ইনভেস্টমেন্ট স্ট্রাটেজিস

কেন বিনিয়োগে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ?

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আনিকা তায়্যিবা

বিনিয়োগ হলো সম্পদ বৃদ্ধির একটি শক্তিশালী মাধ্যম, তবে কেবল সম্পদ বাড়াতেই নয়, এর সঙ্গে জড়িত আছে ঝুঁকিও। বাজারের মুদ্রার মান ওঠানামা, অর্থনৈতিক মন্দা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো দ্রুতই আপনার বিনিয়োগ  করা অর্থের মূল্যকে কমিয়ে দিতে পারে। আর এই ক্ষেত্রেই বিচক্ষণতার সাথে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে রয়েছে ঝুঁকিকে প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত করা, মূল্যায়ন এবং প্রশমনের জন্য একটি পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া অবলম্বন করা যা বিনিয়োগের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব

চলুন জেনে নিই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কেন ঝুঁকি চিহ্নিত ও মোকাবেলা করা জরুরী। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা মূলত সফল বিনিয়োগের মেরুদণ্ড। এটি সম্ভাব্য লাভ এবং ক্ষতির মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা বিনিয়োগকারীদের আর্থিক বাজারের অনিশ্চয়তার মধ্যেও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে। প্রতিটি বিনিয়োগেরই ঝুঁকি থাকে, তবে কার্যকর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ক্ষতি কমিয়ে এবং আয় বাড়িয়ে তোলা সম্ভব।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রধান সুবিধাসমূহ

১. পুঁজির সুরক্ষা

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্য হলো বিনিয়োগকারীর মূলধনকে সুরক্ষিত রাখা। সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিত করে এবং তা প্রশমনের কৌশলবলম্বন করে, বিনিয়োগকারীরা বড় ক্ষতির সম্ভাবনা কমাতে পারেন। যেমনঃ ডাইভারসিফিকেশন এবং ডলারকস্ট অ্যাভারেজিং অর্থনৈতিক মন্দার সময় বিনিয়োগ রক্ষার কার্যকর পদ্ধতি।

২. আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিনিয়োগকারীদের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়, যা বিনিয়োগে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এই আত্মবিশ্বাস দীর্ঘমেয়াদে লক্ষ্য অর্জনে আরও শৃঙ্খলাপূর্ণ উপায়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।

৩. ব্যবসার ধারাবাহিকতা নিশ্চিতকরণ

ব্যবসার জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কারিগরি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিত প্রশমনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো রাজস্ব ক্ষতি বা সুনামহানির মতো বড় ধরনের সমস্যা এড়াতে সক্ষম হয়।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যবসার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার কৌশল নিয়ে একটি চিত্র।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যবসার ধারাবাহিকতা নিশ্চিতকরণের কার্যকরী কৌশল। | ছবি সংগৃহীত।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সাধারণ কৌশলসমূহ

এই পর্যায়ে চলুন জেনে নিই কীভাবে আপনার বিনিয়োগের জন্য আপনি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সাধারণ কিছু কৌশল অবলম্বন করবেন। ঝুঁকি কমানোর জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করা হয়:

যেমন-

১. ডাইভারসিফিকেশন বা বৈচিত্রতা 

বিভিন্ন সম্পদশ্রেণীতে বা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ক্ষতির ঝুঁকি কমানো যায়। উদাহারনস্বরূপ- এক জন মুদি দোকানী তার দোকানে চাল, ডাল বিক্রি করার পাশাপাশি সাবান, স্যাম্পুর মতো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করতে পারে। এতে করে একটি সেক্টরে  ক্ষতি হলে যেন অন্য সেক্টরের লাভ দিয়ে তা পূরণ করা সম্ভব হয়।

২. ক্ষতি প্রতিরোধ ও হ্রাস

উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পাশাপাশি বন্ডের , সরকারি ট্রেজারি বিলের মতো স্থিতিশীল বিনিয়োগ যোগ করে বিনিয়োগের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব।

৩. ঝুঁকি ভাগাভাগি ও স্থানান্তর

ঝুঁকি একাধিক পক্ষের মধ্যে ভাগ করা, যেমন বীমা বা অংশীদারিত্বের মাধ্যমে। এছাড়াও বীমা  চুক্তির ফলে ঝুঁকি অন্য পক্ষের কাছে স্থানান্তরও করা যায়। বিমাকৃত সম্পদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে বিমাকারী কোম্পানি।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর রয়েছে চ্যালেঞ্জ। যেমন :

১। সঠিক ভারসাম্য খুঁজে পাওয়াকতটা ঝুঁকি নেওয়া উচিত, তা নির্ধারণ করা অনেক সময় বিনিয়োগকারীদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। খুব বেশি সতর্ক হলে লাভ সীমিত হতে পারে, আবার অতিরিক্ত ঝুঁকি বড় ধরণের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।

২। ব্যয়: শক্তিশালী ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে সময় অর্থ খরচ হয়।

এখন আমরা জানব ঝুঁকি অব্যবস্থাপনার বিশাল এক স্ক্যাম সম্পর্কে– 

২০০৭২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র সর্বোপরি পুরো বিশ্বে হওয়া আর্থিক সংকট ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার একটি বড় উদাহরণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই সময় ব্যাংক ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেডিট চেক ছাড়াই মানুষকে ঋণ দিয়েছিল, যা পরবর্তীতে বৃহৎ ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়। এই ঘটনার ফলে বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারে মারাত্মক ধস নামে। এটি ব্যক্তিগত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ উভয়ের ক্ষেত্রেই শক্তিশালী ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

২০০৭-২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এবং পুরো বিশ্বে আর্থিক সংকটের সময় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার একটি উদাহরণ।

২০০৭-২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং পুরো বিশ্বে আর্থিক সংকটের সময় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা। | ছবি সংগৃহীত।

সর্বোপরি বিনিয়োগকারীর জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কেন গুরুত্বপূর্ণ

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কেবল পেশাদারদের জন্য নয়এটি সবার জন্যেই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি একজন নব্য বিনিয়োগকারীই হোন বা অভিজ্ঞ পোর্টফোলিও ম্যানেজার, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মূলনীতি বোঝা এবং যথাযথভাবে তা প্রয়োগ করা আপনাকে ক্ষতি কমিয়ে আর্থিক লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করবে।

আর্থিক লেনদেনে আয় ঝুঁকি একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ সাধারণত বেশি লাভের প্রতিশ্রুতি দেয়, তবে সঠিক ব্যবস্থাপনা ছাড়া তা বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। কার্যকর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজির সুরক্ষা, আয় বৃদ্ধি এবং আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পারেন।

“তথ্যসূত্র”

কীভাবে বাংলাদেশিরা বিদেশি শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারেন

Previous article

ধাপে ধাপে জরুরী তহবিল গঠন করার উপায়

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *