ইনোভেশনস এন্ড ট্রেন্ডস

নতুন প্রযুক্তি ল্যাব-অন-এ-চিপ

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আনিকা তায়্যিবা

কেমন হবে যদি বলি একটি সম্পূর্ণ ল্যাবরেটরির কার্যক্রমকে একটি ছোট ডিভাইসে সংকুচিত করা যায়। এতটাই ছোট ডিভাইস এটি যা প্রায় একটি ইউএসবি স্টিকের আকারের সমান! বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে? অবিশ্বাস্য হলেও সম্প্রতি এমনই এক প্রযুক্তি আবিস্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। নাম দিয়েছেন ল্যাব-অন-এ-চিপ। এই হাতের মুঠোর মতো ডিভাইসটিতে ক্ষুদ্র চ্যানেল খোদাই করা থাকে, যা অতিক্ষুদ্র স্তরে তরল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং মানব শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলোর বিভিন্ন পরীক্ষামূলক অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।

জৈবসায়নবিদরা মূলত এই প্রযুক্তি তৈরি করেছেন যেখানে পরীক্ষাগারের কার্যক্রমকে একটি চিপে সংকুচিত করে স্কেলিং নিয়মগুলোর সুবিধা প্রদান করা হয়। আকারে ছোট হওয়ায় এটি গবেষকদের আরও নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে, যেখানে তারা একক কোষ নিয়েও এর প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করতে পারেন। 

ল্যাব-অন-এ-চিপ প্রযুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো রোগীর রোগ নির্ণয়ের জন্য করা পরীক্ষাগুলোকে তাঁদের কাছাকাছি বা প্রয়োজনে প্রত্যেকের বাড়িতে সহজে পৌঁছে দেওয়া এবং দ্রুত ফলাফল নিশ্চিত করা। এটি প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর মতো সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলগুলোতেও স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্যতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

রোগ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত ল্যাব-অন-এ-চিপ প্রযুক্তির একটি চিত্র।

ল্যাব-অন-এ-চিপ প্রযুক্তির কার্যপ্রণালী

ল্যাব-অন-এ-চিপ প্রযুক্তি মাইক্রোফ্লুইডিক্সের মাধ্যমে কাজ করে, যা তরল পদার্থ কিভাবে এই ক্ষুদ্র ডিভাইসে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা পর্যবেক্ষণ করে। এই ডিভাইসের চিপগুলো ল্যামিনার ফ্লো-এর উপর নির্ভর করে, যেখানে ক্ষুদ্র স্কেলে তরলগুলো সমান্তরালভাবে প্রবাহিত হয় এবং একে অপরের সঙ্গে মিশে যায় না।

যখন নমুনা তরল ল্যাব-অন-এ-চিপ কার্টিজে প্রবেশ করানো হয়, তখন তা ভেতরের উপাদানগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হয় – যেমন ভালভ, পাম্প ও সেন্সর। এটি সিরিয়াল ডাইলিউশন পদ্ধতির মাধ্যমে একাধিক রাসায়নিক ইনপুটের সঙ্গে মিশে নির্দিষ্ট পরীক্ষার ফলাফল প্রদান করে।

ল্যাব-অন-এ-চিপ প্রযুক্তির কার্যপ্রণালী দেখানো একটি চিত্র।

ল্যাব-অন-এ-চিপ প্রযুক্তির সুবিধা

  • ক্ষুদ্রাকৃতি – ল্যাব-অন-এ-চিপ প্রযুক্তি পরীক্ষাগারের বড় পরিকাঠামোকে ক্ষুদ্র স্কেলে নিয়ে আসে, যা ডাক্তারদের চিকিৎসা কাজে অধিক নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে।
  • দ্রুততা – সাধারণ পরীক্ষার তুলনায় এই প্রযুক্তি ৩০ মিনিটের মধ্যে ফলাফল দিতে সক্ষম।
  • অল্প নমুনার প্রয়োজন – এই ডিভাইসগুলো মাইক্রো থেকে ন্যানোলিটার পরিমাণে নমুনা ব্যবহার করে, যা জৈবিক উপাদানের অপচয় কমায়।
  • নিম্ন ব্যয় – ক্ষুদ্র আকারের কারণে এটি প্রচলিত পরীক্ষাগারের তুলনায় অনেক কম ব্যয়ে তৈরি করা যায়।
  • সহজলভ্যতা – প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে সহায়ক।
  • ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম – স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার কারণে ল্যাব-অন-এ-চিপ ব্যবহারের ফলে ভুলের সম্ভাবনা হ্রাস পায়।

ল্যাব-অন-এ-চিপ প্রযুক্তির বিভিন্ন সুবিধা তুলে ধরা একটি চিত্র।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ল্যাব-অন-এ-চিপ প্রযুক্তি স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। এটি দ্রুত রোগ নির্ণয়, ব্যক্তিগত ওষুধ প্রস্তুতি, সংক্রমণ পর্যবেক্ষণ এবং পুনর্জন্ম চিকিৎসার গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতে, এই প্রযুক্তি আরও উন্নত হয়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান আরও সহজলভ্য ও কার্যকর করে তুলবে।

“তথ্যসূত্র”

আমেরিকার অতিরিক্ত শুল্ক আরোপে বৈশ্বিক চেইন ইন্ডাস্ট্রিতে নেতিবাচক প্রভাব

Previous article

গ্রাহকের সাথে সংযোগ তৈরিতে ইমোশনাল ব্র্যান্ডিংয়ের ভূমিকা

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *