কোম্পানি ফরেনসিকস

শপআপ: দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রসারের অন্যতম মাধ্যম।

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আনিকা তায়্যিবা

বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রচার প্রসারের জন্য তাদের সিংহভাগ অর্থই বিনিয়োগ করে থাকে নিজেদের মার্কেটিং এ। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের উদ্যোগগুলোর আর্থিক মূল্য অতটা থাকেনা। কম মূলধনের এই ব্যবসাগুলো তাই উন্নতি লাভ করতেও বেশ সময় নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই)-এর জন্য কাজ করতে দেশের খুচরা বাজারে একটি রূপান্তরমূলক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বৃহত্তম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শপআপ। সহ-প্রতিষ্ঠাতা আফিফ জামান, সিফাত সারোয়ার এবং আতাউর রহিম চৌধুরীর নেতৃত্বে শপআপ দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ থেকে শুরু করে মুদি দোকানগুলোর ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বিপ্লব ঘটিয়েছে।

ব্যবসার বিপণন, কারিগরি, বাণিজ্য ও সমন্বিত আর্থিক ব্যবস্থাকে একত্রিত করে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শপআপ ক্ষুদ্র ব্যবসার প্রধান সমস্যাগুলো সমাধান করেছে। ইতোমধ্যেই এটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

শপআপের সূচনা

শপআপের গল্প শুরু হয় একটি অতি সাধারণ ঘটনাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করে। পটুয়াখালিতে নিজের দাদাবাড়ি সফরকালে শপআপ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা আফিফ জামান লক্ষ্য করেন, সেখানকার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পীরা প্লাস্টিক পণ্যের প্রাদুর্ভাবের কারণে সীমিত বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। এই অভিজ্ঞতা আফিফ জামানকে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে অনুপ্রাণিত করে যার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারবেন। এরই সাথে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিও সংরক্ষিত হবে। পরবর্তীতে তার বন্ধুদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর শপআপের ধারণা তাদের মাথায় আসে।

শপআপের সূচনা: দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার উন্নয়নে একটি মাইলফলক।

শপআপের সূচনা: দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন। | ছবি সংগৃহীত।

সাফল্যের ধারাবাহিকতা

২০১৮ সালে নিবন্ধিত হওয়ার পর শপআপ প্রাথমিকভাবে ব্র্যাক-এর সাথে অংশীদারিত্ব করে দেশের প্রথম এমবেডেড ফিনান্স পরিষেবা চালু করে। এটি এসএমইগুলোর জন্য পণ্যের প্রাপ্যতা, স্বচ্ছতা, সঠিক মূল্য নির্ধারণ এবং দক্ষ ডেলিভারি সিস্টেমের সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছিল। কালের পরিক্রমায় শপআপ আজ দেশের বৃহত্তম ডিজিটাল বিজনেস প্রোমোশন প্ল্যাটফর্ম। গত কয়েক বছরে শপআপ ওমিদিয়ার নেটওয়ার্ক এবং বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে অংশীদারিত্ব করেছে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে, এই স্টার্টআপ বহির্বিশ্ব থেকে প্রায় ৩.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ সংগ্রহ করেছে , যা এর ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির বহিঃপ্রকাশ। শপআপের ডেলিভারি পরিষেবা, রেডএক্স দেশের বৃহত্তম পরিষেবা। এ বছরের শুরুর দিকে শপআপ দেশের গণ্ডী পেরিয়ে ভারতের বেঙ্গালুরুতে সম্প্রসারিত হয়। ডিজিটাল প্লাটফর্মটি ভারতীয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ভুনিক অধিগ্রহণ করে। এভাবেই শপআপ এর কার্যক্রমের পরিধি ক্রমাগত প্রসারিত করে চলেছে।

মহামারির সময় প্রভাব

কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বব্যাপী ব্যবসার জন্য অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ দোকান অনলাইনে স্থানান্তরিত হয়। ফলে টিকে থাকার জন্য তার শপআপের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে আগস্টের মধ্যে, প্রতি সপ্তাহে শপআপে লেনদেন করা দোকানের সংখ্যা ৮.৫ গুণ বৃদ্ধি পায়।

মহামারির সময় প্রভাব: ব্যবসা ও অর্থনীতির ওপর স্থায়ী পরিবর্তনের নজির।

মহামারির সময় প্রভাব: বৈশ্বিক অর্থনীতি ও জীবিকা নির্বাহে চ্যালেঞ্জ এবং পরিবর্তনের গল্প। | ছবি সংগৃহীত।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবদান

বর্তমানে শপআপ প্রায় ৬,৫৫,০০০ এসএমইকে সমর্থন করছে। শপআপের মাধ্যমে অনেক নারী নেতৃত্বাধীন এসএমই সফলভাবে চলছে, যা ব্যবসাখাতে লিঙ্গবৈষম্য কমিয়েছে। ক্ষুদ্র শিল্পী ও ঐতিহ্যবাহী কারিগরদের ক্ষমতায়নেও কাজ করে চলেছে শপআপ। এতে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ হচ্ছে। সবমিলিয়ে শপআপ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবদান: সমাজ ও অর্থনীতিতে উন্নয়নের ইতিবাচক প্রভাব।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবদান: দেশের অগ্রগতিতে সহযোগিতার দৃশ্যপট। | ছবি সংগৃহীত।

ভবিষ্যতের লক্ষ্য

শপআপ – এর মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের খুচরা বাজারকে আরও ডিজিটালাইজ করা। স্টার্টআপটি ক্ষুদ্র ব্যবসার মালিকদের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি প্রদান করে ইতোমধ্যেই তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সেকোইয়া ক্যাপিটাল (ইন্ডিয়া) সিঙ্গাপুর-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্লাউস ওয়াং-এর শপআপ নিয়ে বলেন, “শপআপ তার গ্রাহকদের উচ্চ-মানের পণ্য এবং সময়মতো ও নির্ভরযোগ্য ডেলিভারি এবং সহজলভ্য অর্থায়নের মাধ্যমে ক্ষমতায়ন করছে।” ফ্লরিশ ভেঞ্চারস-এর স্মিতা আগারওয়ালও অস্থিতিশীল সময়ে শপআপের স্থিতিশীলতা এবং অভিযোজনক্ষমতাকে প্রশংসা করেছেন।

সাধারণ একটি ধারণা থেকে শপআপের উল্লেখযোগ্য স্টার্টআপে পরিণত হওয়ার যাত্রা উদ্ভাবন এবং সংকল্পের শক্তির একটি অন্যতম বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশের খুচরা বাজারের অনন্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শপআপ দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি লেভেলের উদ্যোগগুলোর জন্য একটি মানদণ্ড স্থাপন করেছে। এর বৃদ্ধি ও বিকাশ ক্ষুদ্র ব্যবসার মালিকদের জন্য একটি আশার আলো যা প্রযুক্তির মিশেল উদ্যোক্তার উদ্যোগে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন আনতে পারে।

“তথ্যসূত্র”

‘পেপারফ্লাই’ অধ্যায়ের সমাপ্তি

Previous article

এআই বদলে দিচ্ছে গ্রাহকের কেনাকাটার অভিজ্ঞতা।

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *