ইনফরমেশন টেকনোলজি

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর গতিবিধি নির্দেশ করে ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আনিকা তায়্যিবা

ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট কী?

বর্তমান প্রযুক্তির বেশ আলোচিত এক শব্দ ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট। তবে ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট মানে কী? এটি হলো এমন একটি ডেটা ট্রেইল বা তথ্যের ছাপ যা অনলাইনে আমাদের গতিবিধি কে নির্দেশ করে। যা আমরা বিভিন্ন কার্যকলাপের মাধ্যমে ইন্টারনেটের পাথওয়েতে রেখে যাই। এটি মূলত আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহার এবং প্রযুক্তিগত কার্যকলাপের মাধ্যমে তৈরি হয়। উদাহরণস্বরূপ, যখন আমরা একটি ওয়েবসাইট ভিজিট করি, সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট দিই, বা অনলাইনে কেনাকাটা করি, তখন আমরা আমাদের ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট রেখে যাই, যার ফলে পরবর্তীতে অ্যালগরিদম ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের ট্র্যাক করা বা  খুঁজে পাওয়া সহজ হয়। 

ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:

  • সক্রিয় ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট (এক্টিভ ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট): এটি আমাদের নিজেদের করা বা সচেতনভাবে করা কার্যকলাপ থেকে তৈরি হয়। যেমন, ফেসবুকে ছবি পোস্ট করা, ওয়্যেবসাইটে ব্লগ লিখে শেয়ার করা, বা অনলাইনে একটি ফর্ম পূরণ করা।
  • নিষ্ক্রিয় ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট (প্যাসিভ ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট): এটি আমাদের অজান্তে তৈরি হয়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি কোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন বা আপনার অবস্থান কোথায় তা মোবাইলে লোকেশন অন করার মাধ্যমে ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করলেন।

ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট কী এবং এটি অনলাইন নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণে কীভাবে ভূমিকা রাখে। | ছবি সংগৃহীত।

ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট শুধুমাত্র কিছু ডাটার সমাহার নয়; এটি আমাদের পরিচয়, অভ্যাস এমনকি আমাদের পুরো জীবনের একটি প্রতিচ্ছবি। অনেক ক্ষেত্রেই এটিকে নেতিবাচক ভাবে দেখা যেতে পারে যেহেতু একে অনেকটা ডিজিটাল নজরদারির মতো দেখা হয়। তবে ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন? তা সহজে বোঝার জন্য নীচের দিকগুলোতে নজর দেওয়া যেতে পারে। কেননা এটি সরাসরি ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার সাথে জড়িত।

  • পেশাগত জীবনে প্রভাব:
    আজকের চাকরির বাজারে নিয়োগকর্তারা প্রার্থীদের অনলাইন উপস্থিতি পর্যালোচনা করেন। আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল, মন্তব্য এবং শেয়ার করা বিষয়বস্তু আপনার দক্ষতা এবং পেশাগত মনোভাবের একটি চিত্র তুলে ধরতে পারে।
  • সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকি:
    হ্যাকাররা আপনার ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য পেতে পারে। এটি পরিচয় চুরি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার মতো বিপদ ডেকে আনতে পারে।
  • গোপনীয়তা বজায় রাখা:
    ডিজিটাল দুনিয়ায় অতিরিক্ত তথ্য শেয়ার করলে আমাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ঝুঁকিতে পড়ে। আপনার ব্রাউজিং ডেটা, কেনাকাটার পছন্দ বা সোশ্যাল মিডিয়ার অভ্যাসের উপর ভিত্তি করে কোম্পানিগুলো আপনার সম্পর্কে বিশদ ধারণা তৈরি করতে পারে।
  • ব্যক্তিগত এবং সামাজিক পরিচয়:
    ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট আমাদের অনলাইন উপস্থিতির মাধ্যমে আমাদের সামাজিক পরিচয় এবং মানসিকতাকে প্রতিফলিত করে। সঠিকভাবে পরিচালনা না করলে এটি ব্যক্তি জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি সাইবার নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কী ভূমিকা রাখে। | ছবি সংগৃহীত।

ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট তৈরির ক্ষেত্রগুলো

ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টের বিভিন্ন উদাহরণ রয়েছে যা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে দেখা যায়:

  • ওয়েব ব্রাউজিং: প্রতিটি ওয়েবসাইট ভিজিট, সার্চ ইঞ্জিনে টাইপ করা প্রতিটি শব্দ, এমনকি কোনো বিজ্ঞাপনে ক্লিক করালেও তা ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট তৈরি করে।
  • সোশ্যাল মিডিয়া: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টুইটারে ছবি আপলোড, পোস্ট করা এবং মন্তব্য করলে ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট হয়।
  • অনলাইন শপিং: আপনি যাই কেনেন বা আপনার পছন্দের তালিকা – সবই সংরক্ষণ করা হয় কুকিজে।
  • ইমেইল এবং মেসেজিং: প্রতিটি মেসেজ বা ইমেইল ডিজিটাল রেকর্ডিং এর ব্যবস্থা থাকে জা ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট তৈরি করে।

ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট কীভাবে নিরাপদ রাখা যায়?

ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টকে সুরক্ষিত রাখতে কিছু পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে পারেন। যেমনঃ

ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট কীভাবে নিরাপদ রাখা যায় এবং সাইবার ঝুঁকি এড়াতে করণীয় পদক্ষেপ। | ছবি সংগৃহীত।

  • প্রাইভেসি সেটিংস আপডেট করুন:
    আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে প্রাইভেসি সেটিংস নিয়মিত পরীক্ষা করুন। শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় তথ্য শেয়ার করুন।
  • কুকিজ এবং ব্রাউজিং ডেটা পরিষ্কার করুন:
    অনলাইনে ট্র্যাকিং বা ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট রোধ করতে নিয়মিত ব্রাউজারের কুকিজ মুছে ফেলুন এবং ব্রাউজারের ইতিহাস ডিলিট করুন।
  • ভি পি এন ব্যবহার করুন:
    পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারের সময় ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষার জন্য একটি ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভি পি এন) ব্যবহার করুন।
  • দুই স্তরের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ
    আপনার গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টগুলিতে দুই স্তরের সুরক্ষা বা টু ওয়ে ভেরিফিকেশন চালু করে সুরক্ষা বাড়ান। এটি আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার ঝুঁকি কমাবে।
  • মজবুত পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন:
    প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা এবং জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করে এগুলো নিরাপদভাবে সংরক্ষণ করুন।

ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধু আমাদের কার্যকলাপের একটি রেকর্ড নয়, বরং এটি আমাদের ভবিষ্যতের সুযোগ এবং নিরাপত্তার উপরও প্রভাব ফেলে। তাই  ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টের সচেতনতা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল দুনিয়ার এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে আমাদের দায়িত্বশীল আচরণই পারে আমাদের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।

“তথ্যসূত্র”

পোষা প্রাণীর যত্নে দেশের শীর্ষ অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘চালডাল’

Previous article

বাংলাদেশে শিক্ষার নতুন দিগন্ত ‘এডটেক’

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *