Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আয়েশা আক্তার |
বাংলাদেশে ইল্লিয়েন ব্র্যান্ডের নাম শুনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিল। ঈদ আসলেই আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ব্র্যান্ড নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা দেখতে পাই, তার নাম হলো ইল্লিয়েন । ইল্লিয়িনের পাঞ্জাবি নিয়ে মিমস কিংবা পোস্ট দিয়ে আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো তোলপাড় চলে। আছা আপনাদের মনে কখনো কি প্রশ্ন জেগেছে কেনো ইল্লিয়েন নিয়ে এতো এতো আলোচনা হয় ? কিংবা ইল্লিয়েন কিভাবে এতো জনপ্রিয় হয়ে উঠলো? চলুন আজকে সংক্ষেপে জেনে নেই ইল্লিয়েন সম্পর্কে এবং কিভাবে অল্প সময়ের মধ্যে ইল্লিয়েন এত জনপ্রিয়তা লাভ করলো।
শুরুর গল্প
ইল্লিয়েন মূলত একটি প্রযুক্তি-ভিত্তিক বিলাসবহুল ব্র্যান্ড। ২০১৭ সালে একটি অত্যাধুনিক অনলাইন স্টোর সহ ঢাকার কেন্দ্রস্থলে শুধু দুটি ডিসপ্লে সেন্টার দিয়ে ইল্লিয়েন তার যাত্রা শুরু করে। মাত্র সাত বছরের ব্যবধানে ইল্লিয়েন নিজেকে একটি বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডে পরিণত করেছে। অনেকের মতে ইল্লিয়েন দেশের প্রথম সফল লাক্সারি ব্র্যান্ড। দেশীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ার সত্ত্বেও ইল্লিয়েন নিজেকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে, কোনো উৎসব মানেই ইল্লিয়েন এর পাঞ্জাবি।

ইল্লিয়েন মূলত একটি প্রযুক্তি-ভিত্তিক বিলাসবহুল ব্র্যান্ড। | ছবি সংগৃহীত।
কেনো ইল্লিয়েন এতো জনপ্রিয়?
ইল্লিয়েন মূলত নিজেদের ব্যতিক্রমী এবং উচ্চ মানের পণ্যের জন্য জনপ্রিয়। ইল্লিয়েন কখনোই তাদের পণ্যের সাথে সমঝোতা করে না। মার্কেটিংয়ে যেকোনো ব্যবসা সফল হওয়ার ক্ষেত্রে ৪টি পি ( প্রোডাক্ট, প্রাইস, প্লেস এবং প্রমোশন) -এর কথা বলা হয়। ইল্লিয়েন এই ৪টি পি মেনে চলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। আর এই কারণেই এতো কম সময়ে তারা এতো বেশি জনপ্রিয় হতে পেরেছে। চলুন জেনে নেই কিভাবে এই ৪টি পি মেনে চলায় ইল্লিয়েন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
প্রথমত, যে কারণে ইল্লিয়েন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় তা হলো তাদের উচ্চমানের পণ্য। ইল্লিয়েনের প্রতিটি পণ্য হলো স্বতন্ত্র। অর্থাৎ, প্রতিটি পণ্যের ডিজাইন, কাপড়ের ধরন বেশ আলাদা। শুধু তাই নয়, তারা একটি ডিজাইন স্টক আউট হওয়ার বা ওই ডিজাইনের সিজন যাওয়ার পর তা আর দ্বিতীয়বার বাজারে নিয়ে আসে না। তাদের এই বৈশিষ্ট্যের জন্য মূলত মানুষের কাছে তাদের পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। একইসাথে তাদের পণ্যের জন্য প্রয়োজনীয় সুতা, কাপড়, অন্যান্য ম্যাটেরিয়ালস তাদের নিজস্ব কারখানায় তৈরি করা হয়। ফলে বাজারে ইল্লিয়েনের পণ্যের কোনো কপি পাওয়া যায় না।
ইল্লিয়েনের প্রতিটি পোশাকের একটি গল্প রয়েছে।ইল্লিয়েন মূলত পণ্য নয়, তাদের গল্প বিক্রি করে থাকে। আর এজন্যই মানুষের মাঝে ইল্লিয়েন নিয়ে এতো আগ্রহ। তারা তাদের ওয়েবসাইটে প্রতিটি পণ্যের সাথে বিস্তারিত তথ্য যেমন- কি ধরনের ম্যাটেরিয়ালস দিয়ে তৈরি, কিভাবে ব্যবহার করতে হবে, যত্ন নিতে হবে, সবকিছুই উল্লেখ করে দেয়। আর এইসব কিছু ইল্লিয়েনকে করেছে সবার চেয়ে আলাদা।
দ্বিতীয়ত, ইল্লিয়েন সকল পণ্যে প্রাইস দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন ব্র্যান্ডটি সবার জন্য নয়। এটি মূলত নির্দিষ্ট ক্রেতাদের কথা ভেবেই তৈরি করা হয়েছে। আমরা অনেকেই ভাবি, ভালো জিনিসের দাম একটু বেশি হয়। ইল্লিয়েন এই বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়েছে। যে মানের পণ্য ইল্লিয়েন বিক্রি করে থাকে, তা ক্রেতারা বেশি দাম দিয়ে হলেও নিতে আগ্রহী। প্রতিটি পণ্যে সৃজনশীলতা, নান্দনিকতার উৎকৃষ্ট প্রয়োগের কারনেই ক্রেতারা দাম বেশি হওয়ার সত্ত্বেও ইল্লিয়েনকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।

কেনো ইল্লিয়েন এতো জনপ্রিয়? | ছবি সংগৃহীত।
তৃতীয়ত, ইল্লিয়েন যত্রতত্র তাদের শো-রুম বা ডিসপ্লে সেন্টার ওপেন না করে সারাদেশে মাত্র ১০টি ডিসপ্লে সেন্টার ওপেন করেছে। যার মধ্যে আটটি রাজধানীতে, একটি সিলেটে এবং আরেকটি চট্টগ্রামে। নির্দিষ্ট জায়গায় অল্পকিছু শো-রুম রাখার কারণে ইল্লিয়েন নিজেদের এক্সক্লুসিভ ব্র্যান্ড হিসেবে ধরে রাখতে পেরেছে। এছাড়াও ইল্লিয়েনের প্রতিটি ডিসপ্লে সেন্টারের নান্দনিক ডিজাইন, লাইটিং, কর্মচারীদের ব্যবহার তাদেরকে মানুষের আরো কাছে সাহায্য করেছে।
চতুর্থত, প্রতিটি ব্র্যান্ডই নিজেদের প্রসার করার জন্য প্রমোশনের উপর জোর দিয়ে থাকেন। ইল্লিয়েনও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে তাদের প্রমোশনে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে তাদের ক্রেতারা। ক্রেতাদের রিভিউ কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মিমিস, পোস্ট শেয়ারের কারণে, ইল্লিয়েন সম্পর্কে মানুষ দ্রুত জানতে পেরেছে। এছাড়াও তাদের নিজেদের ওয়েবসাইট রয়েছে, যা তাদের ব্র্যান্ডকে মানুষের কাছে সুপরিচিত করে তুলেছে।
ক্রমবর্ধমান গ্রাহকের বৈচিত্রপূর্ণ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ইল্লিয়েন মার্কেটপ্লেস চালু করেছে। তারা নিজেদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে উচ্চমানের পণ্য সরবরাহ করে। এছাড়াও ইল্লিয়েন আইকনিক ব্র্যান্ড এবং অ্যাপেল এবং স্যামসাং-এর মতো প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর সাথেও কলাবোরেশন করছে। তাদের ফ্ল্যাগশিপ পণ্যগুলো ইল্লিয়েন-এর প্ল্যাটফর্মে বিক্রি করা হচ্ছে। হাই-এন্ড রিটেলার ব্র্যান্ডের বিশিষ্ট সাহারা এবং প্ল্যাটিনাম কালেকশনের ঘড়িও পাওয়া যায় তাদের ওয়েবসাইটে।

ইল্লিয়েন আইকনিক ব্র্যান্ড এবং অ্যাপেল এবং স্যামসাং-এর মতো প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর সাথেও কলাবোরেশন করছে। | ছবি সংগৃহীত।
শেষ কথা
ইল্লিয়েন তাদের ব্যতিক্রমী পণ্যের জন্য খ্যাতি লাভ করেছে যেমন- পুরুষদের পোশাক, ফুটওয়্যার এবং আনুষাঙ্গিক। প্রতিটি পণ্য উৎপাদনে প্রযুক্তি ব্যবহার করায় এবং তাদের স্বতন্ত্র নান্দনিকতার জন্য ইল্লিয়িন নিজেদেরকে ব্যতিক্রমী ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। গত সাত বছরে ইল্লিয়েনের ক্রমাগত বিকশিত এবং উদ্ভাবনীয় পণ্য অসংখ্য আইকনিক পুরুষদের পোশাকের সংগ্রহ প্রবর্তন করেছে যা একচেটিয়া উপায়ে ফ্যাশনের সীমানাকে ঠেলে দিয়েছে বহুদূরে।
ইল্লিয়েন নিজেকে একটি প্রযুক্তি-কেন্দ্রিক বিলাসবহুল ব্র্যান্ড হিসাবে আবির্ভূত করতে প্রস্তুত। ডেটা-চালিত পণ্য ডিজাইন এবং প্রকৌশল, উন্নত বিশ্লেষণ, আইটি-সক্ষম সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে ডিজিটাল কমার্স এবং এর বাইরেও ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপের প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে, এটি গ্রাহকদের উচ্চতর পণ্য এবং পরিষেবা সরবরাহ করতে সক্ষম।
আরবি শব্দ ‘ইল্লিয়েন’ এর কোনো সংক্ষিপ্ত রূপ নেই। ‘ইল্লিয়েন’ শব্দের অর্থ হলো জান্নাতের মধ্যে সর্বোচ্চ। ইল্লিয়েন নিজেদের নামের প্রকৃত অর্থ বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর তাই ইল্লিয়েন দেশের সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে গেছে বিশ্ব দরবারে। ইল্লিয়েন ব্র্যান্ডের যাত্রা আমাদেরকে উদ্ভাবন, সৃজনশীলতা এবং শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি নিরলস প্রতিশ্রুতির গল্প বলে।
Comments