Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা ইসফাকুল কবির |
মানুষ অধিক লাভের আশায় বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করে থাকে। তবে অনেক সময় মানুষের কষ্টে উপার্জিত এই টাকা তারা ভুল জায়গায় বিনিয়োগ করে ফেলে। যার ফল তাকে কোন কোন সময় সারা জীবন ভোগ করতে হয়। তাই আপনার টাকা বিনিয়োগ করা নিরাপদ এবং কোথায় এবং কোথায় নিরাপদ না তা আগে জানা খুব জরুরি। চলুন জেনে নেয়া যাক ঝুঁকিপূর্ণ কিছু বিনিয়োগ নিয়ে-
১। ক্রিপ্টোকারেন্সি
ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারে বিনিয়োগ করা অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বিটকয়েনের মূল্য ২০১৭ সালে একাধিকবার বৃদ্ধি পেয়ে ২০,০০০ ডলার হয়েছিল, কিন্তু পরের বছরই তা কমে ৩,০০০ ডলারের নিচে চলে আসে। কোন মার্কেটের এমন অস্থিরতা থাকলে তথা উত্থান পতন থাকলে সেখান থেকে বিনিয়োগ করে লাভের আসা করাটা খুবই বোকামি। যদিও বিটকয়েনের দাম এখন অনেক। এক বিটকয়েন সমান প্রায় ৮৫ হাজার মার্কিন ডলার। কিন্তু একটা নতুন ইলেট্রনিক মুদ্রার এমন অস্বাভাবিক দাম দেখে অনেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেলেও বাজার বিশ্লেষকরা ভাবছেন যে বিটকয়েন বিনিয়োগকারীরা অচিরেই একটি বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
২। স্টার্টআপ খাত
নতুন নতুন স্টার্টআপগুলোতে বিনিয়োগ করা বেশ আকর্ষণীয় মনে হলেও তা অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে। নতুন স্টার্টআপ অনেক উচ্চ মুনাফা দেবার কথা বলে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় সেই স্টার্টআপ গুলো বাজারে আসার পর ছয় মাসও টিকে থাকতে পারেনি।
৩। রিয়েল এস্টেট প্রকল্প
রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে গেলে মূলত সঠিক সময় এবং পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়। অনেক সময় প্রকল্পগুলোর শুরুতে বেশ চাকচিক্য লাগে এবং সাথে বেশ বড় বড় স্বপ্নও দেখায় কিন্তু তাদের এখন পর্যন্ত কিছুই তৈরি হয়নি। যেমন, একটি এলাকায় নতুন আবাসিক প্রকল্প ঘোষণা করা হলে সেখানে বিনিয়োগকারীরা এটির অতিরিক্ত লাভের জন্য দ্রুত বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হয় বা বাড়ির চাহিদা কমে যায়, তাহলে বিনিয়োগকারী বড় অংকের ক্ষতির মুখে পরতে পারে। আমাদের দেশে এই ক্ষেত্রে গুঁটি কয়েক সফল নাম আছে, তার মধ্যে অন্যতম হ হলো, বসুন্ধরা হাউজিং, রূপায়ন সিটি, যমুনা গ্রুপ রিয়েল ষ্টেট ইত্যাদি।
বর্তমানে বাড়ি ঘরের লোভ দেখিয়ে দীর্ঘ মেয়াদি কিস্তিতে অনেক প্রতিস্থান বাড়ি তৈরির আশ্বাস দিচ্ছে কিন্তু তাদের কাজের অগ্রগতির দিকে তাকালে হতাশ হতে হয়। এছাড়া এই খাতে সবথেকে বড় বাধা হতে পারে মানুষের বাড়ি বা ফ্লাট না কেনার প্রবণতা। যেমন চীনে অর্ডোস কাংবাশি সিটিতে বিশাল বিশাল ভবন নির্মান করে চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন এবং ইনার মঙ্গোলিয়া অর্ডোস ইনভেস্টমেন্ট হোল্ডিং গ্রুপ। কিন্তু মানুষ সেই এরিয়াতে থাকতে ভয় পায়। গত পাঁচ বছরে গুঁটি কয়েক মানুষ ছাড়া সেখানে কেউ থাকে না । তাই চীনের এই শহর একটি ভূতুরে শহরে পরিণত হয়েছে। এজন্য বিনিয়োগের পূর্বে প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাবনা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৪। ফিউচার মার্কেট
ভবিষ্যৎ বাজারের চুক্তিতে বিনিয়োগ করছেন না তো। সেখানে দাম সম্পর্কিত ভবিষ্যৎ অনুমান করতে গিয়ে বিনিয়োগকারীরা আফসোস করতে পারেন। অনেক সময় দেশ বরেণ্য সংস্থাগুলি ফিউচার কন্ট্রাক্ট বা ভবিষ্যৎ চুক্তিতে বিনিয়োগ করেন চায়। কিন্তু সত্য হচ্ছে এই ধরণের চুক্তিতে ঝুঁকি অনেক বেশি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি বাজারে নির্দিষ্ট একটি কাঁচামালের দাম এই বছরে বেশি দেখে আপনি বিনিয়োগ করতে চাইলেন সেই নির্দিষ্ট কাঁচামালের জন্য। এখানে অনেক বেশি অস্পষ্টতা রয়েছে। কারণ এমনও হতে পারে যে আপনার সেই কাঁচা মাল আগামী বছরে লসে বিক্রি করতে হলো। তাই বাড়তি রিস্ক না নিয়ে খুব বেশি লাভের আসা না করে বুঝে শুনে বিনিয়োগ করায় উত্তম।
৫। সমৃদ্ধি অধিকারী শেয়ার
অনেক সময় শেয়ারের বাজারে দেখা যায় কোন এক নির্দিষ্ট কোম্পানির শেয়ার মূল্য অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু আদতে সেই কোম্পানির বাজার চাহিদা খুব একটা ভালোনা। কিংবা সেই কোম্পানি প্রায় দেউলিয়া হতে বসেছে। এমন সময় কোম্পানি গুলোর ধুম করে শেয়ারের সুচক বৃদ্ধি ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেয় না। কারণ এখানে সেই নির্দিষ্ট কোম্পানির শেয়ার তারা নিজেরা নিজেরা কেনা বেচার মাধ্যমে শেয়ারের দাম অনেক ফুলিয়ে ফাপিয়ে দেখায়। তাই এই সমস্ত কোম্পানির শেয়ার কেনা থেকে বিরত থাকুন।
চেষ্টা করবেন এই পাঁচ বিনিয়োগ থেকে নিজেকে নিরপদ রাখেতে। নয়তো নিজের কষ্টে উপার্জিত টাকা জলে পরে যাবে।
Comments