Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির |
বর্তমানে দেশের খেলনার বাজার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার সমান। দিন দিন খেলনার বাজার বাংলাদেশে প্রসারিত হচ্ছে। আর তাই দেখে নতুন উদ্যোক্তাদের এই সেক্টরে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এদিকে শিশুদের সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য খেলনার গুরুত্ব অপরিসীম। এবং দিন দিন অভিভাবকদের এমন সব খেলনার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে যাতে নেই কোন বিষাক্ত উপাদান। চলুন এই বিষয় নিয়ে আজ বিস্তারিত জানবো এবং জানবো কত টাকা থাকলে আপনি এই সেক্টরে কাজ শুরু করে বদলে ফেলতে পারেন আপনার জীবন।
দেশের খেলনার বাজার কত বড়?
এক দশক আগে দেশের বাজারে যা খালনা দেখতেন তার ৯০ শতাংশ ছিল আমদানি নির্ভর। কিন্তু দিন পালটেছে বর্তমানে দেশের খেলনার চাহিদার ৯০% আমাদের দেশেই উৎপাদন হয়। প্রতিবছর এই খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আসে ১০০ কোটি টাকা। তবে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এই খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব ১২০০ কোটি টাকা। এতে প্রয়োজন সরকারের কিছুটা সহযোগিতা। বর্তমানে খেলনা তৈরির কাঁচামালের উপরে ৩৬-৪০ শতাংশ শুল্ক গুনতে হয় খেলনা প্রস্তুতকারকদের। তবে খেলনা প্রস্তুতকারকদের দাবি তারাও শুল্ক মুক্ত আমদানি ব্যবস্থা চান। তবে এই খাতের অভিজ্ঞরা বলছেন শুধু শুল্ক মুক্ত করলেই চলবেনা, প্রয়োজন খেলনা তৈরির জন্য নির্দিষ্ট জায়গা এবং দক্ষ জনবল। তবেই এই খাতকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তোলা সম্ভব।
খেলনার ব্যবসা শুরু করতে চাইলে কি করতে হবে?
এতক্ষণে আপনি হয়তো বুঝে গেছেন যে, খেলনার বাজার কত বড় এবং কত সম্ভাবনাময়। তাই আপনি চাইলে খেলনা উৎপাদন কিনবা খুচরা কিংবা পায়কারি বিক্রির দকান দিতে পারেন। এই খাতে আপনার লাভটা খুজে বের করতে যে যে বিষয় গুলো মাথায় রাখতে হবে।
বাজার গবেষণা: আপনি আপনার খেলনার দকানে কোন ধরনের খেলনা রাখবেন তা আগে নিশ্তিচ করুন। কারণ বাংলাদেশের তৈরি ১০০ ভাগের ৮০ ভাগ খেলনা তৈরি করা হয় বিষাক্ত কেমিকেল দিয়ে যা বাচ্চাদের জন্য বেশ ক্ষতিকর। তাই আপনি আপনার দকানে কোন ধরনের খেলনার রাখবেন এটা একদমই আপনার উপরে।
পাইকারি উৎস খোঁজা: আমাদের দেশে খেলনার পাইকারি মার্কেট বলতেই সবাই চকবাজার যেতে বলে। কিন্তু শুধু কি চকবাজারেই খেলনা পাওয়া যায়? বিষয়টা কিন্তু একদমি এমন নয়। আপনি চাইলে ইসলামপুর, কিংবা কাওরান বাজার থেকেও খেলনা পাইকারি দামে কিনতে পারবেন।
পুঁজি বিনিয়োগ ও বাজেট নির্ধারণ: এই খেলনার ব্যবসায় খুব আল্প পুজিতেই আপনি চাইলে এই ব্যবসায় নামতে পারবেন। আপনার কাছে যদি মাত্র ৫০-৬০ হাজার টাকা থাকে তাহলেই আপনি চাইলে এই ব্যবসায় নামতে পারবেন।
খেলনা বিক্রি করবেন কোথায়?
চকবাজার থেকেতো খেলনা কিনলেন কিন্তু এখন সেই খেলনা বিক্রি করবেন কোথায়? যেখানে মানুষ এর সমাগম বেশি যেমন, শিশু পার্ক এই বাইরে সামান্য একটি স্টল দিয়ে আপনি খেলনা বিক্রি শুরু করতে পারেন। খেলনা এমন একটা জিনিস যা বাচ্চারা সব সময় পছন্দ করে। তাই শীত কিংবা গরম সব সময় যে আপনার খেলনা বিক্রি হবে এই নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে আপনি চাইলে বিভিন্ন মেলায় বা ফেস্টিভালে একটি স্টল ভাড়া করে আপনি আপনার খেলনাগুলো বিক্রি করতে পারেন। তবে বিষয়টিকে আরও সহজ করতে চাইলে শুধু অনলাইনে ঘরে বসেও শুরু করতে পারেন আপনার খেলনা বিক্রির ব্যবসা।
খেলনা বিক্রি করতে কি লাইসেন্স লাগে?
আপনি খেলনা তৈরি করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে সরকার থেকে অনুমতি নিতে হবে কিন্তু যদি চান বিভিন্ন মেলায় কিংবা অনলাইনে খেলনা বিক্রি করবেন। এতে করে আপনার কোন অনুমতি বা লাইসেন্স লাগেবে না।
অনলাইন ও অফলাইন বিক্রির সুযোগ
বর্তমানে শুধুমাত্র দোকানের মাধ্যমে বিক্রি নয়, অনলাইনেও খেলনা বিক্রির বিশাল সুযোগ রয়েছে। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, ফেসবুক, এবং ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা খেলনার বিপণন করতে পারেন। বিশেষ করে ফেসবুক মার্কেটপ্লেস এবং নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে বিক্রি করলে বেশি সংখ্যক ক্রেতার কাছে পৌঁছানো সম্ভব। এই ক্ষেত্রে একটি সফল উদাহরণ, Guffi World এর খেলনা। এই গুফি ওয়ালডের প্রতিষ্ঠাতা ওয়ালিউল্লাহ ভুঁইয়া বলেন, “দেশের বাজারে ৮০ শতাংশ খেলনায় থাকে বিষাক্ত কেমিকেল আর তাই আমরা ভিন্ন ধর্মী কিছু খেলনা নিয়ে এসেছি যা আপনার বাচ্চার জন্য কোন ক্ষতি করবেনা।” তার মতে দেশের সচেতন নাগরিকরা বিদেশ থেকে বিষমুক্ত খেলনা কিনে আনে তাদের বাচ্চার জন্য। আর তাইতো তার প্রতিটা খেলনার দাম অনেক বেশি মনে হলেও বিক্রি বেশ ভালো হয়।
খেলনার ব্যবসা বাংলাদেশে একটি লাভজনক খাত হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। বিশেষ করে পাইকারি বাজার থেকে খেলনা সংগ্রহ করে সঠিক পরিকল্পনা ও বিপণন কৌশল ব্যবহার করলে সফল হওয়া সম্ভব। উদ্যোক্তাদের জন্য এটি একটি সম্ভাবনাময় ব্যবসা, যা কম বিনিয়োগে ভালো মুনাফা এনে দিতে পারে। তাই আর দেরি না করে আজই কাজে লাগে পরুন।
Comments