কারেন্সী

ঘুরে আসুন টাকার জাদুঘর থেকে

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আনিকা তায়্যিবা

দেয়ালে সাজানো থরে থরে পয়সা। আছে রংবেরঙের নকশা করা টাকাও। প্রাচীন আমল থেকে এই ভূখণ্ডে প্রচলিত প্রায় সব মুদ্রা দিয়ে সাজানো হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে নির্মিত দেশের একমাত্র টাকার জাদুঘর। এই জাদুঘরে বাংলার মুদ্রার বিবর্তন এবং মানব সভ্যতার অগ্রগতির এক অনন্য নিদর্শন তুলে ধরা হয়েছে।  বিশেষ করে, মুদ্রার ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে আগ্রহীদের জন্য এটি হতে পারে এক আদর্শ গন্তব্য। ইতিহাসপ্রেমী কিংবা কৌতূহলী যে কেউ এই জাদুঘরে এসে বাংলাদেশের মুদ্রার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন।

মুদ্রা্র সংরক্ষণ এবং ঐতিহ্যের রক্ষণাবেক্ষণঃ

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই জাদুঘর দেশের প্রথম মুদ্রা জাদুঘর হিসেবে পরিচিত। ২০০৯ সালে প্রথমে এটি মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ভবনে প্রতিষ্ঠিত হলেও তখন তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল না। পরবর্তীতে মুদ্রার এই ইতিহাস জনগণের কাছে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে, তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান ২০১২ সালে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন একটি পূর্ণাঙ্গ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। 

এরই ধারাবাহিকতায় ৫ অক্টোবর, ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদের তৎকালীন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জাদুঘরটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। বর্তমানে মিরপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশিক্ষণ একাডেমির পাশে স্থাপিত এই জাদুঘরে রয়েছে ৩,০০০টির বেশি মুদ্রা ও ব্যাংকনোট, যা দর্শনার্থীগণ বিনামূল্যে উপভোগ করতে পারেন।

জাদুঘরের কাঠামোঃ

জাদুঘরটি মূলত দুটি গ্যালারি নিয়ে স্থাপিত, যেখানে এক পাশে বাংলাদেশের মুদ্রার ইতিহাস এ অপরদিকে বৈশ্বিক মুদ্রা প্রদর্শিত হয়।  

প্রথম গ্যালারিতে ঢুকলেই দেখা যাবে বাংলার প্রাচীন মুদ্রা। চন্দ্রগুপ্তের সোনার মুদ্রা, কুশান মুদ্রা্‌, রৌপ্যমুদ্রা, ময়নামতীর প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে সংগৃহীত মুদ্রা। কি নেই সেখানে! আছে ব্রিটিশ আমলের মুদ্রা, সুলতান এবং মোগল সম্রাট যুগের মুদ্রা, পাকিস্তানি মুদ্রা এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নোট ও কয়েনও। মোট ৪৩টি প্রদর্শনী কেসে ১১০০টি মুদ্রার নিদর্শন সাজিয়ে রাখা রয়েছে, যা বাণিজ্যের প্রাচীন ইতিহাস থেকে শুরু করে মুদ্রা ব্যবহারের বিবর্তন তুলে। এছাড়াও রয়েছে প্রাচীন যুগে মুদ্রা সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত থলি, পাত্র, এবং কয়েন তৈরির ছাঁচ বা ডাইস।

বাংলার প্রাচীন মুদ্রা, যা অতীতের ঐতিহ্য ও অর্থনৈতিক ইতিহাসকে ফুটিয়ে তুলেছে।

বাংলার প্রাচীন মুদ্রার নজির, যা আমাদের ইতিহাসের মূল্যবান অধ্যায়কে স্মরণ করিয়ে দেয়। | ছবি: সংগৃহীত।

দ্বিতীয় গ্যালারিতে থরে থরে সাজানো রয়েছে বৈশ্বিক মুদ্রার বৈচিত্র্য। ভারত, চীন, রাশিয়া, জার্মানি, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, এবং অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের প্রায় ১২০টি দেশের মুদ্রা ও মুদ্রা ব্যবস্থার পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে এখানে। 

জাদুঘরটিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে যেখানে দর্শনার্থীরা থ্রি ডি টেলিভিশন এবং এলসিডি ডিসপ্লের মাধ্যমে মুদ্রার ইতিহাস স্বচক্ষে দেখতে পারেন।

গবেষণা এবং শিক্ষা কার্যক্রমঃ

টাকা জাদুঘর শুধুমাত্র মুদ্রা সংগ্রহ ও প্রদর্শনই করে না, গবেষণা এবং শিক্ষা কার্যক্রমের জন্যেও টাকা জাদুঘরে রয়েছে বিশেষ সুযোগ। এতে রয়েছে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এবং প্রকাশনার মাধ্যমে মুদ্রার ইতিহাস সম্পর্কে জানার সুযোগ। দর্শনার্থীদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ বিবেচনায় নিয়ে এরই মধ্যে জাদুঘর সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশিক্ষণ একাডেমির দ্বিতীয় তলায় নতুন গ্যালারি, গ্রন্থাগার, সংরক্ষণাগার, সিনেপ্লেক্স এবং শিশুদের জন্য কর্নার স্থাপন করার সিদ্বান্ত নেয়া হয়েছে।

টাকার জাদুঘরের গবেষণা এবং শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে মুদ্রার ইতিহাস ও অর্থনৈতিক শিক্ষার প্রচার।

টাকার জাদুঘরের গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রমে জানুন মুদ্রার ঐতিহ্য ও অর্থনৈতিক ইতিহাস। | ছবি: সংগৃহীত।

দর্শনার্থীদের জন্য নির্দেশিকাঃ

টাকা জাদুঘরে প্রবেশের জন্য কোনো টিকিটের প্রয়োজন নেই। বিনামূল্যেই আপনি প্রবেশ করতে পারবেন। শনিবার থেকে বুধবার, সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে জাদুঘর । বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তবে অন্যান্য জাতীয় ছুটির দিনে টাকা জাদুঘর খোলা থাকে।  

বাংলাদেশের টাকার গৌরবময় ইতিহাস এবং বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে এর সংযোগ তুলে ধরতে টাকা জাদুঘর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। প্রাচীন থেকে আধুনিক মুদ্রার সংগ্রহ নিয়ে গড়া এই জাদুঘরটি মুদ্রাজাদুঘরর ইতিহাসে আগ্রহী সকলের জন্য একটি অনন্য অভিজ্ঞতার জগৎ উন্মুক্ত করে।

“তথ্যসূত্র”

কেন স্বর্ণে বিনিয়োগ করবেন?

Previous article

চ্যাটজিপিটি: ওপেন এআই এর নতুন দ্বার উম্মোচনের গল্প

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *