Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা ইসফাকুল কবির |
গৌতম আদানির নেতৃত্বে অদানি গ্রুপ ভারতের সিমেন্ট শিল্পে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। মাত্র ১০.৫ বিলিয়ন ডলারে ভারতের অন্যতম বড় অ্যাম্বুজা সিমেন্টকে কিনে নেয় এই আদানি গ্রুপ। তবে মজার ব্যপার হচ্ছে এত দিন কোন ভারতীয়দের হাতে ছিল না এই কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ। অ্যাম্বুজা সিমেন্ট মূলত ছিল একটি সুইস সিমেন্ট প্রস্তুতকারক কোম্পানি “হলসিমের” একটি শাখা মাত্র। যার ফলে আদানি গ্রুপ ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিমেন্ট প্রস্তুতকারক হিসেবে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করে।
অদানি কৌশলের মূল উদ্দেশ্য
অদানি গ্রুপ তাদের বিশাল অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য বিপুল পরিমাণ সিমেন্টের চাহিদা পূরণ করতে অ্যাম্বুজা সিমেন্ট কিনে নিয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক কৌশল, যা “ব্যাকওয়ার্ড ইন্টিগ্রেশন” নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে অদানি গ্রুপ তাদের সিমেন্ট সরবরাহ চেইনকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে, যা তাদের নির্মাণ খরচ কমাতে সহায়তা করে এবং এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আদানি গ্রুপকে একটি সুবিধামূলক অবস্থান অর্জন করতে সাহায্য করবে।
গৌতম আদানি বলেছেন, “আমরা আমাদের নিজস্ব নির্মাণ প্রকল্পের জন্য সিমেন্টের অন্যতম প্রধান ক্রেতা হয়ে উঠবো।” এর মানে হলো, ভবিষ্যতে অদানি গ্রুপ সিমেন্টের যোগান নিশ্চিত করতে নিজেদের ওপর পূর্ণ নির্ভরশীল থাকবে।
অ্যাম্বুজা সিমেন্টের শক্তিশালী বিপণন কৌশল
অ্যাম্বুজা সিমেন্ট শুধু একটি শক্তিশালী সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানই নয় বরং তার বিপণন কৌশলে সৃজনশীলতা এবং সাসটেইনেবিলিটি রয়েছে। এই ব্যপার গুলোই অ্যাম্বুজা সিমেন্টকে ভারতীয় সিমেন্ট শিল্পের শীর্ষ খেলোয়াড়দের মধ্যে একটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। হাস্যকর বিজ্ঞাপন প্রচার এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য উদ্ভাবন অ্যাম্বুজা সিমেন্টকে এই শিল্পে একদম প্রথম সারির কোম্পানিতে পরিনত করেছে।
এছাড়া, অ্যাম্বুজা সিমেন্টের একটি শক্তিশালী বিনিয়োগ কৌশলও রয়েছে। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি অ্যাম্বুজা সিমেন্টের ১৭.১ মিলিয়ন শেয়ার কিনেছে, যার ফলে তাদের শেয়ারের মূল্য ২২% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত, অদানি গ্রুপ অ্যাম্বুজা সিমেন্টে ৭০.৩৩% শেয়ারের মালিক। এই বিনিয়োগটি অ্যাম্বুজা সিমেন্টের বাজারমূল্যকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং এর শেয়ারের দাম ৬৩৫ রুপি পর্যন্ত পৌঁছেছে।
সুইস কোম্পানি হলসিম কেন ভারত ছাড়লো?
হলসিমের একটি সুইডিশ কোম্পানি হওয়ার শর্তেও ভারতে বেশ ভালোভাবে দীর্ঘ দিন ব্যবসা করে আসছিল। তবে সুইস এই কোম্পানিকে ভারত ছাড়তে হলো দেশটির কিছু নীতির কারণে। মূলত সুইস কোম্পানিগুলোর ওপর ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামানোর চাপ তৈরি হয়। আর এই সিমেন্ট শিল্প বিশ্বব্যাপী তৃতীয় বৃহত্তম কার্বন নির্গমনকারী খাত হওয়ায়, হলসিম তাদের উচ্চ-নির্গমনকারী কারখানাগুলো বিক্রি করে দিয়ে টেকসই নির্মাণ সামগ্রীতে বিনিয়োগ করছে।
ভারতের সিমেন্ট শিল্পের ভবিষ্যৎ
অদানি গ্রুপ এখন ভারতের সিমেন্ট বাজারে ৬৫.৯ মিলিয়ন টন উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তাদের লক্ষ্য অবশ্যই শীঘ্রই শীর্ষ স্থান দখল করা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তাদের অভ্যন্তরীণ কৌশল ও শেয়ারহোল্ডিং বৃদ্ধি, বিশেষ করে “জিকিউজি” পার্টনার এর মত বিনিয়োগকারীদের সমর্থন নিয়ে, তারা খুব শীঘ্রই ভারতের সিমেন্ট শিল্পে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে।
অ্যাম্বুজা সিমেন্টের শক্তিশালী বিপণন কৌশল এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির দিকে তাদের নজর, তাদের এক নতুন প্রজন্মের সিমেন্ট প্রস্তুতকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। এটি ভারতের নির্মাণ ও অবকাঠামো শিল্পে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকেব।
অদানি গ্রুপের অ্যাম্বুজা সিমেন্ট অধিগ্রহণ কেবল একটি বাণিজ্যিক সাফল্য নয়, এটি ভারতীয় সিমেন্ট শিল্পের জন্য একটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা। ভবিষ্যতে, তাদের কৌশল এবং শেয়ারহোল্ডিং বৃদ্ধি ভারতের অবকাঠামো এবং নির্মাণ খাতে তাদের প্রভাব আরও দৃঢ় করবে।
Comments