এন্ট্রেপ্রেনিউরশিপ

বিজনেস আইডিয়াকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার ৮টি সহজ উপায়

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা ইসফাকুল কবির

আপনার মাথায় হয়তো একটি চমৎকার ব্যবসার ধারণা ঘুরছে, যা আপনি বাস্তবে রূপ দিতে চান। ব্যবসার এমন একটি ধারণা, শুধু আপনার না যা আপনার সমাজের এমনকি দেশের চেহারা বদলে দিতে পারে। কিন্তু যতক্ষণ না এই আইডিয়াকে আপনি বাস্তবে রুপ দেবার চেষ্টা করছেন ততোক্ষণ এটা একটা ধারণা ছাড়া কিছুই না। তাই মনে রাখতে হবে আপনার সাফল্যের আসল গল্প শুরু হবে বিজনেস আইডিয়াকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার মাধ্যমে।

অনেক নতুন উদ্যোক্তাই এ যাত্রায় বাধার সম্মুখীন হন। কোথা থেকে শুরু করবেন, কীভাবে আগাবেন—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেকেই থেমে যান বা বিভ্রান্ত হন। তবে সঠিক পরিকল্পনা, ধৈর্য, এবং সঠিক কৌশল অনুসরণ করলেই আপনি আপনার স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে পারবেন।

১. নিজের আগ্রহকের বিষয়কে গুরুত্ব দিন

আপনার আগ্রহের সঙ্গে মিলে যাওয়া কাজই আপনাকে কঠিন সময়ে টিকে থাকতে সাহায্য করবে। অনেকেই আছেন যারা শুধু একটি ব্যবসায় লাভ দেখে সেই ব্যবসায় নামেন কিন্তু সেই ব্যবসায় যদি তার আগ্রহের জায়গা না থাকে তবে দেখা যায় কিছু দিন পরে তা থমকে যায়। 

উদাহরণ স্বরূপ ধরা যাক ফাহিমা আফরোজের কথা, যিনি দেশীয় পণ্যের প্রচারে কাজ শুরু করে আজ দেশের একটি জনপ্রিয় ই-কমার্স ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার উদ্যোগ শুরু হয়েছিল “সোয়াপ” পণ্যের প্রতি ভালোবাসা থেকে। আফরোজের গল্প মাধ্যমে এটাই প্রমাণ হয় যে, আপনার কাজের প্রতি ভালোবাসা আপনাকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। একই বিষয়ে অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের বলেন, “আপনার কাজের প্রতি ভালোবাসা আপনাকে সঠিক পথেই রাখবে।

বিজনেস আইডিয়া সফল করতে নিজের আগ্রহের বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। | ছবি সংগৃহীত।

২. সাহায্য চাইতে পিছপা হবেন না

ব্যবসায় সাফল্যের একটি মূল চাবিকাঠি হলো সবার সাথে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলা। ক্লায়েন্ট, সহকর্মী, এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পেশাদার ও আন্তরিক সম্পর্ক আপনার ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। তাই নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে সম্ভাব্য অংশীদার, বিনিয়োগকারী, এবং পরামর্শদাতাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করুন। বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া বা নতুন কিছু শেখা আপনার ব্যবসার কৌশল উন্নত করতে সাহায্য করবে। সাহায্য চাইতে দ্বিধা করবেন না—আপনার ব্যবসার উন্নতির জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩. আপনার ব্যবসার সমস্যাগুলি শনাক্ত করুন

প্রতিটি সফল ব্যবসার পেছনে একটি সাধারণ মূলনীতি রয়েছে—মানুষের সমস্যার সমাধান করা। আপনার এলাকায় কোন কোন সমস্যাগুলি মানুষকে বেশি ভোগাচ্ছে তা খুঁজে বের করুন। এই সমস্যাগুলির জন্য একটি কার্যকর সমাধান তৈরি করতে পারলে সেটিই আপনার ব্যবসার ভিত্তি হতে পারে। মানুষের দৈনন্দিন সমস্যার সহজ সমাধান দিলে আপনার পণ্যের বা পরিষেবার চাহিদা দ্রুত বাড়বে। তবে মজার ব্যপার হলো বেশিরভাগ মানুষ আগে সমাধান বের করে তার পর সেই সমাধানকে কাজে লাগানোর জন্য একটি সমস্যা খুঁজে বের করে। যার ফলে অনেক সময় নতুন উদ্যোক্তার অনেক সময় ব্যাবসার বাস্তবায়ন দেখার আগেই সব শেষ করে ফেলে। এ বিষয়ে উদ্যোক্তা জুবায়ের আহমেদ দেখেছিলেন যে, অনলাইনে টেইলারিং বা দর্জি পরিষেবা প্রায় নেই বললেই চলে। অথচ এটি একটি বড় চাহিদার বিষয়। এই অভাব লক্ষ্য করে তিনি “ইজি টেইলারিং” চালু করেন। এটি একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গ্রাহকরা ঘরে বসেই তাদের মাপ অনুযায়ী পোশাক তৈরির অর্ডার করতে পারেন। তার এই উদ্যোগ দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, কারণ এটি মানুষের সময়, শ্রম এবং খরচ কমিয়ে দেয়।

৪. নতুন কিছু শেখার মনোভাব রাখুন

আপনার পণ্য বা সেবার উন্নতির জন্য গ্রাহকের থেকে মন্তব্য নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাহকদের মতামত শোনা এবং তা বাস্তবায়ন করতে কখনো পিছপা হতে বারণ করেছেন অনেক সফল ব্যবসায়ীরা। তাই ব্যবসা বাস্তবে রুপ দিতে প্রতিটি ধাপ থেকে নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন। এটি আপনাকে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে এবং সেগুলোর কার্যকর সমাধান এনে দেবে।

বিজনেস আইডিয়া বাস্তবায়নে নতুন কিছু শেখার মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। | ছবি সংগৃহীত।

৫. ধাপে ধাপে বড় স্বপ্ন পূরণ করুন

বড় কিছু করার জন্য প্রথমে ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। একবারে বড় কিছু করতে যাওয়ার চেয়ে ছোট কিছু দিয়ে শুরু করা ভালো। এ জন্য প্রথমে অল্প কিছু পণ্য তৈরি করুন এবং তা বাজারে পরীক্ষা করুন চাইলে আপনি আপনার কাছের মানুষ বন্ধু দের থেকেও পণ্যের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই প্রথমে ছোট কিছু দিয়ে শুরু করুন, তারপর ধীরে ধীরে আপনার সেবা বা পণ্য সম্প্রসারণ করুন। উদাহরণস্বরূপ, পাঠাও অ্যাপ তাদের যাত্রা শুরু করেছিল বাইক রাইড শেয়ারিং সেবা দিয়ে। পরে তারা ফুড ডেলিভারি, পার্সেল ডেলিভারি ইত্যাদি সেবা যুক্ত করে ব্যবসার পরিধি বাড়ায়।

৬. জনপ্রিয় ব্র্যান্ড গুলোর থেকে শিখুন

বিশ্বমানের ব্র্যান্ড এবং স্থানীয় সফল উদ্যোগগুলির দিকে তাকান। আপনি তাদের থেকে শিখতে পারেন, কীভাবে তারা বাজারে নিজের অবস্থান তৈরি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, জামদানী শাড়ি ব্র্যান্ড “টাঙ্গাইল শাড়ি ঘর” শুধু ঐতিহ্য ধরে রেখেই সফল হয়নি, বরং ডিজাইনে বৈচিত্র্য আনতে সক্ষম হয়েছে এবং এতে তারা বড় বাজার দখল করেছে।

৭. অতিরিক্ত পরিকল্পনা বাদ দিন এবং কাজ শুরু করুন

কখনও কখনও অতিরিক্ত পরিকল্পনা করা একধরনের সময়ের অপচয় হতে পারে। পরিকল্পনা প্রয়োজন, তবে কাজ শুরু করা আরও জরুরি। সাহস করে প্রথম পদক্ষেপ নিন এবং কাজে লেগে পড়ুন। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের স্টার্টআপ “শেখো” প্রথম দিকে অনেক অনিশ্চয়তার মুখে ছিল। তারা পরিকল্পনা কমিয়ে সরাসরি কাজ শুরু করেছিল, এবং সফলতা লাভ করে। যদি আপনি অনেক বেশি পরিকল্পনা করেন কিন্তু কাজে কিছুই করার নাম নেই, তাহলে আপনি শুধু পিছিয়েই পরবেন অন্যের থেকে। এমন অনেক মানুষ আছে যারা নিজের কিছু করব করতে করতে মাসের পরে মাস কাটিয়ে দেয় শুধু বন্ধুদের সাথে পরিকল্পনা এবং আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখতে দেখতে। তাই ছোট করে হলেও শুরু করুন।

সফল বিজনেস আইডিয়া গড়ে তুলতে অতিরিক্ত পরিকল্পনার চেয়ে কাজ শুরু করাই গুরুত্বপূর্ণ। | ছবি সংগৃহীত।

৮. ব্যর্থতাকে শেখার অভিজ্ঞতা হিসেবে নিন

ব্যর্থতা আপনাকে নতুন করে গড়ে তুলবে। আপনাকে আগামীর বিপদ থেকে বেচে থাকার শিক্ষা দিবে। যার ফলে এই ব্যর্থতা থেকে নেওয়া শিক্ষা আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে। এই সম্পর্কিত হেনরি ফোর্ডের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে  “প্রত্যেক ব্যর্থতা একটি নতুন সুযোগ নিয়ে আসে।”

আপনার ধারণাকে বাস্তবায়নের জন্য আর দেরি করবেন না। আজকের সিদ্ধান্তই আপনাকে আগামীকাল সাফল্যের পথে এগিয়ে নিবে। 

টিপস: নিজের প্রতি আস্থা এবং  ধৈর্য রাখুন, ইতিবাচক থাকুন, এবং সর্বদা নতুন কিছু শিখতে ইচ্ছুক থাকুন।

“তথ্যসূত্র”

ব্যবসায় ব্র্যান্ডিং: কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

Previous article

বিকেন্দ্রীকরন: যে ধারনার ওপর চলে ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইন

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *