বিজনেস আইডিয়াস

চায়নাপণ্য আমদানি ও ব্যাবসা: শুরু থেকে শেষ

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আয়শা মারিয়া

চায়না বর্তমানে পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বের প্রথম অবস্থানে রয়েছে।  বিশ্বের অনেক দেশে শুধু চায়না প্রোডাক্ট বিক্রি করেই কোটিপতি হয়েছেন এমন ব্যবসায়ীর সংখ্যাও অনেক। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরাও এখন বিদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে অনলাইনে ব্যবসা করেন।    

ইন্টারন্যাশনাল সেলারদের থেকে সরাসরি পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশে এমন কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কাস্টমার বা ব্যবসায়িরা ইন্টারন্যাশনাল সেলার দের থেকে পণ্য আমদানি করতে সচরাচর যে সব সমস্যার সম্মুখীন হন, যেমন – কাস্টম ক্লিয়ারেন্স, ভ্যাট-ট্যাক্স, এলসি এবং শিপমেন্ট সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে এসব প্রতিষ্ঠান সবরকম সেবা প্রদান করে থাকে।

কিন্তু এধরনের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান এর মাধ্যমে অর্ডার করা পণ্যগুলো অনেকসময় ওয়েবসাইটে দেওয়া ছবির মত হয়না। আবার ডেলিভারি দিতেও অনেক বেশি সময় নেয়। এমনকি অর্ডার করার সময় পণ্যের প্রায় ৭০-৮০% মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করতে হয়। এভাবে ক্ষুদ্র বা মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করে এবং পণ্য অর্ডার করে তা হাতে পাওয়ার জন্য লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করা ব্যবসার জন্য ঝুকিপূর্ণ।

আজকের আলোচনায় চায়না থেকে পণ্য আমদানি করার কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো

চীন থেকে পণ্য আমদানি করার নিয়মঃ 

চীন থেকে পণ্য আমদানি করার প্রধানত দুইটা মাধ্যম আছে।

১। পাসপোর্ট ভিসা করে সরাসরি চায়না গিয়ে পন্য নিয়ে আসা

সরাসরি চায়না গিয়ে পণ্য কিনে আনতে অধিক পুঁজি প্রয়োজন। বাংলাদেশে থেকে সাধারনত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পাসপোর্ট ভিসা করার মাধ্যমে সরাসরি চায়না গিয়ে দেখেশুনে পণ্য  ক্রয় করে থাকেন। চীনের অন্যান্য শহরের তুলনায় সিনজিনে কম দামে অনেক ভালো পণ্য পাওয়া যায় বলে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য ক্রয় করতে এই শহরেই বেশি আসেন। 

সরাসরি চায়না গিয়ে পণ্য ক্রয়ে ভিসা ও ভাড়া বাবদ খরচ পড়বে প্রায় এক লক্ষ টাকা। তবে আপনি প্রথমবার পণ্য দেখে ক্রয় করে এনে, পরবর্তীতে নিজে না গিয়ে পণ্য আনার মত ব্যবস্থা করে আসতে পারবেন।

 ২। অনলাইনে পণ্য দেখে পণ্য ক্রয় করা

অনলাইনে চায়নাপণ্য দেখে ক্রয়ের প্রক্রিয়া।

অনলাইনে চায়নাপণ্য আমদানির জন্য পণ্য ক্রয়ের দৃশ্য। | ছবি: সংগৃহীত।

ক্ষুদ্র বা মাঝারি ব্যবসায়ীরা কাস্টম ক্লিয়ারেন্স, ভ্যাট, ট্যাক্স, এলসি, শিপমেন্ট ক্লিয়ারেন্স  এর চিন্তা না করেই সরাসরি মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান গুলির ওয়েবসাইটে অর্ডার করে পেমেন্ট সম্পন্ন করার মাধ্যমে ব্যবসার পণ্য গুলো কিনতে পারছেন। তবে সমস্যা হলো অনেক সময় চায়নিজ সাপ্লাইয়ার এর ভুলের কারণে ওয়েবসাইটে দেখানো হুবুহু পণ্য ক্রেতারা হাতে পায়না। এছাড়া ক্রস বর্ডার ট্রেড হওয়ায় এই পণ্য আবার চায়নিজ বিক্রেতাদের কাছে ফেরত পাঠানো সম্ভব না বিধায় এই ব্যবসায় রিফান্ড পাওয়ার নিশ্চয়তা নাই। এছাড়াও অগ্রিম পেমেন্ট করে লম্বা সময়ের জন্য পণ্য হাতে পাওয়ার অপেক্ষা করা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের  জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

ব্যবসায়ীদের এ ধরনের ঝামেলা বা ঝুঁকি কমাতে ‘চায়না অনলাইন বিডি’দেশের ব্যবসায়ীদের কম সময়ে অথেন্টিক পণ্য  আমদানির সুযোগ করে দিচ্ছে। এই প্ল্যাটফর্মে উদ্যোক্তারা চায়নার ১০ লক্ষ সেলারের প্রায় ২০ কোটি পণ্য থেকে নিজের ব্যবসার জন্য পণ্য কেনার সু্যোগ পাচ্ছেন। সরাসরি চায়নার লোকাল সাপ্লাইয়ার দের সাথে কাজ করার সুবাদে প্ল্যাটফর্মটির দেশীয় উদ্যোক্তাদেরকে ন্যায্য মূল্যে এবং সর্বনিম্ন শিপিং চার্জের মাধ্যমে মাত্র ১২-২৪ দিনের মধ্যে অর্ডার করা পণ্য গুলো পৌছে দিচ্ছে।

এছাড়াও আপনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় হোলসেল বা পাইকারি পণ্য বিক্রির ওয়েবসাইট আলিবাবা ডট কম (alibaba. com) থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারেন। আলিবাবা ডট কম থেকে কিভাবে একাউন্ট খুলে আপনি পণ্য ক্রয় করতে পারবেন তা সম্পূর্ণ আলোচনা করা হলো-

আলিবাবা ওয়েবসাইটে একাউন্ট খুলুন

আলিবাবা ওয়েবসাইটে চায়নাপণ্য আমদানির জন্য একাউন্ট তৈরি করার দৃশ্য।

আলিবাবা ওয়েবসাইটে চায়নাপণ্য আমদানি করার জন্য একাউন্ট। | ছবি: সংগৃহীত।

আলিবাবা ডট কম (alibaba. com) ওয়েবসাইটে মূলত দুই রকম একাউন্ট করা যায়। সেলার একাউন্ট ও বায়ার একাউন্ট। সেলার একাউন্ট হচ্ছে যারা হোলসেলে পন্য বিক্রি করবে আর বায়ার হচ্ছে যারা পণ্য কিনবেন, যেমন আপনি। তবে একই একাউন্ট একসাথে বায়ার ও সেলার একাউন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।

সেলার সিলেকশনে সতর্কতা

আলিবাবা ডট কম (alibaba. com) হতে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে পণ্য সিলেক্ট করার সময় সেলারদের ক্যাটাগরিগুলি লক্ষ রাখতে হবে। সেলার সিলেকশনের ক্ষেত্রে প্রথমে চেষ্টা করবেন গোল্ড সাপ্লায়ার (বিশেষ ফিচার) সেলার সিলেক্ট করতে।

গোল্ড সাপ্লায়ার সেলার হতে হলে একজন সেলার কে বছরে ১২৫০ ইউএসডলার ফি দিতে হবে আলিবাবাকে। এর বিনিময়ে আলিবাবা থেকে একটা টিম সরাসরি ওই সেলারের অফিস পরিদর্শন করে এবং সব ঠিক আছে কি না তা ভেরিফাই করে। তাই আপনি যার কাছে থেকে পণ্য ক্রয় করবেন তা যদি গোল্ড সাপ্লায়ার সেলার হয় তাহলে সবচেয়ে ভালো হয়।

পণ্যের দাম দেখে নিন

এরপর দেখে নিবেন পণ্যের দাম কি “এফওবি” নাকি “সিএফআর”। এফওবি মানে হচ্ছে সেলার আপনার দেশের পোর্ট পর্যন্ত পণ্য পৌছে দিবে কিন্তু ট্রান্সপোর্ট চার্জ আপনাকেই দিতে হবে। আর পণ্যের গায়ে যদি সিএফআর লিখা থাকে এর মানে হচ্ছে সেলার ট্রান্সপোর্ট ফি সহ পণ্য আপনার কাছে পৌছে দিবে। তবে অনেক ক্ষেত্রে যে দাম দেয়া থাকে প্রকৃত দাম তার কিছুটা কম-বেশি হয়। তাই সরাসরি সেলারকে ম্যাসেজ দিয়ে দাম ও বাংলাদেশে পাঠানো সহ মোট কত খরচ পড়বে তা নিশ্চিত হয়ে নিবেন।  

স্যাম্পল আমদানি করুন

সেলার ও পণ্য সম্পর্কে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করার পর পণ্যের স্যাম্পল চেক করে নেওয়া প্রয়োজন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডিল হয়ে গেলে সেলার ফ্রি তে ই স্যাম্পল পাঠায়। তবে পণ্য যদি দামি হয় তাহলে প্রথম স্যাম্পল টি ক্রয় করা লাগতে পারে। 

চায়না থেকে আমদানি খরচ 

সাধারনত আলিবাবা ডট কম থেকে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে সেলারদের ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে হয়। তবে আপনি চাইলে ডুয়েল কারেন্সি সাপোর্টেড ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও পেমেন্ট করতে পারেন। 

সেলাররা ডিএইচএল (DHL), এফইডিইএক্স (FEDEX), টিএনটি (TNT) তে করে কুরিয়ারের মাধ্যমে আপনার কাছে পণ্যটি পাঠালে ১ থেকে ১০০০ গ্রামের ক্ষেত্রে ২০০০ টাকা কুরিয়ার চার্জ লাগবে এবং ১০০০ গ্রামের উপরে হলে ৩০০০ হাজার টাকা খরচ হবে। তাই আপনার আমদানি খরচ কিছুটা নির্ভর করছে আপনার পণ্যের ধরনের উপর।

চায়না থেকে পণ্য আসতে কতদিন লাগে

চায়না থেকে পণ্য আসার প্রক্রিয়ার দৃশ্য।

চায়না থেকে চায়নাপণ্য আমদানি করার দৃশ্য। | ছবি: সংগৃহীত।

ডিএইচএল  (DHL), এফইডিইএক্স (FEDEX), টিএনটি (TNT) কুরিয়ারের ক্ষেত্রে সাধারনত ৭দিন বা আরো বেশি কিছু সময়ও লাগতে পারে। আসলে এক দেশ থেকে অন্য দেশে প্রোডাক্ট আসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিয়ম কানুন মেনে আসতে একটু সময় লাগে। কিন্তু আপনি যদি ৫ দিনের মধ্যে আপনার পণ্য হাতে পেতে চান তাহলে ডিএইচএল (DHL) কুরিয়ারে পণ্য নিতে পারেন।

পণ্য অর্ডারের পূর্বে আপনাকে অবশ্যই পণ্যের অরিজিন সম্পর্কে জানতে হবে যে পণ্যটি আসলেই কোন দেশে উৎপাদন হয়েছে। আপনার এবং প্রকৃত উৎপাদনকারির মাঝে অন্যকোনো ডিলার থাকলে দাম কিছুটা বেশি হতে পারে।

“তথ্যসূত্র”

কীভাবে তৈরি হলো আজকের রকমারি?

Previous article

কেন স্বর্ণে বিনিয়োগ করবেন?

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *