মার্কেটিং ট্রেন্ডস এন্ড আইডিয়াস

ব্র্যান্ড প্রমোশনের নতুন দিগন্ত ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আয়েশা আক্তার

আপনি কি কখনো কোনো ইনফ্লুয়েন্সারের রিভিউ দেখে কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছেন? বেশিরভাগই নিশ্চয়ই ইতিবাচক উত্তর দিবেন। আমরা প্রায় সবাই কোনো রেস্টুরেন্টে যাওয়ার আগে কিংবা কোনো পণ্য কেনার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার রিভিউ দেখে থাকি। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গেলেই দেখি বিভিন্ন ইনফ্লুয়েন্সাররা নানা ধরনের পণ্য প্রমোশন করছেন। এর নাম হলো ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং। চলুন আজকের প্রতিবেদনে আমরা এই ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং কি?

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং বলতে মূলত সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং পদ্ধতিকে বোঝানো হয়, যেখানে কোম্পানি তাদের প্রোডাক্টের প্রমোশন করানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুপরিচিত বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহায়তা নেয়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এটি এমন একটি বিপণন কৌশল যা আপনার ব্র্যান্ডের প্রচারে সাহায্য করার জন্য প্রভাবশালী ব্যক্তিদের শক্তিকে কাজে লাগায়।

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং কি – একটি চিত্র যা ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে ব্র্যান্ড প্রচারের ধারণা তুলে ধরেছে

অনলাইনে যারা বেশ সুপরিচিত তারা ব্র্যান্ডের পণ্য ব্যবহার, উপকারিতা সম্পর্কে দর্শকদের জানায়। যেহেতু তাদের শক্তিশালী অনলাইন উপস্থিতি রয়েছে এবং তাদের দ্বারা মানুষ প্রভাবিত হয়, তাই সাধারণ মানুষের কাছে খুব সহজেই আপনার ব্র্যান্ডের পণ্য পৌঁছায়। ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং কাজ করার কারণ হলো ইনফ্লুয়েন্সারদের উপর সাধারণ মানুষের উচ্চ আস্থা থাকা। ভোক্তারা যখন দেখে তাদের পছন্দের আইডল আপনার ব্র্যান্ডের কোনো পণ্য ব্যবহার করছে , তা তাদের কাছে সামাজিক প্রমাণ হিসাবে কাজ করে।

ইনফ্লুয়েন্সার এবং এর প্রকারভেদ

ইনফ্লুয়েন্সার হলেন এমন ব্যক্তিরা যাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৃহৎ অনুসরণকারী রয়েছে এবং যারা সৌন্দর্য, ফ্যাশন, ফিটনেস, ভ্রমণ এবং খাবারের মতো নির্দিষ্ট শিল্পে যথেষ্ট প্রভাব রাখে। বর্তমানে ব্র্যান্ডের প্রমোশনের জন্য ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং শুরু করার পূর্বে আপনাকে জানতে হবে ইনফ্লুয়েন্সারের প্রকারভেদ সম্পর্কে। তাহলে আপনি ঠিক করতে পারবেন কোন ধরনের ইনফ্লুয়েন্সার দিয়ে আপনার ব্র্যান্ড বা কোম্পানি প্রমোট করতে হবে। চলুন এর প্রকারভেদ সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেই।

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং – বিভিন্ন ধরণের ইনফ্লুয়েন্সারদের শ্রেণিবিন্যাস চিত্রিত করা হয়েছে

মেগা বা সেলিব্রিটি ইনফ্লুয়েন্সার

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাদের ১ মিলিয়নেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে তারা এই ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত। প্রায়শই বিখ্যাত অভিনেতা, সঙ্গীতশিল্পী, ক্রীড়াবিদ এবং অন্যান্য পাবলিক ব্যক্তিত্ব এই ক্যাটাগরিতে থাকে। যেমন লিওনেল মেসি কিংবা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর কথা চিন্তা করুন। তারা আপনার ব্র্যান্ডকে অতুলনীয় এক্সপোজার দিতে পারে। তবে তাদের সাথে অংশীদারিত্ব করা অবিশ্বাস্যভাবে ব্যয়বহুল। সাধারণত বড় বড় এন্টারপ্রাইজ মেগা ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে কাজ করে।

ম্যাক্রো ইনফ্লুয়েন্সার

সাধারণত যাদের ১০০,০০০ থেকে ১ মিলিয়ন পর্যন্ত ফলোয়ার রয়েছে, তারা হলেন ম্যাক্রো ইনফ্লুয়েন্সার। ম্যাক্রো ইনফ্লুয়েন্সারদের অনুগত ভক্ত থাকে, যার ফলে তাদের সহযোগিতায় আপনার ব্র্যান্ড মানুষের কাছে আস্থা অর্জন করে। তবে এটিও আপনার বাজেটের উপর নির্ভর করে তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল হতে পারে।

ম্যাক্রো ইনফ্লুয়েন্সার – বড় ফলোয়ার বেসসহ ইনফ্লুয়েন্সারদের একটি চিত্র

মাইক্রো ইনফ্লুয়েন্সার

সাধারণত  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাদের ১০,০০০ থেকে ১০০,০০০ জন অনুসারী রয়েছে, তাদেরকে মাইক্রো ইনফ্লুয়েন্সার বলে। এদেরকে উদীয়মান তারকা বলা হয় থাকে। এই ইনফ্লুয়েন্সাররা সাধারণত ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব এবং টিকটকের মতো নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মগুলোতে বেশ সক্রিয় থাকে। বিপণনকারীরা মাইক্রো ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে কাজ করতে পছন্দ করে কারণ তারা তাদের সৃজনশীলভাবে ব্র্যান্ডকে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করে থাকে। একই সাথে তাদের সঙ্গে কাজ করা বেশ সাশ্রয়ী মূল্যের।

ন্যানো ইনফ্লুয়েন্সার

যারা ন্যানো ইনফ্লুয়েন্সার, তাদের সাধারণত  ১,০০০ থেকে ১০,০০০ ফলোয়ার থাকে। আপনি যদি নতুন কোম্পানি চালু করে থাকেন, তবে ন্যানো ইনফ্লুয়েন্সার দিয়ে নিজের ব্র্যান্ড প্রমোট করাতে পারেন। সাম্প্রতিক ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং হাব ডেটা অনুসারে, ২০২৪ সালে ৪৪% ব্র্যান্ড ন্যানো ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে অংশীদার হয়েছিলো।

ন্যানো ইনফ্লুয়েন্সার – ছোট ফলোয়ার বেসসহ ইনফ্লুয়েন্সারদের একটি চিত্র

কেনো ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং জনপ্রিয়তা লাভ করছে?

বর্তমানে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বড় কিংবা ছোট ব্র্যান্ডের প্রমোশন করতে ইনফ্লুয়েন্সারদের দেখে থাকি। প্রতিনিয়তই ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা কি কখনো এর পেছনের কারণ সম্পর্কে ভেবেছি? আসলে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। যার ফলে মানুষ এর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। 

প্রথমত, ইনফ্লুয়েন্সাররা ব্র্যান্ডের প্রতি মানুষের বিশ্বাস স্থাপন করতে সাহায্য করে। অনেক ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য এবং পরিষেবাগুলো বিক্রি করতে পারে না কারণ তারা মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে পারে না। কিন্তু যেহেতু ইনফ্লুয়েন্সারদের অনুগত ভক্ত থাকে, তাই তারা যখন আপনার ব্র্যান্ডকে প্রমোট করে, তখন মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করে।

কেনো ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং জনপ্রিয়তা লাভ করছে – ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের বৃদ্ধি এবং এর জনপ্রিয়তার কারণের একটি চিত্র

দ্বিতীয়ত, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং বেশ খরচ সাশ্রয়ী। গতানুগতিক মার্কেটিং যেমন টিভি কিংবা পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন দেওয়া বেশ ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। কিন্তু আপনি যদি এই কৌশলটি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আপনি সাশ্রয়ী মূল্যে মানুষের কাছে আপনার ব্র্যান্ডকে পরিচিত করাতে পারবেন।

তৃতীয়ত, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি করে। আপনি যখন ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে অংশীদার হন, তখন আপনি অবিলম্বে কয়েক হাজার মানুষের সামনে আপনার পণ্য এবং পরিষেবাগুলোকে উপস্থাপন করেন। একজন ইনফ্লুয়েন্সারের সহযোগিতায় আপনার ব্র্যান্ড নতুন দর্শকদের সাথে পরিচিত হয়। তাদের সৃজনশীল মার্কেটিং আপনার ব্র্যান্ডের খ্যাতি এবং বাজার সচেতনতা বাড়ায়।

চতুর্থত, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং সুনির্দিষ্ট দর্শককে টার্গেট করে। প্রতিটি ইনফ্লুয়েন্সারের কিছু সুনির্দিষ্ট দর্শক রয়েছে। যখন আপনি কোনো ইনফ্লুয়েন্সার দিয়ে প্রমোশন করান, আপনি নির্দিষ্ট দর্শককে টার্গেট করেন। এটি নিশ্চিত করে যে, আপনার ব্র্যান্ড কিংবা পণ্য সম্পর্কে যাতে সেই টার্গেটিং দর্শক জানতে পারে।

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি করে – ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধিতে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের ভূমিকা চিত্রিত

সীমাবদ্ধতা

যদিও ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের ব্যাপক সুবিধা রয়েছে, এর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি যে, আপনার ব্র্যান্ডের জন্য উপযুক্ত নয় এমন একজন ইনফ্লুয়েন্সারের সাথে অংশীদার হওয়া, আপনার ব্র্যান্ডের জন্য নেতিবাচক হতে পারে। কারণ আপনি যে ইনফ্লুয়েন্সারের সাথে কাজ করেন তারা আপনার ব্যবসার প্রতিফলন।

আপনার টার্গেটিং অডিয়েন্স কারা, তাদের কথা চিন্তা করে ইনফ্লুয়েন্সার নির্ধারণ করতে হবে। যদি ইনফ্লুয়েন্সারের পূর্বের কোনো বিতর্ক থাকলে সে বিষয়ে সম্পূর্ণ জেনে তারপর কাজ করতে হবে যাতে আপনার ব্র্যান্ডের উপর কোনো বিরুপ প্রভাব না পড়ে।

সীমাবদ্ধতা – একটি চিত্র যা ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের সীমাবদ্ধতাগুলি তুলে ধরেছে

শেষ কথা 

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংকে অনেকেই মার্কেটিং ইন্ডাস্ট্রির নতুন তরঙ্গ বলে মনে করেন। বিশ্বব্যাপী ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ  এই শিল্পটি বিশ্বব্যাপী $৩২.৫৫ বিলিয়নে পৌঁছে যাবে। তবে ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে কাজ করার সময় কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। যেমন- আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কোন ধরণের দর্শককে টার্গেট করতে চাচ্ছেন। তারপর গবেষণা করে উপযুক্ত ইনফ্লুয়েন্সার ঠিক করতে হবে। আপনি কিভাবে মার্কেটিং করতে চাচ্ছেন সে বিষয়ে ইনফ্লুয়েন্সারকে ধারণা দিতে হবে। তাহলেই আপনি এই কৌশল থেকে সফলতা লাভ করতে পারবেন।

“তথ্যসূত্র”

সাধারণ স্টার্টআপ থেকে দারাজের দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার গল্প

Previous article

কিভাবে এআই দ্বারা চালিত ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা পরিবর্তন করে

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *