মার্কেটিং ট্রেন্ডস এন্ড আইডিয়াস

২০২৫ সালে ইমেইল মার্কেটিং: বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ এবং সম্ভাবনা

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির

ইমেইল মার্কেটিং গত কয়েক বছরে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেছে এবং আগামী কয়েক বছরে এটি আরও নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করবে। ২০২৫ সালে, এটি শুধু একটি প্রচার মাধ্যম থাকবে না, বরং একটি শক্তিশালী এবং ব্যক্তিগতকৃত মার্কেটিং কৌশল হয়ে উঠবে। ২০২৩ সালে বৈশ্বিক ইমেইল মার্কেটিং শিল্পের বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৮.১৭ বিলিয়ন ডলার এবং ২০৩১ সালের মধ্যে এটি ২৭.৮৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে।  

ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সুযোগ

সারা বিশ্বে বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম যেমন আপওয়ার্ক ও ফাইভার-এ ইমেইল মার্কেটিং একজন ফ্রিল্যান্সারের জন্য বেশ লাভজনক কাজের সুযোগ। একজন দক্ষ ইমেইল মার্কেটার প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার ডলার পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন। তবে এই তথ্য বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারের জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ সারা বিশ্বে ইমেইল মার্কেটিং এর যে চাহিদা তার তুলনায় বাংলাদেশের বাজার ছোট। তবুও  এ কাজ বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ইমেইল মার্কেটিংয়ের ক্যারিয়ার শুরু করছেন, এবং তারা ভালো আয় করছেন।

ঘরে বসে ইমেইল মার্কেটিং শিক্ষাবেন কিভাবে

বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইমেইল মার্কেটিং শেখাচ্ছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন ডিজিটাল মার্কেটিং ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ বা টেন মিনিট স্কুল সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইমেইল মার্কেটিং কোর্স পরিচালনা করে। এসব কোর্স থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ তাদের কর্মজীবন শুরু করাতে পারে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক বেশ কিছু প্ল্যাটফর্ম যেমন “স্কিল শেয়ার”, “ইউডেমি” বা “কোর্সেরা”-এই প্রতিষ্ঠান গুলোও ইমেইল মার্কেটিং শেখায়। এছাড়া ইউটিউবে হাজারেরও বেশি টিউটোরিয়াল পাওয়া যাবে ইমেইল মার্কেটিং এর উপরে ফ্রী তে।

ঘরে বসে ইমেইল মার্কেটিং শেখার উপায় সম্পর্কে একটি চিত্র।

ঘরে বসে ইমেইল মার্কেটিং শেখার কার্যকর কৌশল ও ধাপসমূহ। | ছবি সংগৃহীত।

ইমেইল মার্কেটিং শেখার সহজতা

এটি যে খুব সহজ কাজ, তা বলা যাবে না। তবে যেকোনো নতুন শিক্ষার্থীর বা ফ্রিল্যান্সারের জন্য এটি শিখে ক্যারিয়ার গড়ার একটি চমৎকার উপায়। বিশেষত যারা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের দিক থেকে নতুন, তাদের জন্য এই বিষয় আয়ত্ত করা তুলনা মূলক সহজ। তবে কাজ শিখে তার পরেই আপওয়ার্ক ও ফাইভারের মত প্লাটফর্মে যাবার পরামর্শ দেন অভিজ্ঞরা। তাদের মতে প্রয়োজনীয় টুলস এবং সঠিক শিক্ষা পেলে দ্রুত ইমেইল মার্কেটিং শিখে একেকজন ব্যক্তি দক্ষ মার্কেটার হয়ে উঠতে পারেন।

গুরুত্বপূর্ণ টুলস: ইমেইল মার্কেটারের যন্ত্রপাতি

ইমেইল মার্কেটিংয়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি উপাদান হলো আপনার দক্ষতা এবং সঠিক টুলস এর ব্যবহার। গ্রাহকদের সঙ্গে সঠিকভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে হলে, ইমেইল মার্কেটারদের কিছু নির্দিষ্ট টুলের প্রয়োজন হয়, যেমন Mailchimp, HubSpot, GetResponse বা ConvertKit। এই টুলগুলো ব্যবহার করে ইমেইল ক্যাম্পেইন পরিচালনা, গ্রাহক তথ্য বিশ্লেষণ এবং পারফরম্যান্স ট্র্যাক করা সম্ভব হয়। এর মাধ্যমে মার্কেটাররা তাদের ক্যাম্পেইনের কার্যকারিতা পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে আরও উন্নত এবং ফলপ্রসূ কৌশল তৈরি করতে পারে।

ইমেইল মার্কেটিং সফল করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ টুলস এবং সরঞ্জামসমূহ।

ইমেইল মার্কেটিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ টুলস ও যন্ত্রপাতি, যা দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক। | ছবি সংগৃহীত।

পার্সোনালাইজেশনের মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরি

গ্রাহকদের সঙ্গে সঠিকভাবে যোগাযোগ করা এবং সেটি যথাযথ সময়ে করা ইমেইল মার্কেটিংয়ের মূল চ্যালেঞ্জ। এটি সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং অটোমেশন ব্যবহার করে করা হয়। বিভিন্ন ব্র্যান্ড তাদের গ্রাহকদের ওপর ভিত্তি করে পার্সোনালাইজড ইমেইল পাঠায়। সেই ইমেইল কোম্পানির গ্রহকের আগ্রহের বিষয় এবং ক্রয়-আচরণের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো গ্রাহক একটি পণ্য দেখে, তবে সেই পণ্য সম্পর্কিত আরও কিছু তথ্য বা টাকা সম্পর্কিত বা অফার সম্পর্কিত বিষয়ে ইমেইলে পাঠানো হয়, যা গ্রাহককে সেই সেবা বা পন্য কিনতে আগ্রহী করে তোলে। বর্তমানে ভিডিও ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে ব্র্যান্ডের পণ্য বা সেবার সঠিক এবং স্পষ্ট তথ্য সহজে বুঝিয়ে বলা হয়। প্রতিনিয়ত এই ভিডিও ইমেই মার্কেটিং জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

ইমেইল মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যত

বাংলাদেশে এখন তরুণদের মাঝে ইমেইল মার্কেটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার প্রবণতা বাড়ছে। তরুণরা বিভিন্ন কোর্সের মাধ্যমে এই কৌশল শিখে দেশের এবং আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে কাজ করছে। যদিও এটি কাজটি সহজ, তবে এই ক্ষেত্রে সফল হতে চাইলে আপনাকে হতে হবে প্যাশনেট এবং অধ্যবসায়ী, যা আপনার জন্য সফলতা নিয়ে আসতে পারে। ভবিষ্যতে, ইমেইল মার্কেটিংয়ের জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে এবং প্রতি বছর এই ইমেইল মার্কেটিং এর বাজার ১৬% করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ইমেইল মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যৎ প্রবণতা ও আধুনিক কৌশলসমূহ।

ইমেইল মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যৎ: আধুনিক প্রবণতা ও কৌশল নিয়ে বিশ্লেষণ। | ছবি সংগৃহীত।

এছাড়া, যেহেতু ইমেইল মার্কেটিং-এর মাধ্যমে ব্যবসাগুলো তাদের গ্রাহকদের সঙ্গে আরও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হয়, তাই এটি ব্যবসার বিক্রিও বাড়ায়। ছোট বা মাঝারি আকারের ব্যবসাগুলোও ইমেইল মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করে তাদের বিপণন কৌশল আরও উন্নত করছে, যা বৃহত্তর বাজারে তাদের উপস্থিতি আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। 

ইমেইল মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এবং বাংলাদেশে এই ক্ষেত্রটি দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। এটি শুধুমাত্র ব্যবসার বিক্রয় বাড়ানোর একটি মাধ্যম তা নয়, বরং একটি শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলার এবং বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর অন্যতম পদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। আর তাই ২০২৫-ই আপনার জন্য হতে পারে ইমেইল মার্কেটিং শেখার জন্য সেরা সময়।

“তথ্যসূত্র”

‘ঘুম’ আপনার উৎপাদনশীলতা বাড়াতে মুখ্য সহায়ক

Previous article

একক মুদ্রা ইউরো: সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *