ইনোভেশন এন্ড স্কেলিং

হলিউডের মাধ্যমে আমেরিকা বিশ্বে সাম্রাজ্য তৈরি করেছে

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির

হলিউড আসলে কতটা বিশাল  মার্কেট? বৈশ্বিক বিনোদনে হলিউড সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে। বিশ্বের সব দেশে এর প্রভাব কতটা বিস্তৃত? বাংলাদেশের মানুষের জন্য হলিউডের অর্থ কী? সুপারহিরোদের নিয়ে যে আকর্ষণ তৈরি হয়েছে, তাও যেন আমাদের নিজস্ব কল্পনাবিলাসের সঙ্গে মিশে যায়। চলুন জেনে আসি , হলিউডের এই বিস্তৃত সাম্রাজ্যের কিছু চমকপ্রদ তথ্য।

হলিউডের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য:

হলিউড মানে কেবল সিনেমা নয়, এটা একটা বিশাল শিল্পকৌশল। ২০২৩ সালের হিসেবে, হলিউডের বাজার মূল্য প্রায় ৩৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা টাকায় প্রায় ৪০ লক্ষ কোটি টাকা। হলিউড শুধু সিনেমা নয় বরং প্রযুক্তি, মিউজিক এক কথায় সব ক্ষেত্রে প্রভাব তাদের বিস্তার করছে। যেমন ধরুন ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম’ যা একাই বিশ্বব্যাপী ২.৭ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করেছিল! হলিউডের ব্যবসা শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ নয়; হলিউডের অধিকাংশ আয় আসে বিশ্ববাজার থেকে।

অ্যাভেঞ্জার্স এন্ডগেম চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য, যা হলিউডের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যের সফলতার প্রতীক।

অ্যাভেঞ্জার্স এন্ডগেম, হলিউডের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যের সফলতার প্রতীক। | ছবি সংগৃহীত।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোতে হলিউডের ছবি কতটা জনপ্রিয়? উদাহরণস্বরূপ, চীন বা ভারতে সিনেমা হলে হলিউডের ছবি মুক্তি পেলে দর্শকের ঢল নামে সিনেমা হল গুলোর দিকে। এশিয়ার অন্যান্য দেশ, যেমন  জাপান, এবং আমাদের বাংলাদেশেও হলিউডের সিনেমা দর্শকদের কাছে আলাদা একটা আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

সুপারহিরো মুভির প্রতি মানুষের আবেগ :

আধুনিক হলিউড মানে সুপারহিরোদের রাজত্ব। মার্ভেল সিনেমেটিক ইউনিভার্স এবং ডিসি ইউনিভার্সের মাধ্যমে সুপারহিরোরা  সিনেমা জগতে একটি নতুন  ধারার সৃষ্টি করেছে। ‘আয়রন ম্যান’, ‘থর’, ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা’, কিংবা ‘স্পাইডার-ম্যান’—এদের চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। বাংলাদেশেও তরুণ প্রজন্মের কাছে এই সুপারহিরোরা বেশ পরিচিত। সিনেমা হল, টেলিভিশন, কিংবা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম—যেখানেই হোক না কেন, বর্তমানে সুপারহিরোদের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী।

সুপারহিরো মুভির একটি দৃশ্য, যা হলিউডের জনপ্রিয়তার প্রধান ভিত্তি হিসেবে মানুষের আবেগকে তুলে ধরে।

সুপারহিরো মুভির দৃশ্য, যা হলিউডের জনপ্রিয়তার প্রতীক। | ছবি সংগৃহীত।

বিগত দশকে,  ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উত্থানে, বিশেষ করে স্ট্রিমিং পরিষেবা, যেমন নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, এবং ডিজনি+, এখন বাংলাদেশের মতো দেশেও সহজলভ্য। ফলে, হলিউডের ছবিগুলো সরাসরি বাংলাদেশি দর্শকদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। যার ফলে আমেরিকা পুরো বিশ্বব্যপি  দেশ গুলোতে একটা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। যেমন – বাংলাদেশে গেল জুন- জুলাই মাসে যে প্রতিবাদ আন্দোলন হলো তাতে মাঝে মাঝেই কিছু তরুনদের হলিউডের বিভিন্ন সুপার হিরোদের কস্টিউমে দেখা গেছে।

বাংলাদেশের হলিউড-ভক্তরা কেন মুগ্ধ?

বাংলাদেশের মানুষের কাছে হলিউডের সিনেমাগুলো একটি কল্পনার জগৎ খুলে দেয়। ‘হ্যারি পটার’, ‘স্টার ওয়ার্স’, ‘ট্রান্সফর্মারস’, কিংবা ‘জুরাসিক পার্ক’ আমাদেরকে এমন কিছু দেখায় যা আমাদের দেশীয় সিনেমায় দেখা যায় না। তরুণ প্রজন্ম এই সিনেমাগুলো দেখে নতুন আইডিয়া এবং প্রযুক্তির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। এছাড়া, হলিউডের সিনেমার উন্নত প্রযুক্তি এবং স্পেশাল ইফেক্ট দর্শকদের কাছে দারুণ আকর্ষণীয় করে তোলে। 

এক কথায়, হলিউডের সিনেমা যেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বাইরে অন্য একটি কল্পনার দুনিয়া তৈরি করে দেয়। বাংলাদেশে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে হলিউডের সিনেমার প্রতি একটি ভিন্নধর্মী আবেগ কাজ করে। যার ফলে আমাদের  জীবনের ছোটখাট উদযাপনেও এখন হলিউডের সুপারহিরোদের উপস্থিতি দেখা যায়। শিশুদের জন্মদিনে ‘স্পাইডারম্যান’ বা ‘আয়রন ম্যান’ থিম করা কিংবা ক্যাম্পাসের কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ‘জোকার’ বা ‘ব্ল্যাক উইডো’ হয়ে সেজে ওঠা যেন বেশ ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। হলিউড কেবল বাংলাদেশের দর্শকদের বিনোদন দিচ্ছে না, বরং আমাদের সংস্কৃতির মধ্যেও ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে।

হলিউড চলচ্চিত্র উপভোগ করছেন বাংলাদেশের ভক্তরা, যা তাদের মুগ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে পরিচিত।

বাংলাদেশের হলিউড-ভক্তদের মুগ্ধতার মুহূর্ত। | ছবি সংগৃহীত।

হলিউডের তারকাদের ফ্যানবেজ:

হলিউডের সুপারহিরোদের পাশাপাশি এমন অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী আছেন, যাদের আলাদা ফ্যানবেস তৈরি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, টম ক্রুজ তার বিখ্যাত “মিশন ইম্পসিবল” সিরিজের মাধ্যমে বিশ্বের বহু মানুষের প্রিয় নায়ক হয়ে উঠেছেন। তার সাহসী স্ট্যান্ট এবং দুর্দান্ত অ্যাকশন দৃশ্যগুলো শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বরং বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও দারুণ জনপ্রিয়। টম ক্রুজের পাশাপাশি, লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, স্কারলেট জোহানসন এবং ডোয়াইন জনসনসহ অনেক তারকা আছেন যারা তাদের অভিনয় এবং ক্যারিশমার মাধ্যমে হলিউডকে গ্লোবাল দর্শকদের কাছে আরও কাছের করে তুলেছেন। এদের প্রভাব এতটাই যে, হলিউডের একটি নতুন সিনেমা মুক্তি পেলে তা নিয়ে বাংলাদেশে যেমন আলোচনা চলে, তেমনি অন্য দেশেও।

হলিউডের তারকাদের প্রতি বিশ্বজুড়ে ভক্তদের উচ্ছ্বাস, যা তাদের ফ্যানবেজের বিশালতার পরিচায়ক।

হলিউড তারকাদের প্রতি ভক্তদের উচ্ছ্বাসের এক ঝলক। | ছবি সংগৃহীত।

অন্যান্য দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বনাম হলিউড

হলিউডের পাশে দাঁড়াতে গেলে সবচেয়ে নিকটবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বী হল বলিউড, ভারতের বিশাল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। বলিউডের বাজার মূল্য প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার, যা অনেক বড় হলেও হলিউডের তুলনায় অনেকটাই ছোট। যদিও বলিউডের ছবি বিশেষত ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে জনপ্রিয়, তবে বৈশ্বিক দর্শকের মধ্যে হলিউডের ছবিগুলোর মতো এতটা বিস্তার নেই। আবার জাপানের অ্যানিমেশন শিল্পও এখন বৈশ্বিকভাবে খুবই জনপ্রিয়, তবে এটির বাজার প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার—হলিউডের তুলনায় এটি এখনও বেশ ছোট।

অন্যান্য দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ও হলিউডের মধ্যে প্রতিযোগিতা এবং প্রভাবের তুলনা, যা বিশ্বব্যাপী বিনোদন শিল্পকে প্রভাবিত করেছে।

অন্যান্য দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এবং হলিউডের মধ্যে প্রতিযোগিতার একটি দৃশ্য। | ছবি সংগৃহীত।

হলিউড কেন আমাদের মনে আলাদা স্থান করে নিয়েছে?

হলিউডের সিনেমাগুলো কেবল গল্প বলে না, বরং দর্শকদের নতুন কল্পনার জগতে নিয়ে যায়, যেখানে সীমা নেই। সুপারহিরোদের মাধ্যমে সাহসিকতার উদাহরণ তুলে ধরে, থ্রিলার বা সায়েন্স ফিকশনের মাধ্যমে প্রযুক্তির জগৎ সম্পর্কে জানায়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বাইরে একটি রঙিন দুনিয়া উপহার দেয় হলিউড, যার প্রতি আমাদের টান তাই এতটা সহজে মুছতে চায়না।

“তথ্যসূত্র”

শূন্য থেকে কোটিপতি আকিজ গ্রুপ

Previous article

যেভাবে বাংলাদেশে শুরু করতে পারেন কোকো পিট ব্যবসা

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *