ইনফরমেশন টেকনোলজি

ডিফিউশন ইনোভেশন থিওরী ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডিফিউশন ইনোভেশন থিওরী

0
ছবি: সংগৃহীত
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আয়েশা আক্তার

একুশ শতকের অন্যতম বিস্ময়কর আবিষ্কার হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে মানুষ এই প্রযুক্তিকে গ্রহণ করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শিক্ষা, গবেষণাসহ বিভিন্ন দিকগুলোতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। মানুষ কিভাবে এতো অল্প সময়ের মধ্যে এই প্রযুক্তিকে গ্রহণ করেছে তা আমরা ডিফিউশন অব ইনোভেশন থিওরির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে পারি।

ডিফিউশন অব ইনোভেশন থিওরি কি? 

আমেরিকান বিজ্ঞানী এভারেট রজার্স ১৯৬২ সালে সর্বপ্রথম এই থিওরি সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে জানান। এই থিওরির মাধ্যমে কীভাবে ব্যবহারকারীদের মধ্যে কোনো নতুন ধারণা এবং প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়ে তা ব্যাখ্যা করা যায়। এই থিওরিতে পাঁচটি ধাপ রয়েছে যা ব্যাখ্যা করে কিভাবে মানুষ সময়ের সাথে কোনো নতুন প্রযুক্তি বা আবিষ্কার গ্রহণ করে । কিভাবে ধাপে ধাপে মানুষ কোনো নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করে চলুন জেনে নেয়া যাক-

উদ্ভাবন তত্ত্বের বিস্তৃতি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অন্যান্য প্রযুক্তি কীভাবে সমাজে ছড়িয়ে পড়ে তার একটি চাক্ষুষ উপস্থাপনা।

উদ্ভাবন তত্ত্বের বিস্তার এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর এর প্রভাব বোঝা। | ছবি: সংগৃহীত

উদ্ভাবক: এই দলটি এমন ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত যারা নতুন প্রযুক্তির প্রাথমিক গ্রহণকারী। তারা প্রায়শই ঝুঁকি গ্রহণকারী । বাজারে যেকোনো প্রযুক্তি সর্বপ্রথম এই স্তরের মানুষ ব্যবহার করে থাকেন।

প্রারম্ভিক গ্রহণকারী: এই গ্রুপটি এমন ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত যারা তাদের সামাজিক নেটওয়ার্কের মধ্যে সম্মানিত মতামত নেতা। তাদের একটি নতুন উদ্ভাবন গ্রহণ করা অন্যদের সিদ্ধান্তকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। 

প্রারম্ভিক সংখ্যাগরিষ্ঠ: এই দলটি মূলত প্রারম্ভিক গ্রহণকারীদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়। তারা পূর্ববর্তী গোষ্ঠীগুলির তুলনায় আরও সতর্ক কিন্তু শেষ পর্যন্ত নতুন উদ্ভাবনের সুবিধা ভোগ করার জন্য তারা রাজি হয়।

পরবর্তী সংখ্যাগরিষ্ঠ: এই দলটি নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করতে দ্বিধাগ্রস্ত এবং প্রায়ই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য উল্লেখযোগ্য সামাজিক চাপ বা উদ্ভাবনের সাফল্যের প্রমাণের প্রয়োজন হয়।

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী: এই দলটি সর্বশেষ একটি নতুন উদ্ভাবন গ্রহণ করে। তারা যেকোনো উদ্ভাবন তখনই গ্রহণ করে যখন এটি একটি প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে বা ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা(এআই) জনপ্রিয় হওয়ার কারণঃ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) দীর্ঘস্থায়ী সাফল্যের পিছনে কারণগুলি: AI এর ব্যাপক গ্রহণ এবং বৃদ্ধির চালিকাশক্তির মূল কারণগুলি অন্বেষণ করা৷

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এর স্থায়ী সাফল্যে অবদান রাখার মূল কারণগুলি। | ছবি: সংগৃহীত

ডিফিউশন অব ইনোভেশন থিওরির মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কিভাবে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু ব্যবহারকারীদের মধ্যে এআই ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। 

প্রথম কারণ হিসেবে আমরা এআই এর সহজলভ্যতার কথা বলতে পারি। এআই জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম কারণ হলো অন্যান্য প্রযুক্তির তুলনায় এআই এর প্রদানকৃত সুবিধা বেশি। এআই প্রযুক্তিগুলি দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দিকগুলোতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। যেমনঃ সিরি, অ্যালেক্সা এবং গুগল হোমের মতো এআই চালিত ব্যক্তিগত সহকারী থেকে শুরু করে, এআই চালিত সিস্টেম সবকিছুই আমাদের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে।  

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে আমরা বলতে পারি এআই ব্যবহারে বিশেষ প্রশিক্ষণ বা প্রযুক্তিগত জ্ঞানের সাহায্য লাগে না।  তাই, চ্যাটজিপিটি এর মতো এআই প্রযুক্তিগুলি মানুষ বেশ সহজে ব্যবহার করতে পারে। আর এই কারণে এআই মানুষের কাছে প্রতিনিয়ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

তৃতীয় কারণ হিসেবে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা কথা বলতে পারি। প্রযুক্তিতে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ এবং গণমাধ্যমগুলো এআই প্রযুক্তির প্রচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এআই সম্পর্কে তথ্যের বিস্তারকে সহজ করেছে। আর এই কারণেই মানুষ অল্প সময়ের মধ্যে এআই সম্পর্কে জানতে পেরেছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়ে এখনও জনমনে বেশ কিছু আশংকা রয়েছে। যেমন গোপনীয়তা সংক্রান্ত উদ্বেগ, নৈতিক বিবেচনা এবং চাকরি হারানোর ভয়ের মতো কিছু কারণে অনেকেই এই প্রযুক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর তাই নীতিনির্ধারকরা এআই গ্রহণকে আরো ব্যাপকভাবে বিস্তার করার জন্য কিছু কৌশল বাস্তবায়ন করতে পারেন। যেমন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি প্রদান, এআই গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করা এবং নৈতিক উদ্বেগগুলি সমাধান করা। 

ডিফিউশন অব ইনোভেশন থিওরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি বিস্তারের বিষয়টি বোঝার জন্য একটি মূল্যবান কাঠামো প্রদান করে। এআই গ্রহণকে প্রভাবিত করে এমন কারণগুলি চিহ্নিত করে, গবেষকরা এআই এর কার্যকর ও ন্যায়সঙ্গত ব্যবহারকে উন্নীত করার জন্য কৌশল তৈরি করতে পারেন। যেহেতু এআই বিভিন্ন শিল্পকে বিকশিত এবং রূপান্তরিত করে চলেছে, তাই নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা গুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের মাধ্যমে আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এর সর্বোচ্চ সুফল ভোগ করতে পারবো।

“তথ্যসূত্র”

শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরী অর্থ ব্যবস্থাপনা

Previous article

“কার রেন্টিং”- আগামীর সম্ভাবনাময় ব্যাবসাক্ষেত্র

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *