স্কিল এন্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট

ঘরে বসেই স্কিল ডেভেলপমেন্টের সুযোগ দিবে এই ৫টি ওয়েবসাইট

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আয়েশা আক্তার

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায়ই একটি কথা শুনে থাকে যে, ‘সিজিপিএ ম্যাটার করে না’। বিশেষ করে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা এই কথা খুব বেশি শুনে থাকে। আসলে বাস্তবতা কিন্তু বেশ ভিন্ন। বাস্তবতা হলো- ‘সিজিপিএ তখনই ম্যাটার করে না যদি আপনি দক্ষ হন’। শুধু তাই নয়, অনেক সময় একাডেমিক রেজাল্ট ভালো হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা স্কিল ডেভেলপ না করার কারণে ভালো পজিশনে চাকরি করতে পারে না কিংবা প্রমোশন পায় না। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ভালো চাকরি কিংবা প্রমোশনের জন্য স্কিল ডেভেলপ করা অত্যন্ত জরুরি। কমিউনিকেশন, প্রেজেন্টেশন, লিডারশীপ, ক্রিটিক্যাল থিংকিং এর মতো স্কিল  ডেভেলপ করতে পারলে কর্মক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করা বেশ সহজ হয়। স্কিলডেভেলপমেন্ট কি এবং কোন ধরনের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে আমরা সহজেই স্কিল ডেভেলপ করতে পারবো এবিষয়ে আজ বিস্তারিত জানবো।

স্কিল ডেভেলপমেন্ট ওয়েবসাইট বলতে কি বুঝায়?

স্কিল ডেভেলপমেন্ট বলতে মূলত সুনির্দিষ্ট কোনো দক্ষতা উন্নত বা নতুন দক্ষতা অর্জন করার প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়। এটি মূলত একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন স্কিল শিখে থাকি। কর্মজীবনে স্কিল ডেভেলপমেন্ট সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন-

আপস্কিলিং: বর্তমানে আপনি যে পজিশনে চাকরি করছেন, তার জন্য নিজের স্কিল উন্নত করা।

ক্রস-স্কিলিং: বর্তমানে আপনি যে পজিশনে চাকরি করছেন, তার জন্য নতুন কিছু স্কিল আয়ত্ত করা।

রিস্কিলিং: নতুন কিছু স্কিল আয়ত্ত করা, যাতে আপনি অন্যকোনো পজিশনে চাকরি করতে পারেন।

তবে সবসময় কর্মজীবনে ভালো করার জন্য স্কিল ডেভেলপমেন্ট করতে হবে, বিষয়টা এমন নয়। স্টুডেন্ট অবস্থায় ভালো রেজাল্ট করার জন্য কিংবা নতুন কোম্পানিতে নতুন পজিশনে চাকরি করার জন্য আবার ব্যক্তিগত কারণেও স্কিল ডেভেলপমেন্ট করা হয়।

স্কিল ডেভেলপমেন্ট ওয়েবসাইট

জীবনে চলার পথে আমাদের প্রতিনিয়ত নানা ধরনের স্কিল আয়ত্ত করতে হয়। তীব্র প্রতিযোগিতামূলক এই বিশ্বে টিকে থাকার জন্য ছাত্রজীবন থেকেই কিছু স্কিল আমাদের আয়ত্ত করা উচিত। যেমন- লিডারশিপ স্কিল, সফট স্কিল, ক্রিটিক্যাল থিংকিং, ক্রিয়েটিভ স্কিল, টেকনিক্যাল স্কিল ইত্যাদি। এইধরনের স্কিল শেখার জন্য কিছু জনপ্রিয় ওয়েবসাইট রয়েছে। চলুন এরকম ৫টি স্কিল ডেভেলপমেন্ট ওয়েবসাইট নিয়ে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ইউডাসিটি (Udacity)

এটি মূলত একটি আমেরিকান অনলাইনভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যা প্রযুক্তি, ব্যবসা এবং ডেটা সায়েন্স নিয়ে বিভিন্ন কোর্স এবং ন্যানোডিগ্রী অফার করে। ২০১২ সালে সেবাস্টিয়ান থ্রুন, ডেভিড স্ট্যাভেনস এবং মাইক সোকোলস্কি জনপ্রিয় এই প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। এই ওয়েবসাইট প্রফেশনালদের জন্য বেশ কার্যকর।

ইউডাসিটি ওয়েবসাইটের হোমপেজ, যেখানে স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য বিভিন্ন অনলাইন কোর্স দেখানো হয়েছে।

ইউডাসিটি: স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য অন্যতম সেরা ওয়েবসাইট, যেখানে পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর বিভিন্ন কোর্স পাওয়া যায়। | ছবি: সংগৃহীত।

২০১৪ সালের জুন মাসে ইউডাসিটি এবং ‘এটি এ্যান্ড টি’ ন্যানোডিগ্রী প্রোগ্রাম চালু করে। ন্যানোডিগ্রী কোর্সে মূলত ‘এটি এ্যান্ড টি’-তে চাকরি করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোগ্রামিং দক্ষতা শেখানো হয়। সিলিকন ভ্যালির বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ন্যানোডিগ্রী কোর্স ডিজাইন করা হয়েছে। ন্যানোডিগ্রী প্রোগ্রামগুলো সাধারণত ৫-৭ টি কোর্সের প্যাকেজ। সুলভ মূল্যে বিশ্বের যেকোনো মানুষ এই কোর্স করতে পারবে। কোর্স শেষে ভেরিফাইড সার্টিফিকেট ও জব গ্যারান্টি (ন্যানোডিগ্রি প্লাস কোর্সের ক্ষেত্রে) দেওয়া হয়। ইউডাসিটি কিছুদিন আগে অনলাইনে জর্জিয়াটেক ইউনিভার্সিটির সাথে পার্টনারশিপে মাস্টার্স ইন কম্পিউটার সাইন্স চালু করেছে। শিক্ষার্থীরা এই ওয়েবসাইট থেকে প্রোগামিং, ব্যবসাসহ নানা বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারে।

খান একাডেমি (Khan academy)

খান একাডেমি একটি আমেরিকান অনলাইনভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২০০৬ সালে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সালমান এই অনলাইনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। খান একাডেমিতে গণিত, বিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাস এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান সহ একাডেমিক বিষয়গুলো শেখানোর জন্য ১০,০০০ এর বেশি ভিডিও রয়েছে। ওয়েবসাইটে নিবন্ধ করে বিশ্বের যেকোনো মানুষ বিনামূল্যে এই কোর্সগুলো করতে পারেন।

খান একাডেমি ওয়েবসাইটের হোমপেজ, যেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে স্কিল ডেভেলপমেন্টের বিভিন্ন কোর্স রয়েছে।

খান একাডেমি: একটি জনপ্রিয় স্কিল ডেভেলপমেন্ট ওয়েবসাইট, যা শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ প্রদান করে। | ছবি: সংগৃহীত।

শুধু তাই নয়, ব্যবহারকারী চাইলে নিজের ইচ্ছেমতো পার্সোনালাইজড করে কোর্স নিতে পারেন। এই ওয়েবসাইটে এসএটি, এপি, কেমিস্ট্রি, প্রাক্সিস কোর এবং এমসিএটি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অনলাইন কোর্সও রয়েছে। খান একাডেমির ভিডিওগুলি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। খান একাডেমি প্ল্যাটফর্মটি ইংরেজি, বাংলা, বুলগেরিয়ান, চীনা, ফ্রেঞ্চ, জার্মান, জর্জিয়ান ,নরওয়েজিয়ান, পোলিশ, পর্তুগিজ, স্প্যানিশ, সার্বিয়ান, তুর্কি, উজবেক এবং আংশিকভাবে অন্যান্য ২৮টি ভাষায় বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছেছে।

ডেটাক্যাম্প (Datacamp)

ডেটাক্যাম্প মূলত একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যা শিক্ষার্থীদের ডেটা সায়েন্স নিয়ে সহজে শিখতে সাহায্য করে। ২০১৩ সালে জোনাথন কর্নেলিসেন, মার্টিজন থিউয়েসেন এবং ডিটার ডে মেসমাইকার এই প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্টা করেন। ডেটাক্যাম্প মূলত পাইথন, মেশিন লার্নিং, ডেটা অ্যানালাইসিস, ডেটা ম্যানিপুলেশনসহ নানা বিষয় সহজেই শিক্ষার্থীদের বুঝতে সাহায্য করে। এই প্ল্যাটফর্মে ৪১০ টির বেশি কোর্স রয়েছে যার মধ্যে অধিকাংশ কোর্স বিনামূল্যে করা যায়। যারা পোগ্রামিং কিংবা ডেটা সায়েন্সে নিজেদের ক্যারিয়ার তৈরি করতে চায়, তাদের জন্য ক্যারিয়ার গাইডলাইন রয়েছে।

ডেটাক্যাম্প ওয়েবসাইটের হোমপেজ, ডেটা বিজ্ঞান, প্রোগ্রামিং, এবং অ্যানালিটিকসের স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স সম্বলিত।

ডেটাক্যাম্প: ডেটা বিজ্ঞান, প্রোগ্রামিং এবং অ্যানালিটিকস শেখার জন্য একটি শীর্ষস্থানীয় স্কিল ডেভেলপমেন্ট ওয়েবসাইট, যা শেখার অভিজ্ঞতাকে সহজ করে তোলে। | ছবি: সংগৃহীত।

কোডএকাডেমি (Codecademy)

এটি একটি আমেরিকান অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যা পাইথন, জাভা, গো, জাভাস্ক্রিপ্ট, রুবি, এসকিউএল, সি++, এইচটিএমএল, সিএসএস সহ ১২ টি প্রোগ্রামিং ভাষা বিনামূল্যে শেখায়। এই প্ল্যাটফর্মের পেইড সাবস্ক্রিপশন কোর্সও রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের কিছু বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডেটা সায়েন্স, মেশিন লার্নিং এর মতো বিষয়গুলো এই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে শেখা যায়।

কোডএকাডেমি ওয়েবসাইটের হোমপেজ, যেখানে প্রোগ্রামিং এবং কোডিং শেখার জন্য বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স রয়েছে।

কোডএকাডেমি: প্রোগ্রামিং এবং কোডিং শেখার জন্য জনপ্রিয় স্কিল ডেভেলপমেন্ট ওয়েবসাইট, যা শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা প্রদান করে। | ছবি: সংগৃহীত।

আইভারসিটি (Iversity)

এটি একটি বার্লিন-ভিত্তিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে আইভারসিটি উচ্চ শিক্ষায় অনলাইন কোর্স  বিশেষ করে ম্যাসিভ ওপেন অনলাইন কোর্স প্রদান করছে। বিশ্বের যেকোনো মানুষ বিনামূল্যে এসব কোর্স করতে পারবে। এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মটি সাধারণত ইংরেজি, জার্মানি এবং রুশ ভাষায় পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠার মাত্র দুই বছরের মধ্যে এই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিলো ৬,০০,০০০ শিক্ষার্থী। এই এই প্ল্যাটফর্মে ৪১টি পার্টনার বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার করা ৬৩টি কোর্স রয়েছে। কমিউনিকেশন, ফিল্ম স্টাডিজ, সাইকোলজি, আইন, মার্কেটিং, দর্শন, পদার্থবিজ্ঞানসহ নানা ধরনের বিষয় নিয়ে বিনামূল্যে এই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম শিক্ষার্থীদের জানার সুযোগ করে দিচ্ছে।

আইভারসিটি ওয়েবসাইটের হোমপেজ, যেখানে বিভিন্ন পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর জন্য স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স রয়েছে।

আইভারসিটি: পেশাগত উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন অনলাইন কোর্স সহ একটি স্কিল ডেভেলপমেন্ট ওয়েবসাইট, যা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে। | ছবি: সংগৃহীত।

এই পাঁচটি ওয়েবসাইট বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে পোগ্রামিং, কোডিং, কমিউনিকেশন সহ নানা বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে সাহায্য করে যাচ্ছে। তীব্র প্রতিযোগিতামূলক এই বিশ্বে টিকে থাকার জন্য আমাদের প্রতিনিয়ত নতুন নতুন স্কিল আয়ত্ত করতে হয়। আর এই ওয়েবসাইটগুলোর সাহায্যে আমরা খুব সহজেই এই দক্ষতা অর্জন করতে পারি।

“তথ্যসূত্র”

চামড়ার মানিব্যাগ তৈরির ব্যবসা যেভাবে শুরু করবেন

Previous article

শিশুদের জন্য ইউটিউবকে সুরক্ষিত করতে অভিভাবকদের ৬টি করণীয় পদক্ষেপ

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *