Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আনিকা তায়্যিবা |
আর্থিক লেনদেনে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। বড় ধরনের কেনাকাটায় সঙ্গে থাকা ক্রেডিট কার্ডটি বেশ কাজের। তবে অনেকের মধ্যে ক্রেডিট কার্ড নিয়ে একধরনের ভীতি কাজ করে। অনেকে ভাবেন, শেষমেশ এটি ব্যয়ের ফাঁদই হয়ে দাঁড়ায় কি না! চলুন জেনে নেয়া যাক কীভাবে আপনার ক্রেডিট কার্ড যথাযথভাবে ব্যবহার করে ঋণ এড়িয়ে চলবেনঃ
ক্রেডিট কার্ড কী? এটি হলো এমন একটি প্লাস্টিক কার্ড যা ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার নেওয়ার সুযোগ দেয়। এর মাধ্যমে কার্ডধারীরা কেনাকাটা করার সময়, সঙ্গে সঙ্গে পরিশোধ না করে পরে অর্থ পরিশোধ করতে পারেন। ক্রেডিট কার্ড অনলাইন এবং সরাসরি সবজায়গায়ই সহজে গ্রহণযোগ্য, যা কেনাকাটায় নমনীয়তা নিয়ে আসে।
তবে যে কেউ ই কি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন? না, যে কেউ চাইলেই ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য আবেদনকারীর নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হয়। এর মধ্যে সাধারণ কিছু শর্ত হলো:
- বয়স: বেশিরভাগ দেশে আবেদনকারীর ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৮ বছর।
- আয়ের প্রমাণ: ব্যাংক প্রথমে নিশ্চিত করে আবেদনকারীর নিয়মিত আয় আছে কি না, যাতে ধার করা অর্থ পরিশোধ করা যায়।
- শিক্ষার্থী এবং নতুন ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে সিকিউরিটি ডিপোজিট: কিছু ব্যাংক স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড বা সিকিউরড ক্রেডিট কার্ড অফার করে, যেখানে সিকিউরিটি ডিপোজিট দিতে হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও নতুন ব্যবহারকারীরাও কার্ড ব্যবহার শুরু করতে পারেন।
ক্রেডিট কার্ড অর্থ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি কার্যকর উপায় হলেও এর অসাবধানী ব্যবহার ঋণের ঝুঁকি বাড়ায়। চলুন জেনে নেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের কিছু সুবিধা-অসুবিধা এবং ঋণ এড়াতে কীভাবে এটি যথাযথভাবে ব্যবহার করবেনঃ
১. আয় অনুযায়ী ব্যয় করুন
ক্রেডিট কার্ডকে নগদ টাকার মতো ব্যবহার করুন। যতটা খরচ করবেন, তা যেন মাস শেষে পুরোপুরি পরিশোধ করতে পারেন সেই হিসাব মিলিয়েই খরচ করবেন। বাজেটের বাইরে বিলাসবহুল কেনাকাটা থেকে বিরত থাকুন।
২. সময়মতো পুরো টাকা পরিশোধ করুন
সময়মতো ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করা অপরিহার্য। প্রতিটি ব্যাংক একটি সুদমুক্ত গ্রেস পিরিয়ড দিয়ে থাকে, যার মধ্যে কোনো সুদ লাগবে না। এই সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধ করলে আপনি সুদ থেকে মুক্ত থাকবেন। এই সময়সীমা যেন ভুলে না যান, প্রয়োজনে রিমাইন্ডার সেট করুন।
৩. সুদের হার ও ফি সম্পর্কে জানুন
ক্রেডিট কার্ডে বাকি অর্থের ওপর সুদ ধার্য করা হয়। যেসব ক্ষেত্রে কম সুদের হার পাওয়া যায় সেইসব কার্ড খুঁজুন এবং বাৎসরিক ফি এবং অগ্রিম নেওয়ার ফি সম্পর্কে জেনে নিন।
৪. নিয়মিত লেনদেন পর্যবেক্ষণ করুন
কার্ড স্টেটমেন্ট বা ব্যাংকের অ্যাপের মাধ্যমে আপনার ব্যয় নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন। এতে অসংগত লেনদেন বা অতিরিক্ত খরচ শুরুতেই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
৫. অপ্রয়োজনীয় কার্ডের সংখ্যা সীমিত রাখুন
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সব সময়ই একটি ঋণ নেওয়ার মাধ্যম। আপনি এখন কিনছেন, পরে অর্থ পরিশোধ করতেই হবে। একটা ঝুঁকি থেকেই যায়। আপনি সময়মতো ঋণ পরিশোধ না করলে ঋণ বাড়তেই থাকবে। তাই একাধিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে খরচের পরিমান বাড়তে পারে। এক বা দুইটি কার্ড রাখাই সেক্ষেত্রে উত্তম, যাতে ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
৬. রিওয়ার্ড ও অফার সঠিকভাবে ব্যবহার করুন
বেশিরভাগ ক্রেডিট কার্ডে সময়ভেদে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ক্যাশব্যাক এবং ডিসকাউন্টের অফার থাকে। এসব সুবিধা কাজে লাগান, তবে রিওয়ার্ড পাওয়ার জন্য অপ্রয়োজনীয় খরচ করবেন না।
ক্রেডিট কার্ড সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি একটি মূল্যবান আর্থিক টুল হতে পারে। তবে দায়িত্বশীল ব্যবহারই অর্থনৈতিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। যথাযথ ব্যয়, সময়মতো বিল পরিশোধ এবং উত্তম আর্থিক অভ্যাস আপনাকে ঋণমুক্ত রাখার পাশাপাশি আপনাকে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ও আর্থিক সুরক্ষা দেবে।
Comments