বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৩১, ২০২৪
এন্ট্রেপ্রেনিউরশিপবিজ-মার্কেটিং

বিলিওনিয়ার জেফ বেজোসের সফলতার গল্প: গ্যারেজ থেকে বিশ্বজয়ের কাহিনী

0

গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আয়েশা আক্তার

‘অনলাইন শপিং’ শব্দটার সাথে আমরা সকলেই কমবেশি পরিচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখে তা কিনতে ইচ্ছে হয় নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিল। আর যে মানুষের জন্য আজ অনলাইন শপিং এতো জনপ্রিয় হয়েছে , তিনি হলেন জেফ বেজোস। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স কোম্পানি আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন জেফ বেজোস। ম্যাকডোনাল্ডসে বার্গার বানানোর কাজ থেকে শুরু করে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী হওয়া বেজোসের জীবন আমাদেরকে স্বপ্ন দেখতে এবং তার পেছনে ছুটতে শেখায়। চলুন জেনে নেয়া যাক অদম্য অসীম সাহস নিয়ে নিজের স্বপ্নের পেছনে ছুটতে থাকা বেজোসের জীবনের গল্প। 

শৈশবের গল্প 

১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোতে বেজোস জন্মগ্রহণ করেন। জেফের মায়ের নাম জ্যাকলিন গিস জরগেনসিন এবং পিতার নাম টেড জরগেনসিন। বিয়ের বছরখানেক পরেই জেফের বাবা-মার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।  জেফের বয়স যখন চার বছর, তখন তাঁর মা একজন কিউবান অভিবাসী মাইক বেজোসকে বিয়ে করেন। ‘বেজোস’ নামটি তিনি সেখান থেকেই পেয়েছেন। ছোটোবেলা থেকেই জেফ বিজ্ঞানের প্রতি বেশ আগ্রহী ছিলেন। শৈশবে জেফ তাঁদের বাসার গ্যারেজকে একটি ল্যাবরেটরি বানিয়ে ফেলেছিলেন। অল্প বয়সে কম্পিউটারের প্রতি তাঁর আগ্রহ তৈরীতে অবদান রেখেছিলো জেফের দাদু লরেন্স প্রিস্টন। 

নতুন সূচনা 

১৯৮৬ সালে জেফ প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক পাশ করেন। এসময় তিনি ইন্টেল ও বেল ল্যাব থেকে চাকরির প্রস্তাব পেলেও তা প্রত্যাখান করে ‘ফিটেল’ নামক একটি টেলিকমিউনিকেশন স্টার্ট আপে যোগদান করেন। এরপর তিনি ওয়াল স্ট্রিটে D.E. Shaw নামের একটা ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মে যোগদান করেন।  ১৯৯০ সালে তিনি এই ফার্মের ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে পদন্নোতি লাভ করেন। এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময়েই তিনি তাঁর স্ত্রী ম্যাকেনজির সাথে পরিচিত হন। এই প্রতিষ্ঠানে থাকাকালীন তিনি ইন্টারনেট ভিত্তিক কিছু করার চিন্তা শুরু করেন। এই ইচ্ছা থেকেই তিনি ১৯৯৪ সালে চাকরি ছেড়ে সিয়াটলে চলে যান।

আমাজন.কম এর সূচনা 

অ্যামাজন চালু করা: জেফ বেজোসের গ্রাউন্ডব্রেকিং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের প্রথম দিনগুলিকে চিত্রিত করা যা অনলাইন কেনাকাটায় বিপ্লব ঘটিয়েছে।

আমাজনের লঞ্চ: একটি ই-কমার্স বিপ্লবের সূচনা৷ | ছবি: সংগৃহীত

চাকরি ছাড়ার পর জেফ একটি অনলাইন বুকশপ তৈরির পরিকল্পনা করেন। ১৯৯৪ সালের ৫ জুলাই জেফ তাঁর বাড়ির গ্যারাজে আমাজন প্রতিষ্ঠা করেন। এসময় এটি শুধু বই বিক্রির ওয়েবসাইট ছিল। ১৯৯৫ সালের ১৬ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে জেফ আমাজন ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন। কোনো রকম বিজ্ঞাপন ছাড়াই প্রথম ৩০ দিনে আমাজন প্রায় ৪৫টি দেশে বই বিক্রি করে। প্রথম দুই মাসের মধ্যেই আমাজনের সাপ্তাহিক বিক্রয়ের পরিমান ২০,০০০ ডলারে পৌঁছায়। এই সাফল্য বেজোসের স্বপ্নাতীত ছিলো।

পরবর্তীতে বেজোস বই ছাড়াও একাধিক পণ্য ওয়েবসাইটে যুক্ত করেন। শুধু তাই নয়, ২০০৭ সালে আমাজন তাদের ডিজিটাল বই পড়ার জন্য “Kindle” নামক ইবুক রিডার বিক্রি শুরু করে। এই ইবুক রিডারের মাধ্যমে মানুষ বই পড়ার পাশাপাশি বই কেনা, ডাউনলোড, ও স্টোর করার সুবিধা পায়। একই বছর বেজোস ‘Blue Origin’ এ তাঁর বিনিয়োগের ঘোষনা দেন। যার ফলে গ্রাহকরা অর্থের বিনিময়ে মহাকাশ ভ্রমণের সুযোগ পাবে। ব র্তমানে আমাজনের নেট মূল্য ১ ৯৬ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার। 

সফলতার সূত্র 

জেফ বেজোসের সফলতার মূল কারণ তাঁর অদম্য সাহস এবং নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার তীব্র ইচ্ছা। মোটা অঙ্কের বেতন পাওয়ার পরও তিনি D.E. Shaw এর চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। যদি তিনি সাহস করে এই সিদ্ধান্ত না নিতে পারতেন, তবে আজ তিনি বিশ্বের শীর্ষ দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি হতে পারতেন না। তাঁর সফলতার আরো কারণ হিসেবে বলা যায় নেতৃত্ব দানের মানসিকতা। আমাজনে তিনি দুটো নীতি অনুসরণ করেন। বেজোসের প্রথম নীতি হলো ‘টু পিজ্জা রুল’। এর মানে হচ্ছে দুটি পিজ্জা খাওয়ার পরিমাণ মানুষ নিয়েই মিটিং হবে। অর্থাৎ  মিটিংয়ে খুব অল্প কয়জন উপস্থিত থাকবে। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন ছোট টিম অনেক বেশি দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে। 

তাঁর দ্বিতীয় নীতি হলো ‘না বলতে শেখা’। তিনি নিজ তার কোম্পানি আমাজনে এমন পরিবেশের সৃষ্টি করেছেন যে তার কর্মকর্তারা চাইলেই কোনো বিষয়ে নিজেদের মতামত রাখতে পারে এবং তাঁর কোনো আইডিয়া পছন্দ না হলে তাঁকে জানাতে পারে। 

সাফল্যের চাবিকাঠি: নীতি ও কৌশল সম্পর্কে জেফ বেজোসের অন্তর্দৃষ্টি যা তার যাত্রাকে অগ্রণী ব্যবসায়িক ম্যাগনেট হওয়ার দিকে পরিচালিত করেছিল।

জেফ বেজোস: ব্যবসায় সাফল্যের চাবিকাঠি। | ছবি: সংগৃহীত

কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবসায় ছাড়া কোনো মানুষ সফল হতে পারে না। ছাত্রাবস্থায় তিনি জীবনের প্রথম চাকরি করেছিলেন ম্যাকডোনাল্ডসে। আর বর্তমানে তিনি বিশ্ববিখ্যাত পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক। একই সাথে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কর্মাস কোম্পানি আমাজনের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। তাঁর এই সফলতার গল্প অনেক তরুণকে স্বপ্ন দেখতে এবং ভবিষ্যতে সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে। 

তথ্যসূত্র

আপনি যেভাবে আইডি কার্ড বা ব্যবসায়িক কার্ড প্রিন্টিং ব্যবসা শুরু করতে পারেন

Previous article

ড. ইউনুসের নতুন বিশ্বঃ এ ওয়ার্ল্ড অফ থ্রি জিরোস

Next article

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পপুলার পোস্ট'স