Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আনিকা তায়্যিবা |
ব্যবসার প্রধান লক্ষ্যই হলো গ্রাহকদের কাছে ব্যবসার পণ্য বা সেবা সহজলভ্য করে তোলা। সর্বোপরি, তাঁদের ক্রয় করার অভিজ্ঞতাকে উন্নত করা। আপনার পণ্য বা সেবা যতই চমৎকারই হোক না কেন, যদি গ্রাহকদের জন্য পণ্য বা সেবাপ্রাপ্তি সহজ ও ঝামেলাহীন মনে না হয়, তবে তারা বেশিদিন আপনার গ্রাহক থাকবে না।
তাই ব্যবসার সুব্যবস্থাপনার জন্য এটি নিশ্চিত করা জরুরি যেন গ্রাহকদের প্রতিটি কার্যক্রম ইতিবাচক হয়। যখন গ্রাহক সন্তুষ্ট থাকবে, তখন তারা কোন নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের প্রতি অনুগত হবে। অনুগত গ্রাহকরা বারবার আপনার কাছে ফিরে আসবে, এমনকি এটি নতুন গ্রাহক আনতেও সহায়তা করবে। গ্রাহক উপযোগী সর্বোচ্চ স্তরের সেবা নিশ্চিত করতে পারলে ব্যবসা শুধু টিকবেই না, বরং প্রচার প্রসার লাভ করবে। আর এর পেছনেই লুকিয়ে আছে কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স ট্রান্সফরমেশন এর সাফল্য।
কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স ট্রান্সফরমেশন কি?
শব্দটা বেশ খটরমটর হলেও সাধারণ ভাবে, গ্রাহকের অভিজ্ঞতাকে উন্নত বা ইতিবাচক করার জন্য ব্যবসার বিক্রয় ও সেবা প্রক্রিয়াকে সহজ ও কার্যকর করার প্রক্রিয়াই হলো কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স ট্রান্সফরমেশন। যদি আপনার গ্রাহকদের সেবাগ্রহণের অভিজ্ঞতা দুর্বল হয়, তবে তা আপনার ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ডিজিটাল রূপান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি নিরবিচ্ছিন্ন, সহজ ও নির্ঝঞ্ঝাট গ্রাহক অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা জরুরি।
কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স ট্রান্সফরমেশন ফ্রেমওয়ার্ক
এই ট্রান্সফরমেশন বা রূপান্তর নিশ্চিত করতে চারটি মূল বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। যথা :
- ব্যবসা বা কোম্পানির ভিশন ও স্ট্র্যাটেজি – এটি অবশ্যই গ্রাহককেন্দ্রিক হতে হবে, গ্রাহকের ভালো-মন্দ মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
- কর্মী ও প্রতিভা – প্রতিষ্ঠানজুড়ে সহযোগিতামূলক পরিবেশ বা ইকোসিস্টেম তৈরি করতে হবে।
- কার্যাদি – কার্যকর ও সমন্বিত প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে হবে।
- প্রযুক্তির সম্মিলন – এখনকার যুগে প্রযুক্তি ছাড়া চাইলেও বেশিদূর এগুনো যায় না। তাই প্রতিষ্ঠানে একটি প্রযুক্তিগত কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যা পারস্পরিক সহযোগিতাকে উৎসাহিত করবে।
কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স ট্রান্সফরমেশনের সুবিধা
কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স ট্রান্সফরমেশন বাস্তবায়ন করলে ব্যবসায় বেশ কয়েকটি সুবিধা দেখা যায়:
- উন্নত লক্ষ্য অর্জন – কার্যপ্রণালী সহজ হলে কর্মী ও গ্রাহক উভয়ের জন্যই অভিজ্ঞতা ভালো হয়। ফলে ইতিবাচক লক্ষ্য অর্জন করা যায়।
- বর্ধিত অভিযোজনক্ষমতা – ক্রেতাদের চাহিদা ও বাজারের পরিবর্তনের সঙ্গে সহজেই খাপ খাওয়ানো যায়।
- অধিক গ্রাহক ধরে রাখার সম্ভাবনা – গ্রাহক সন্তুষ্ট হলে তারা দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকে।
- উন্নত দক্ষতা – প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ দলগুলো আরও সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে।
কিভাবে কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স ট্রান্সফরমেশন বাস্তবায়ন করবেন
আপনার ব্যবসার গ্রাহকদের কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স ট্রান্সফরমেশন” ঘটাতে হলে মূলত এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে এগোতে হবে:
- সেবা প্রদানের কাঠামো কল্পনা– প্রথমত, আপনি গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অভিজ্ঞতা তৈরি করতে চান, সেটি নির্ধারণ করুন।
- ব্যবসার কাঠামো পুনর্গঠন– দ্বিতীয়ত, বিভাগভিত্তিক কাজের পরিবর্তে একত্রিতভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য একটি ক্রস-ফাংশনাল দল গঠন করুন, যেন ধাপে ধাপে কাজ করা সম্ভব হয়।
- নতুন দক্ষতা তৈরি করুন – তৃতীয়ত, কর্মীদের জন্য চলমান প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সমর্থন নিশ্চিত করুন।
গ্রাহকের অভিজ্ঞতাকে উন্নত করতে হলে গ্রাহকদের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবসাকে দেখতে হবে। তারা কীভাবে আপনার প্রতিষ্ঠানকে দেখে এবং তাদের মতামত কী, তাঁরা মূলত কি চায় সেটি মূল্যায়ন করা জরুরি। আপনি যদি ক্রমাগত আপনার ব্যবসায়িক মডেলকে গ্রাহকের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী পরিবর্তন করতে পারেন, তাহলে এটি শুধু গ্রাহকদের জন্য সুবিধাজনকই হবে না, বরং আপনার প্রতিষ্ঠানের সফলতার সম্ভাবনাও বহুগুণ বাড়বে।
Comments