Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির |
বর্তমান সময়ে টাটা গ্রুপ নিত্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার পণ্যে তাদের অবদান রেখেছে।
যখন আপনি গাড়িতে করে ট্র্যাভেল করেন টাটা মোটরস। যখন আপনি বিমানে ট্রাভেল করেন ভিস্তারা এয়ারলাইন্স অথবা এয়ার ইন্ডিয়া সবকিছুই টাটার অধীনে। বলতে গেলে টাটা গ্রুপ শুধু নিজেদের লাভের দিকে তাকায়নি তারা ভারতকে অর্থনৈতিক ভাবে শক্ত হতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।
মিস্টার রতন টাটা ১৯৬২ থেকেই টাটা গ্রুপের পারিবারিক ব্যবসায় জড়িয়ে পরেন। এর আগে তিনি আমেরিকাতে আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন। টাটা গ্রুপের পক্ষ থেকে তার প্রথম কাজ ছিল ভারতের ঝাড়খণ্ডে জমশেদপুরে টাটার স্টিল তৈরি কারখানায়।
রতন টাটা কে ১৯৭১ সালে ন্যাশনাল রেডিও এবং ইলেকট্রনিক্সের (নেলকো) দায়িত্ব পান। সে সময় নেলকো রেডিও তৈরি করতো এবং মার্কেটে তাদের শেয়ার প্রায় ২ % নেমে আসে। ঠিক সেই সময় রতন টাটা বলেন যদি নেলকো বাঁচাতে চান তবে স্যাটেলাইটের মত আধুনিক যন্ত্রে বিনিয়োগ করতে হবে। রতন টাটার এই সিদ্ধান্তে ৩ বছরের মধ্যে নেলকোর মার্কেট শেয়ার ২০%-এ পরিণত হয়।
রতন টাটার দ্বিতীয় অ্যাসাইনমেন্ট ছিল ইমপ্রেস মিল কে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। তবে বিনিয়োগকারীদের অনীহা এবং মুম্বাইতে শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে এ ধাক্কায় তিনি পাশ করতে পারেননি। তবে এত দিনে টাটা গ্রুপের সবাই বুঝে গিয়েছিল যে রতন টাটার হাতেই টাটা গ্রুপের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। তাই ১৯৯১ সালে রতন টাটাকে বানানো হয় টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান।
চেয়ারম্যান হওয়ার পরে ১৯৯৫ সালে মিস্টার রতন গাড়ি নির্মাণে মনোযোগ দেন। যেখানে ডিজাইন থেকে উৎপাদন সম্পূর্ণ হবে ভারতে। সেই ভাবনা থেকে ১৯৯৮ সালে টাটা গ্রুপ তাদের প্রথম গাড়ি বাজারে আনে যার নাম ছিল TATA INDICA.
অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ শেষের পরে মিস্টার টাটা নজর দেন টেকনোলজির দিকে।
টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (টিসিএস ) শুরুতে ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে প্রশাসনিক কাজে সাহায্য করতো। তবে মিস্টার টাটা এই কোম্পানির কাজ প্রশাসনিক কাজ থেকে সরিয়ে সফটওয়্যার সার্ভিস দেবার ক্ষেত্রে। যার ফলে টিসিএস ভারত এবং বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানির জন্য সফটওয়্যার তৈরির কাজ শুরু করে। বর্তমানে টিসিএস ভারতের সব থেকে বড় আইটি কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।
মিস্টার টাটা আবার তার মনোযোগ টাটা মোটরসে দেন। তিনি দেখেন ভারতের বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার একটা গাড়ি কিনতে পারেন না। একদিন তিনি দেখেন এক বাইকে পরিবারের চারজন বৃষ্টিতে ভিজে কোথাও যাচ্ছে। এই সমস্য সমাধানে টাটা মোটরস বাজারে নিয়ে আসে TATA NANO। কিন্তু এই প্রজেক্টটি সফলতার মুখ দেখেনি। কারণ ভারতে গাড়ি একটা আভিজাত্য সেখানে যারা টাটা নেনো কিনতো তারা মূলত সামাজিক ভাবে ছোট নজরে দেখা হতো। ওই দেখ সব থেকে সস্তা গাড়ির মালিক হিসেবে।
টাটার নেনো প্রজেক্ট ফেল হলেও এর মাধ্যমে টাটা ক্রেতার ব্যবহার সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছে। বর্তমানে টাটা মোটারস টাটা গ্রুপের মধ্যে সব থেকে লাভজনক কোম্পানি।
তবে মিস্টার টাটা এখানেই থেমে থাকেননি টাটা মোটরসে বিশ্ব দরবারে সমাদৃত করতে তিনি জাগুয়অর ও ল্যান্ডরোভার- এর মত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কিনে নেন। এছাড়া টাটা ব্রিটিশ চা ব্র্যান্ড টেটলি ও আমেরিকান ব্রান্ড এইট ও ক্লক কিনে নেন। পাশাপাশি টাটা বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানি নিজেদের নামে করে নেয়। যার ফলে বর্তমানে টাটা গ্রুপের বেশিরভাগ ইনকাম বহির্বিশ্ব থেকে আসে।
মিস্টার টাটা ভারতের অর্থনীতিতে অবদানের জন্য ভারত সরকারের থেকে ২ বার পদ্মা ভূষণ পদক লাভ করেন। টাটা গ্রুপ প্রায় বাজারের সবকিছুতে সফলতা দেখেছে। সেটা টাটা স্টিল হোক কিংবা টাটা মোটরস। মিস্টার টাটা বলেন, যদি দ্রুত যেতে চাও তবে একলা চলো, তবে বহু দূর যেতে চাইলে সবাইকে সাথে নিয়ে চল। টাটা গ্রুপ সবসময় এই নীতির উপর ভর করে চলেছে। একদিকে যেমন টাটা বড়বড় কোম্পানি তৈরি করেছে অন্যদিকে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড যেমন স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল নির্মাণে ভূমিকা রেখেছে। টাটা বিশ্বের লাভজনক কোম্পানির পাশাপাশি একটি সম্মানজনক অবস্থায় পৌঁছে গেছে। যেখানে সবাই মিস্টার রতন টাটাকে স্যার রতন টাটা বলে সম্মান প্রদান করতে স্বচ্ছন্দ্য প্রকাশ করে।
Comments