মানি ম্যানেজমেন্ট এন্ড পার্সোনাল ফিনান্স

শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরী অর্থ ব্যবস্থাপনা

0
ছবি: সংগৃহীত
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা ইসফাকুল কবির

টাকা পয়সা আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তবে এটি বেশ জটিল বিষয় বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য। কিভাবে অর্থকে কাজে লাগানো যায় এবং ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করা যায়, তা প্রতিটি শিক্ষার্থীরই জানা উচিত।যেন পরবর্তীতে এটি তাদের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে না পারে। টাকা নিয়ে এই হিসাব-নিকাশকে বইয়ের ভাষায় বলা হয়ে থাকে অর্থ ব্যবস্থাপনা বা মানি ম্যানেজমেন্ট।

এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষ তার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ পূরণ করে বিভিন্ন পরিকল্পনা এবং অর্থের লাগাম টানার মাধ্যমে। তবে এই ব্যপারটা শুনতে যতটা সহজ মনে হয় বাস্তব জীবনে অনেকে নিজের  সঠিক অর্থ ব্যবস্থাপনা করতে হিমশিম খান। এর মূল কারণ বেশির ভাগ মানুষ আসলে জানেনা অর্থ ব্যবস্থাপনা আসলে কি। আবার অনেক পরিবারে বাবা-মা এই ব্যপারটা বুঝতে পারলেওতারা তাঁদের সন্তানদের তা শেখাতে পারেনা। এর কারণ তারা নিজেটাই এই ব্যাপারটার নিয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখেনা। 

অর্থ ব্যবস্থাপনা: ছাত্রজীবনে অর্থ ব্যবস্থাপনা এবং বাজেট পরিচালনার জন্য কার্যকর কৌশলগুলি কল্পনা করা।

ছাত্রজীবনে অর্থ ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর কৌশল। | ছবি: সংগৃহীত

অনেকে মনে করে টাকা জমানোই অর্থ ব্যবস্থাপনা। 

আবার আমাদের সমাজে এমন কিছু পরিবার আছে যারা ভাবে যে ছেলে-মেয়েদের সামনে অর্থ নিয়ে কথা বলা ঠিক নয়। তবে জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষা বলছে, যে পরিবারগুলি অর্থ বিষয়ে নিয়ে বেশি আলোচনা করে তাঁদের সন্তানরা অর্থ ব্যবস্থাপনায় বেশি পারদর্শী হয়। তাই আজ আমরা এমন কিছু অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে এমন কিছু টিপস বা পরামর্শ জানব যা ছাত্র জীবন থেকেই প্রয়গ করতে পারি। 

পরামর্শ ১- সবকিছুর জন্য বাজেট

এই যাত্রায় অর্থ ব্যবস্থাপনা শিখতে হলে প্রথমেই একজন শিক্ষার্থীকে পুরো মাসের আয়- ব্যয়ের  সম্পূর্ণ হিসাব রাখা শিখতে হবে। প্রতিমাসে কোন কোন খাতে টাকা খরচ হয় সে হিসাবের একটি বাজেট আগে থেকে তৈরি করতে হবে। বাজেটে বাড়ি ভাড়ার মতো বড় বিল থেকে একদম ছোট খরচ যেমন- চা খাবার টাকাও সংযুক্ত করতে হবে।। এর ফলে অর্থ ব্যয়ের একটি পরিষ্কার ধারনা পাওয়া যাবে যা আপনাকে আপনার ট্র্যাকে থাকতে সাহায্য করবে। এই বাজেটগুলি প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ সঞ্চয় করতে সাহায্য করবে। 

পরামর্শ ২- শিক্ষার্থীদের জন্য মূল্য ছাড়

অনেক সময় শুধুমাত্র শিক্ষার্থী হবার যোগ্যতায় আপনি বেশ কিছু জায়গায় মূল্য ছাড় পাবেন। যেমন খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে, বিভিন্ন মুভি থিয়েটারে, বিভিন্ন জীবন বিমায়, রেস্তরাঁ এবং শপিং কমপ্লেক্সে। এটি ছাত্রের জন্য একটি ভালো সুযোগ তাঁদের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার ক্ষেত্রে। তবে খেয়াল রাখবেন ১০% মূল্য ছাড়ের আশায় আপনি অপ্রয়োজনীয় জিনিসের উপর খরচ করে ফেলছেন নাতো? যদি এমনটা হয় তাহলে আপনার ৯০% টাকায় জলে যাবে। 

পরামর্শ  ৩- স্বয়ংক্রিয় বা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সঞ্চয় করুন

পরিবার থেকে পাওয়া টাকা কিংবা অন্য যেকোনো আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ আলাদাভাবে রেখে দিন।যেন এই নির্দিষ্ট অংশ টাকা আপনার কখনও ছিল না। এই কাজে ব্যাংক এর সাহায্য নিতে পারেন যেন তারা আপনার ২০% টাকা সঞ্চয় হিসাবে রেখে দেয়। অথবা এর জন্য আপনি মোবাইল ব্যাংকিং এর দ্বারস্থ হতে পারেন। 

পরামর্শ ৪- বাড়িতে রান্না করা খাবার খেতে অভ্যাস করুনএটা ঠিক যে মাঝে মাঝে আমার সবাই রেস্তরাঁয় খাবার খেয়ে থাকি তবে এটা নিয়মিত করলে মাস শেষে আর্থিক সমস্যায় পরতে পারেন। এর জন্য বাসায় রান্না করতে শিখুন। এতে খরচ কমবে এবং বাধীরে ধীরে আপনি ভালো রান্না করতে শিখে যাবেন ।

পরামর্শ ৫- অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের চেষ্টা 

অতিরিক্ত নগদ উপার্জনের উপায়গুলি সন্ধান করুন: শিক্ষার্থীদের আয় বাড়ানো এবং অর্থ ব্যবস্থাপনা উন্নত করার সুযোগগুলি অন্বেষণ করা।

অতিরিক্ত নগদ উপার্জনের সৃজনশীল উপায় আবিষ্কার করুন। | ছবি: সংগৃহীত

আপনার পড়াশোনায় বাধা না দিয়ে যতটা সম্ভব কাজ করুন। ছাত্র অবস্থায় এখন অনেক চাকরির সুযোগ আছে যা আপনি পড়াশোনার পাশাপাশি করতে পারবেন। যা আপনাকে আত্মনির্ভর করে তুলবে। এই কাজে বন্ধুরদের সাহায্য নিতে পারেন যারা আপনার মত অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করছে। বন্ধুদের নিয়ে ফুটপাতে একটি ছোট স্টল দিতে পারেন ফুচকা বা মোমোর, একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। তবে এমন কাজ না করতে চাইলে আপনি টিউশনি করাতে পারেন, বিভিন্ন পত্রিকার জন্য ঘরে বসে লিখা-লিখি করতে পারেন তাতে আপনার কিছু আয় হবে। 

পরামর্শ ৬- চাহিদা এবং প্রয়োজনের মধ্যে পার্থক্য 

চাহিদা এবং প্রয়োজন এই দুইটি বিষয়ের মধ্যে আপনাকে পার্থক্য বুঝতে হবে। তবেই আপনি আপনার টাকার অপচয় কমিয়ে আনতে পারবেন। যেমন ধরুন আপনার বাসা ভাড়া হল আপনার প্রয়োজন এছাড়া আপনি থাকতে পাড়বেন না। অন্য দিকে নেটফ্লিক্স বা স্পটিফাই এর মতো অ্যাপের বিল পরিশোধ করা আপানার চাহিদা যার বিকল্প আপনি বেছে নিতে পারবেন। তাই সবার জন্যই এই বিষয় দুটির পার্থক্য বোঝা যুক্তি সঙ্গত ব্যপার যা  অতিরিক্ত অর্থ খরচ থেকে আপনাকে বাচাবে। 

পরামর্শ ৭- ক্রেডিট কার্ডের সঠিক ব্যবহার

অনেক শিক্ষার্থী  ক্রেডিট কার্ডের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জানে না। তাই অনেক সময় তারা ঋণের খপ্পরে পরে যায়। এই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবতে হবে তাঁদের আসলেই এই কার্ডের প্রয়োজন আছে  কিনা এবং কোথায় তার প্রয়োগ করতে হবে। চাইলে ক্রেডিট কার্ডে নির্দিষ্ট টাকার অংকে বেধে দেওয়া যেতে পারে। এই ব্যপারে মা-বাবার সচেতন হতে হবে, বুঝতে হবে যে এই ছাত্র অবস্থায় চার সন্তানের ক্রেডিট কার্ড আসলেই লাগবে কিনা। যদি লাগে তবে তার সঠিক ব্যবহারটাও মা-বাবাকেই শিখাতে হবে। 

এছাড়াও আরো অনেক টিপস আছে যার মাধ্যমে একজন ছাত্র তার খরচ কিছুটা কমিয়ে আনতে পারে যেমন ছাত্ররা স্কলারশিপ বা বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারে। তবে উপরের টিপসগুলি মেনে চললে একজন ছাত্রের অর্থ ব্যবস্থাপনা করার দক্ষতা বাড়বে। ফলে সে অর্থ ব্যবস্থাপনায় আরও পারদর্শী হয়ে উঠবে। 

“তথ্যসূত্র”

ড. ইউনুসের নতুন বিশ্বঃ এ ওয়ার্ল্ড অফ থ্রি জিরোস

Previous article

ডিফিউশন ইনোভেশন থিওরী ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডিফিউশন ইনোভেশন থিওরী

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *