কারেন্সী

বর্তমান বিশ্বের শক্তিশালী ১০টি মুদ্রা

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আনিকা তায়্যিবা

যদি জানতে চাওয়া হয় পৃথিবীতে দেশ কয়টি? আপনি হয়তো খুব সহজে উত্তর দিবেন ১৯৫ টি। কিন্তু যদি বলা হয় পৃথিবিতে কতটি  স্বীকৃত মুদ্রা আছে? আপনি কি তার উত্তর দিতে পারবেন?

আদতে দেশের মতো মুদ্রার সংখ্যা এত নয়। কারণ একাধিক দেশই অভিন্ন মুদ্রার সাহায্যে লেনদেন করে থাকে। এই পর্যন্ত জাতিসংঘ ১৮০টি মুদ্রাকে বিশ্বব্যাপী আইনি স্বীকৃতি দেয়। তবে এত ধরনের মুদ্রার মাঝে সবগুলোর জনপ্রিয়তা বা মান সমান নয়। মুদ্রার মান মূলত নির্ভর করে একটি দেশের মুদ্রা দিয়ে কত পণ্য ও সেবা কেনা যায় এবং এর বিনিময়ে কত বিদেশি মুদ্রা পাওয়া যায় তাঁর উপর। চলুন জেনে নেয়া যাক বিশ্বের শীর্ষ ১০ শক্তিশালী মুদ্রা সম্পর্কে:

১. কুয়েতি দিনার

এই তালিকার শুরুতেই থাকবে কুয়েতে ব্যবহৃত মুদ্রার নাম, যা কুয়েতি দিনার নামে পরিচিত। কুয়েতি দিনার বিশ্বের সর্বোচ্চ মূল্যের মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃত। ১৯৬১ সালের ১ এপ্রিলে এটি চালু হয়। মূলত তখন থেকেই এই মুদ্রা সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। এই মুদ্রার প্রথম স্থান দখলের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। কুয়েতের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিশাল তেলের খনির সমারোহ এবং করমুক্ত ব্যবস্থা এই মুদ্রার চাহিদা বাড়িয়েছে।

কুয়েতি দিনারের ছবি, যেখানে মুদ্রার জটিল নকশা এবং উজ্জ্বল রঙ প্রদর্শিত হচ্ছে।

কুয়েতি দিনার: বিশ্বের শীর্ষ মূল্যবান মুদ্রা। | ছবি: সংগৃহীত।

২. বাহরাইনি দিনার:

তালিকায় থাকা দ্বিতীয়টি হলো বাহরাইনে ব্যবহৃত মুদ্রা। বাহরাইনি দিনার এই দেশের একমাত্র মুদ্রা। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের সাথে যুক্ত। পৃথিবীব্যাপী বাহরাইনের তেল রপ্তানির জন্য এই  মুদ্রার মুল্যমান অনেক। এই মুদ্রার প্রবর্তনের সময়কাল ৭ অক্টোবর ১৯৬৫ । 

বাহরাইনি দিনারের ছবি, যেখানে মুদ্রার নকশা ও বিশদ বৈশিষ্ট্য প্রদর্শিত হচ্ছে।

বাহরাইনি দিনার: গালফ অঞ্চলের অন্যতম মূল্যবান মুদ্রা, যা তার স্থিতিশীলতা ও উচ্চ বিনিময় মূল্যের জন্য পরিচিত। | ছবি: সংগৃহীত।

 ৩. ওমানি রিয়াল:

তালিকার তৃতীয় শক্তিশালী মুদ্রার স্থান দখল করে আছে ওমানের মুদ্রা। ওমানি রিয়াল ওমানের সরকারী মুদ্রা। অন্যান্য আরব দেশের মতো এটিও তেলের উপর নির্ভরশীল। এটি বিশ্বের তৃতীয় মূল্যবান মুদ্রা হিসেবে চিহ্নিত। এটি ১৯৭০ সাল থেকে ওমানে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

৪. জর্ডানের দিনার:

বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী মুদ্রা হিসেবে চিহ্নিত হলো জর্ডানের সরকারী মুদ্রা, জর্ডানিয়ান দিনার। এটি ১৯৫০ সাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। এর আগে জর্ডানে ব্যবহৃত হতো প্যালেস্টাইনি পাউন্ড। পরবর্তীতে  দেশে চালু হয় দিনার। জর্ডানের অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য ও স্থিতিশীল মুদ্রা বিনিময় হারের কারনে এই মুদ্রা বিশ্বজুরে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। 

৫. জিব্রালটার পাউন্ড:

তালিকার মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান করছে জিব্রালটারের মুদ্রা, জিব্রালটার পাউন্ড। এটির প্রবর্তনের তারিখ ১৮৭২ সালের কাছাকাছি সময়ে।

বাহরাইনি দিনার: গালফ অঞ্চলের অন্যতম মূল্যবান মুদ্রা, যা তার স্থিতিশীলতা ও উচ্চ বিনিময় মূল্যের জন্য পরিচিত।

বাহরাইনি দিনার: গালফ অঞ্চলের শীর্ষ মুদ্রা। | ছবি: সংগৃহীত।

 এই মুদ্রা ব্রিটিশ পাউন্ডের সমমূল্যের। জিব্রালটার পর্যটন ও ই-গেমিং শিল্পে সমৃদ্ধ এক দেশ। এর উপর ভিত্তি করেই দেশের মুদ্রা বেশ শক্তিশালী স্থানে অবস্থান করছে।

৬. ব্রিটিশ পাউন্ড :

যদিও ধারনা থাকতে পারে ব্রিটেনের সরকারী মুদ্রা ব্রিটিশ পাউন্ড বিশ্বের মধ্যে সব চাইতে শক্তিশালী। তবে এটি বিশ্বের ষষ্ঠ শক্তিশালী মুদ্রা। লন্ডনের আর্থিক কেন্দ্র এবং ব্রিটেনের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড এটির মূল্য বাড়িয়ে তুলেছে। এটি প্রবর্তনের সময়সীমা ৮০০ সাল। যা এর মাঝে সবচেয়ে প্রাচীন।

ব্রিটিশ পাউন্ডের ছবি, যেখানে মুদ্রার বিশদ নকশা ও বৈশিষ্ট্য প্রদর্শিত হচ্ছে।

ব্রিটিশ পাউন্ড: বিশ্বের প্রাচীনতম প্রচলিত মুদ্রা। | ছবি: সংগৃহীত।

৭. কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের ডলার: 

কেম্যান ডলার শুধু কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে ব্যবহৃত হয় এবং এটি জিব্রালটারের সাথে সমমূল্যের। তাই তালিকার বেশ উপরেই স্থান পেয়েছে এটি। এই মুদ্রা প্রবর্তনের তারিখ ১৯৭২ সাল। 

৮. সুইস ফ্রাঁ: 

সুইস ফ্রাঁ সুইজারল্যান্ড ও লিচেনস্টাইনের মুদ্রা। সুইজারল্যান্ডের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এই মুদ্রার মূল্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। এছাড়াও ধনী দেশ হওয়ার ফলে এই দেশের মুদ্রামান বেশি। ১৮৫০ সালের ৭ মে এই মুদ্রা চালু হয়।

৯. ইউরো

ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্যবহৃত মুদ্রার নাম ইউরো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের  ২০টি দেশ এই মুদ্রা ব্যবহার করে থাকে। তাই এটি তালিকার নবম অবস্থানে। তবে এই মুদ্রা দ্বিতীয় বৃহত্তম রিজার্ভ মুদ্রা এবং বাণিজ্যে ব্যবহৃত দ্বিতীয় প্রধান মুদ্রা।  ১৯৯৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই মুদ্রা ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

ইউরোর ছবি, যেখানে ইউরোপীয় মুদ্রার নকশা ও বৈশিষ্ট্য প্রদর্শিত হচ্ছে।

ইউরো: ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম প্রধান মুদ্রা। | ছবি: সংগৃহীত।

১০. মার্কিন ডলার:

মার্কিন ডলার বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত মুদ্রা, যা বিশ্বের প্রধান রিজার্ভ মুদ্রা। তবে এটি মুদ্রা শক্তির দিক থেকে দশম স্থানে রয়েছে। ১৭৯২  সালের ২ এপ্রিল থেকে এই মুদ্রা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যেকোনো দেশে গেলে এই মুদ্রা থাকলে লেনদেন সহজ হয়।

মার্কিন ডলারটির ছবি, যেখানে মুদ্রার নকশা এবং বৈশিষ্ট্যগুলি স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।

মার্কিন ডলার: বিশ্বের সবচেয়ে ব্যবহৃত মুদ্রা। | ছবি: সংগৃহীত।

বিশ্বের শীর্ষ মুদ্রাগুলো মূলত কিভাবে অর্থনৈতিক ক্ষমতা ও স্থিতিশীলতা মুদ্রার মূল্য নির্ধারণে কাজ করে তা দৃশ্যমান করে। মুদ্রার মূল্যায়ন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক  বিশেষ ভূমিকা রাখে। বিশ্বের শীর্ষ শক্তিশালী মুদ্রাগুলোর অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট এই তালিকায় থাকা দেশগুলোর বৈশ্বিক বাণিজ্যের গুরুত্বকেও প্রমাণ করে।

“তথ্যসূত্র”

মোবাইল কন্টেন্ট ক্রিয়েশনে আপনি যে ৫টি গ্যাজেট ব্যবহার করতে পারেন

Previous article

জিম্বাবুয়ের মুদ্রার এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *