Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আয়শা মারিয়া |
“প্রিন্ট অন ডিমান্ড” হলো একটি জনপ্রিয় ই-কমার্স ব্যবসা । এটি এমন একটি বিজনেস মডেল যেখানে কিনা অন ডিমান্ডে কাস্টমারের প্রোডাক্টটি তৈরি করা হয় এবং কাস্টমারের কাছে সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে ই-কমার্স দুনিয়ার অনেক বড় একটি জায়গা দখল করে আছে “প্রিন্ট অন ডিমান্ড” বা পিওডি।
ই-কমার্স ব্যবসা হলো অনলাইন স্টোর, যেখানে আপনি কোনো পণ্য কিনতে বা বিক্রি করতে পারবেন। এই দোকানগুলি জামাকাপড় এবং ইলেকট্রনিক্সের মতো বিভিন্ন বস্তুগত পণ্য থেকে শুরু করে সফ্টওয়্যার এবং মিউজিকের মতো ডিজিটাল পণ্যসহ যেকোনো কিছু বিক্রি করে থাকে।
প্রিন্ট অন ডিমান্ড (পিওডি) তে যখন একজন গ্রাহক আপনার করা ডিজাইনটি পছন্দ করেন এবং পণ্যটি অর্ডার করেন, তখন ডিজাইনটি গ্রাহক চাহিদা অনুসারে প্রিন্ট হয় এবং সরাসরি গ্রাহকের কাছে তা পাঠানো হয়। পণ্য স্টোর করা বা শিপিং সম্পর্কে কোনোরূপ চিন্তা ছাড়াই ভীষণ সহজেই এ ধরনের অনলাইন ব্যবসা শুরু করা যায়। আন্তর্জাতিকভাবে এই ব্যবসা জনপ্রিয় হলেও আমাদের দেশে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ধীরে ধীরে অনেকে মানুষই তাদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলছেন এই সেক্টরে।
অন্যান্য অনলাইন বিজনেসের পরিচিত সিস্টেম থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হলো এই প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেস। মার্কেটে ডিমান্ড ক্রিয়েট হলেই প্রিন্ট করা হবে। প্রিন্ট অন ডিমান্ড এর বিজনেস বা বাজার পরিধি বেশ বড়। আমেরিকা, ইউরোপসহ অস্ট্রেলিয়া, কানাডাতেও পিওডি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে। প্রিন্ট অন ডিমান্ডের দুইটি স্তর রয়েছে। একটি হচ্ছে সেলার এবং অন্যটি ফুলফিল্মেন্ট পার্টনার।
সেলারঃ প্রিন্ট ডিমান্ড বিজনেস এর ধারণা আপনার মাথায় আসলেই আপনাকে অবশ্যই শুরুতেই এই ব্যবসার সেলার সম্পর্কে ভালো মতো জানতে হবে। প্ল্যাটফর্ম অনুযায়ী এই ব্যবসার উপায়ও ভিন্ন ভিন্ন। যেমন ধরুন- ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যাটফর্মের মধ্যে আপনি গিয়ারলঞ্চের একটি ডোমেইন দিয়ে বিজনেস শুরু করতে পারবেন। এছাড়াও রেডবাবল, জেজাল, প্রিন্টফুল, গোটেন, টিস্প্রিং, সোসাইটি সিক্স ইত্যাদি আরো অনেক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শুরু করতে পারেন। দ্বিতীয় ধাপ হলো ষ্টোর সেট আপ। ষ্টোর লাইভ হবার পর পরই ডিজাইন আপলোড করার মাধ্যমে শুরু করে ফেলুন আপনার প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেসটি। এছাড়াও শুধুমাত্র ইমেইল দিয়েও আপনি বিজনেস অন্যান্য অনেক প্ল্যাটফর্মে আপনার ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন।
আপনার যদি ডিজাইন সম্পর্কে কোন প্রকার ধারনা না থাকে তবে আপনি ডিজাইনারের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারেন অথবা কিছু ডিজাইন সেলার সাইট (যেমন- টিসামুরাই) রয়েছে যেখান থেকে রেডি ডিজাইন ক্রয় করে আপনার ষ্টোর সাজাতে পারবেন।
ফুলফিল্মেন্ট পার্টনারঃ এটি প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন একটি অংশ। ফুলফিল্মেন্ট পার্টনার আপনার স্টোরে সাজানো সকল পণ্যের যোগান দিবে। তাই অবশ্যই সেলার বাছাই করার পর দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে আপনার ফুলফিল্মেন্ট পার্টনার কে হবে তা নির্ধারন করা।
ফুলফিল্মেন্ট পার্টনার বাছাই করবার সময় আপনাকে অবশ্যই কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে। যেমন- তাদের ওয়্যারহাউজ এর পরিধি কতটুকু, তাদের প্রোডাক্ট কোয়ালিটি কেমন, তারা কী ধরনের প্রোডাক্ট ভেরিয়েন্ট আপনাকে অফার করে থাকে, তাদের কাস্টমার সার্ভিস কতটুকু কার্যকারী, তাদের প্রোডাক্ট ডেলিভারী টাইম কতদিনে হয়ে থাকে। আপনার পছন্দমত সবকিছু মিলে গেলেই নিজের ব্যবসার জন্য আপনি পার্টনারকে যুক্ত করে ফেলবেন।
প্রিন্ট অন ডিমান্ড প্ল্যাটফর্মে শুধুমাত্র টি-শার্ট থেকে শুরু করে প্রায় ৩০০+ এর বেশী প্রোডাক্ট সেল করা হচ্ছে। তাছাড়াও এই প্ল্যাটফর্মে গ্লোবাল মার্কেট ও লোকাল মার্কেটে কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশেও এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্লোবাল মার্কেটে কাজ করবার জন্য “গিয়ারলঞ্চ” খুবই জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্ম এবং লোকাল মার্কেটে গিয়ারলঞ্চ স্টাইলোপিক সাফ্যলের সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
আপনার মনে কি এই চিন্তা উঁকি দিচ্ছে? কেনো বা কিভাবে “প্রিন্ট অন ডিমান্ড” বিজনেসের ধারণা ব্যবসায়িদের মাথায় আসলো? আমরা কিন্তু অনেক বিক্রেতাদের দেখি যে তারা বিশাল পন্য ভান্ডার নিয়ে তাদের দোকানগুলি সাজিয়ে তোলে কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেক গ্রাহক তাদের মন মতো পন্যটি খুঁজে পান না। এছাড়াও মন মতো হলেও আরো নানাবিধ সমস্যা বা চাহিদা অপূরণ থেকে যাওয়ার একটি বিষয় উঠে আসে। প্রিন্ট অন ডিমান্ড কিন্তু এই সকল সমস্যারই সমাধান দিয়ে থাকে। প্রিন্ট অন ডিমান্ড কাস্টমারদের অন ডিমান্ডেই প্রোডাক্টটি তৈরি করে থাকে অর্থাৎ ওয়েবসাইটের থেকে অর্ডার করবার সময় তখন প্রোডাক্ট সাইজ, কালার, কাস্টমাইজ ডিজাইন নির্ধারন করে দিতে হয়।
ফলে ঘরে বসেই নিজের পছন্দমতো ডিজাইন, কালার, এবং সাইজিং সেট করে আপনি অর্ডার করতে পারবেন। এর কারনে আপনাকে বিজনেস শুরু করার ক্ষেত্রে এখন আর পণ্য কিনে ষ্টোর করতে হবে না। যাতে করে আপনার অনেক পরিমাণ টাকা বেঁচে যাচ্ছে। তাছাড়াও নতুন নতুন ডিজাইন আপলোড করবার মাধ্যমে আপনি আপনার কাস্টমারদেরকে নতুনত্ব দিতে পারবেন এবং আপনার ওয়েবসাইটের এনগেজমেন্ট বৃদ্ধি করতে পারবেন।
অনেক ধরনের প্রিন্ট অন ডিমান্ড প্রোডাক্ট আছে যেগুলো কাস্টমাইজ করে অর্ডার করার জন্য তৈরি করা যায়। যেমন- মগ থেকে টুপি এবং টুপি থেকে টি-শার্ট পর্যন্ত। আপনাকে কিছু ধারণা দেওয়ার জন্য, এখানে বিক্রি করার মতো কিছু শীর্ষ পিওডি পণ্যের নাম উল্লেখ করা হলো- টি-শার্ট, ওয়াল আর্ট, ফটো, পানির বোতল, মগ, ফোন ক্ষেত্রে, ল্যাপটপ কেস, বই মুদ্রণ, টোট ব্যাগ, কাচের পাত্র এবং অন্যান্য অনন্য, নিশ্চিতভাবে বিক্রয়যোগ্য পণ্য।
আপনার গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী আপনি যখন কোনো পণ্য কাস্টমাইজ করেন এবং পণ্যটিতে নিজস্ব লেবেল সংযুক্ত করেন তখন দেখবেন পণ্যগুলির চাহিদার সাথে সাথে বিক্রি করেও আপনি বেশ লাভবান হচ্ছেন।
তবে পণ্য নির্বাচন করার সময় শুধু শিপিং খরচ মনে রাখবেন। যদি প্রিন্ট অন ডিমান্ড তৃতীয় পক্ষের সরবরাহকারী শিপিং খরচ চার্জ করে, তাহলে ভারী পণ্যের দাম বেশি হবে এবং আপনার সামগ্রিক আয় থেকে বিয়োগ হবে। এখানে মূলত ডিজাইনাররা তাদের ডিজাইনগুলো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রচার করছে ইউএস এবং ইউরোপ এর মার্কেটগুলোতে। আমেরিকান প্রোডাকশন এবং শিপিং কোম্পানির মাধ্যমে অর্ডার করা প্রোডাক্টটি যখন কাস্টমারকে হস্তান্তর করা হয় তখনই ডিজাইনার রা নিজেদের ডলার উইথড্র করতে পারেন।
কিভাবে একটি পিওডি সাপ্লায়ার বাছাই করবেন-
আপনি যদি অনলাইনে কাস্টমাইজড পণ্য, যেমন টি-শার্ট বা ফোন কেস বিক্রি করতে চান, তাহলে আপনার একটি প্রিন্ট-অন-ডিমান্ড এর জন্য সাপ্লায়ার প্রয়োজন হবে। এই সাপ্লায়ার আপনার পণ্যগুলি প্রিন্ট করে সরাসরি গ্রাহকদের কাছে পাঠাবে।
সঠিক সাপ্লায়ার নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে তাদের পণ্যের মান, প্রিন্টিং প্রযুক্তি, শিপিং গতি এবং গ্রাহক সেবা বিবেচনা করা উচিত।
জিরো ইনভেস্টমেন্ট, কাস্টমার সেটিস্ফেকশন, ঝামেলাবিহীন ব্যস্থাপনাসহ নানারকম সুবিধা লাভ করে আপনি এই ব্যবসা খুব সহজেই শুরু করতে পারেন। প্রিন্ট অন ডিমান্ডে ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাইলে গিয়ারলঞ্চের সাথে যুক্ত হতে পারেন। গিয়ারলঞ্চ একটি গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম যা মার্কেটে সাফল্যর সাথে বিজনেস পার্টনার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
Comments