রিন্টার দরকার?
এই ব্যবসাটি শুরু করার পূর্বে কিছু বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যেমন- কোন ধরনের কার্ড প্রিন্ট করানো হবে। কারণ একেক ধরনের কার্ড প্রিন্ট করার জন্য একেকরকম প্রিন্টিং মেশিন ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সিঙ্গেল সাইড আইডি প্রিন্টারে আইডি কার্ড/ ভিজিটিংকার্ড এর শুধুমাত্র একপাশ প্রিন্টিং করা হয়। ডাবল সাইড আইডি প্রিন্টার দিয়ে আইডি কার্ডের দুই পাশে প্রিন্ট করা হয় । পিভিসি কার্ড মেশিন দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কার্ড যেমন- স্টুডেন্ট আইডি কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, সিআর কার্ড এবং মাল্টিফাংশনাল ব্যাজের জন্য চৌম্বকীয় স্ট্রিপ যুক্ত করার কাজ করা হয়। পিভিসি কার্ড সাধারণত প্লাস্টিক কার্ড নামে বেশি পরিচিত। এছাড়াও রয়েছে রি-ট্রান্সফার কার্ড মেশিন ব্যবহার করে প্রথমে ডাটাগুলো একটি পাতলা স্বচ্ছ সাবস্ট্রেটে প্রিন্ট করে পরবর্তিতে তাপ প্রয়োগ করে কার্ডের উপরে প্রিন্ট করা হয়। এই ধরণের টেকনোলজি ব্যবহার করে পিভিসি বা পলিকার্বোনেটের কার্ডও তৈরি করা যায় এবং এম্বোসিং আইডি কার্ড প্রিন্টার দিয়ে প্রক্সিমিটি কার্ড ও স্মার্ট কার্ড তৈরি করা যায়।
বাংলাদেশে আইডি কার্ড প্রিন্টারের দাম কত?
বাংলাদেশে আইডি কার্ড প্রিন্টারের দাম এর ধরণ, ব্র্যান্ড, মডেল, প্রযুক্তি, গুণমান, ইত্যাদির ভিত্তিতে কমপক্ষে ৭০,০০০ টাকা থেকে ৭৫,০০০ টাকা খরচ করতে হবে যা একটি সিঙ্গেল সাইড আইডি প্রিন্টার। বাংলাদেশে আইডি কার্ড প্রিন্টার কিনতে অন্যদিকে ডাবল সাইড আইডি প্রিন্টার কেনার জন্য সর্বনিম্ন ১০০,০০০ টাকার বেশি খরচ করতে হবে।
বাংলাদেশের সেরা আইডি কার্ড প্রিন্টার এর মূল্য তালিকা, সেপ্টেম্বর ২০২৪-
সেপ্টেম্বর ২০২৪ এ বাংলাদেশের সেরা আইডি কার্ড প্রিন্টার এর তালিকা দেওয়া হল।এখানে, বিডি স্টলের আইডি কার্ড প্রিন্টার ক্রেতাদের আগ্রহের ভিত্তিতে এই সেরা আইডি কার্ড প্রিন্টার এর তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
বিজনেস কার্ডগুলো বানাতে যেসব দিকে শুরুতে লক্ষ রাখতে হবে-
বিজনেস কার্ড মুদ্রণের জন্য বেশ কিছু দিক লক্ষ রাখতে হবে। বিশেষ করে কার্ডগুলি দীর্ঘ সময়ের জন্য অক্ষত রাখতে মোটা কাগজে মুদ্রিত হয়। এগুলো অবশ্যই আর্দ্রতা প্রতিরোধী হতে হবে, যে পেইন্টগুলি হাত নোংরা করে বা ভিজে গেলে ছড়িয়ে পড়ে সেগুলো অগ্রহণযোগ্য হবে। কারণ মুদ্রণের উচ্চ গুণমান ব্যবসায়িক কার্ডের মাধ্যমে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা প্রফেশনাল মানুষগুলির পরিচয় ও দক্ষতা জানতে আরো আগ্রহী করে তুলতে পারে।
সবচেয়ে বেশি যে বিজনেস কার্ডটি ব্যবহার করা হয় তার আকার হলো ৮৫ মি.মি. বাই ৫৫ মি.মি অথবা ৩.৫ ইঞ্চি বাই ২ ইঞ্চি। এর থেকে বড় আকারের ও কার্ড হয়ে থাকে। তবে কার্ডের সাধারণ মান বজায় রেখে তূলনামূলক ছোট করে তৈরি করাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ অপ্রচলিত আকৃতির কার্ড শুধু আপনার খরচই বাড়িয়ে দিবে। কোম্পানির লোগো বা নামের জন্য সুন্দর ফন্ট নির্বাচন করাও গুরুত্বপূর্ণ। ফন্ট এমন হতে হবে যেন সহজেই পড়া সম্ভব হয়। লক্ষ রাখতে হবে কার্ডের ফন্ট যেন ৮ এর কম না হয়। এছাড়াও সঠিক স্থানে সঠিক তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ।
স্মার্ট ভিজিটিং কার্ড বা NFC business card:
NFC (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) হল একটি বেতার, স্বল্প-পরিসরের যোগাযোগ প্রযুক্তি। এনএফসি-সক্ষম ডিভাইসগুলি কাছাকাছি থাকলে এগুলি ডেটা আদান-প্রদানে সুবিধা দেয়৷ কার্ডের মধ্যে এমবেডেড চিপ তথ্য আদান-প্রদানকে ট্রিগার করে।
স্থানান্তরের সুবিধার্থে ডিভাইস বা রিডার 4-ইঞ্চি পরিসরে হওয়া উচিত। এনএফসি বিজনেস কার্ডেরও স্থানান্তরের জন্য ওয়াইফাই সংযোগের প্রয়োজন নেই; শুধু এটির কাছাকাছি আপনার ডিভাইসটি অবস্থান করতে হবে। ফোনের ক্ষেত্রে এর পেছনে কার্ডটিকে স্পর্শ করালে ফোনে কার্ড হোল্ডারের সকল কন্টাক্ট ইনফরমেশন এসে পড়বে। এটি একটি কাস্টমাইজেবল ইন্ট্রো কার্ড। চাইলেই এ কার্ড টির সকল কন্টাক্ট ইনফরমেশন আপনি এডিট করতে পারবেন যেমন – ছবি সংযুক্ত করা বা ডিলিট করা, সকল সোশ্যাল মিডিয়ার লিংক, নিজের এড্রেস থেকে শুরু করে সকল ডিটেলস এই ইন্ট্রো কার্ডে এড করতে পারবেন।
বাজারের চাহিদা এবং পছন্দের অগ্রাধিকারের উপর নির্ভর করে এনএফসি কার্ড এবং বিজনেস কার্ড প্রিন্টিং ব্যবসাগুলি স্বতন্ত্র সুবিধাগুলি প্রদান করে । যদিও প্রিন্টিং বিজনেস কার্ড ইতোমধ্যে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত শিল্প যার সামঞ্জস্যপূর্ণ চাহিদা রয়েছে। NFC কার্ডগুলি একটি নতুন এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত বিকল্পের প্রতিনিধিত্ব করে।
এনএফসি কার্ড প্রযুক্তি এবং উৎপাদনে করা প্রাথমিক বিনিয়োগ, প্রথাগত ব্যবসায়িক কার্ড মুদ্রণের চেয়ে বেশি হতে পারে। তবে সবচেয়ে কার্যকর এবং লাভজনক অবস্থা নির্ভর করবে বাজার পরিস্থিতি, সহজলভ্য পুঁজি এবং উদ্যোক্তার কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির উপর।
কোন ব্যবসা বেশি লাভ জনক? NFC Card Business অথবা মুদ্রিত ব্যবসায়িক কার্ড?
উত্তর হবে এনএফসি কার্ড বিজনেস। এতে কম বিনিয়োগ এবং উচ্চ মুনাফা থাকবে এবং এটি আপনার অর্থ সাশ্রয় করবে। যদি আপনার প্রতিষ্ঠানের লোকেরা তাদের বিশদ বিবরণ বা পদবি পরিবর্তন করে, আপনি কার্ডগুলি পুনরায় মুদ্রণ না করেই তথ্য আপডেট করতে পারেন। একই সময়ে যদি কেউ সংস্থা ছেড়ে যায় এবং তার স্থলে অন্য একজন ব্যক্তি যুক্ত হলে বিদ্যমান কার্ড আপডেট করে ব্যবহার করতে পারবেন। এনএফসি কার্ড পুনরায় ব্যবহারযোগ্য এবং সম্পাদনা করা সহজ হয়।
Comments