Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আনিকা তায়্যিবা |
এ যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বেশ পরিচিত এক শব্দ। কিছু বছর আগেও ভাবা যেত না যন্ত্র নিজেই তার বুদ্ধি খাটিয়ে আমাদের কাজ করে দেবে। তবে আজকাল তা সহজেই সম্ভব। চ্যাটজিপিটি, জেমিনাই এর মতো ওয়েবসাইটগুলো আমাদের যেকোনো প্রশ্নেরই তৎক্ষণাৎ উত্তর দিয়ে থাকে। তবে মেশিন নিজ বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করলেও বিবেকের ব্যাপারটি এখানে অনুপস্থিত। ন্যায়-অন্যায়ের এই জায়গাটাতেই কাজ করে এথিক্যাল এ আই। এথিক্যাল এআই হলো এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যা কোনো সিস্টেম বা ব্যবস্থার উন্নয়ন, পরিচালনা ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে ন্যায়সঙ্গততা, স্বচ্ছতা, এবং মানবিক মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দেয়। এর মূল লক্ষ্য হলো এআই যেন নিরাপদভাবে কাজ করে, সার্বিক ক্ষতি কমায় এবং ব্যক্তি ও সমাজের উপকারে আসে, যাতে এটি অনিচ্ছাকৃত নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি না করে।
এথিক্যাল এআই কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বলা হয়ে থাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো এত দ্রুত প্রচার বা প্রসার অন্য কোনো কিছুরই হয়নি। তাই এতে ঝুঁকিও বেড়েছে বেশি। আজকাল এই মেশিন লার্নিং বিভিন্ন খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং বিশ্বব্যাপী এর বাজারও বাড়ছে দ্রুত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্বয়ংক্রিয়তা, দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে এলেও, এটি নতুন এক ধরনের সমস্যা তৈরি করছে। যা আগে কখনো দেখা যায়নি। যেমন স্বাস্থ্যসেবা খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চাইলে কিছু নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীকে চিকিৎসায় অগ্রাধিকার দিতে পারে যারা সরাসরি সিস্টেমটির উন্নয়নে যুক্ত ছিল। এছাড়াও আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অপরাধীদের পুনরায় অপরাধ করার সম্ভাবনা নির্ধারণের ক্ষেত্রেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বর্ণবাদী সিদ্ধান্ত দিতে পারে।
তাই যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে এথিক্যাল এআই এর নীতিগুলো অনুসরণ করা হয়, তবে এই ধরণের পক্ষপাত এবং ঝুঁকি কমানো সম্ভব। ফলে এআই আরও নিরাপদ, ন্যায়সংগত এবং নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠবে।
এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে কেন আমাদের এথিক্যাল এআই নিয়ে ভাবতে হবে?
১. পক্ষপাত ও বৈষম্য রোধ করা
এআই সিস্টেমগুলো যেসব ডেটা থেকে শেখে, সেগুলো যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয়, তবে এটি সমাজের নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। উদাহরণ: চাকরির জন্য এআই-ভিত্তিক স্ক্রিনিং টুল যদি অতীতের পক্ষপাতদুষ্ট ডেটা ব্যবহার করে, তবে এটি নারীদের বা সংখ্যালঘুদের চাকরির সুযোগ কমিয়ে দিতে পারে।
২. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা
অনেক এআই অ্যালগরিদম “ব্ল্যাক বক্স” পদ্ধতিতে কাজ করে, অর্থাৎ তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াটি বোঝা কঠিন। যদি কোনো এআই আপনাকে ব্যাংক ঋণ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে সেটি কেন এমন করলো, তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। এথিক্যাল এআই এই স্বচ্ছতাকে নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
৩. সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা মেশিন লার্নিং বিশাল পরিমাণ ডেটা ব্যবহার করে, যা অনেক সময় ব্যক্তিগত তথ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। যদি এটি যথাযথভাবে সুরক্ষিত না হয়, তবে ব্যবহারকারীদের তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে। উদাহরণ: ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি যদি অপরাধীদের হাতে পড়ে, তবে এটি যে কারও নজরদারিতে ব্যবহৃত হতে পারে এবং নাগরিকদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৪. মানবিক মূল্যবোধ বজায় রাখা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যতই উন্নত হোক না কেন, এটি কখনোই মানবিক অনুভূতি, নৈতিকতা এবং বিবেকের সমান হবে না। যেমন যদি চ্যাটবট বা এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট কোনো বিষয়ে অনৈতিক বা ক্ষতিকর পরামর্শ দেয়, তবে এটি বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি, যা সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে মানবসভ্যতা আরও এগিয়ে যাবে। তবে, যদি এটি ভুলভাবে পরিচালিত হয়, তবে সৃষ্টি হবে বৈষম্য, নিরাপত্তাহীনতা ও অবিচার। তাই, এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে আমাদের এথিক্যাল এআই নিয়েও গভীরভাবে চিন্তা করা জরুরি, যাতে এআই মানবতার কল্যাণে কাজ করে এবং কারো ক্ষতি না করে।
Comments