কোম্পানি ফরেনসিকস

সৌদি আরবের খাদ্য শিল্পে এক বিপ্লব ‘আলবাইক’

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা ইসফাকুল কবির

সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে জন্ম নেওয়া আলবাইক এখন শুধু একটি ফাস্ট ফুড চেইন নয়, বরং একটি গ্লোবাল ব্র্যান্ড। তাদের অনন্য স্বাদ, গুণগত মান, এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে কোম্পানিটি সৌদি আরবের জাতীয় প্রতীকে পরিণত হয়েছে। সৌদি আরবের খাদ্য শিল্পে আলবাইকের সফলতা এবং বিশ্বব্যাপী এর প্রভাব নিয়ে আজকের আর্টিকেল।

আলবাইকের যাত্রা 

১৯৭৪ সালে জেদ্দায় আলবাইকের যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি খাবার পরিবেশন করা যা স্বাদে অতুলনীয় এবং মানে সবার থেকে সেরা। কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা শাকুর আবু গাজালাহ তার ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সৌদি আরবের ফাস্ট ফুড শিল্পে নতুন যুগের সূচনা করেন। প্রথমদিকে, তারা ব্রোস্ট চিকেন এবং কিছু নির্দিষ্ট সস বিক্রির মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে। স্থানীয় উপকরণ এবং পদ্ধতির সঙ্গে জনাব গাজালাহ যুক্তরাষ্ট্রের ব্রোস্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। তার পর থেকে আলবাইক দ্রুত আরবদের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

আলবাইকের যাত্রা সৌদি আরবের খাদ্য শিল্পে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের প্রতীক।

আলবাইকের যাত্রা এবং সৌদি আরবের খাদ্য শিল্পে তার বিপ্লবী প্রভাব। | ছবি সংগৃহীত।

আলবাইকের সাফল্যের পেছনের কারণ

আলবাইকের সাফল্যের মূল কারণ তাদের গোপন সস। এছাড়া আলবাইকের নিজস্ব তৈরি মসলার মিশ্রণ যা খাবারে অসাধারণ স্বাদ তাদের অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। আলবাইক তাদের  খাবারের গুণগত মান, আধুনিক উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং পরিচ্ছন্নতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। সৌদি আরবে ৫০টিরও বেশি শাখা রয়েছে এবং সম্প্রতি তারা আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রবেশ করেছে। আলবাইক তার স্বতন্ত্র স্বাদের জন্য সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য এবং অন্যান্য অঞ্চলে অত্যন্ত জনপ্রিয়। 

এর একাধিক শাখা আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রসারণের মাধ্যমে আরো বেশি মানুষকে আকৃষ্ট করছে, যা ভবিষ্যতে আরও সফলতার দিকে নিয়ে যাবে। তবে আলবাইক শুধু একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং সমাজের উন্নয়নেও ভূমিকা রেখে চলেছে। “ফিনা খায়ের” নামে একটি সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে তারা স্থানীয় স্কুল এবং বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে। যার ফলে মানুষের মাঝে একটা বিশ্বাসের জায়গা তারা তৈরি করতে পেরেছে।

বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণ

কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা শাকুর আবু গাজালাহ তার এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু খাবার বিক্রি করা নয়, বরং সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। আমরা সৌদি আরবকে গর্বিত করতে চাই আমাদের কাজের মাধ্যমে।” এবং এভাবেই তাদের সম্প্রসারণ কৌশল বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যাচ্ছে আলবাইকের মধ্য দিয়ে। ইতিমধ্যেই তারা সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনে শাখা খুলেছে এবং ভবিষ্যতে এশিয়া ও ইউরোপের বাজারেও প্রবেশের পরিকল্পনা করছে। আলবাইক স্থানীয় খাদ্য সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই সেবা এবং স্বাদ উপস্থাপন করে, যা তাদের বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার পেছনে মূল কারণ।

আলবাইকের বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণের মাধ্যমে এর অনন্য স্বাদ ও মান ছড়িয়ে পড়ছে নতুন বাজারে।

আলবাইকের বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণ ও আন্তর্জাতিক সাফল্যের গল্প। | ছবি সংগৃহীত।

আলবাইক মেনুতে কি কি থাকে?
আলবাইক মূলত তাদের সুস্বাদু এবং ইউনিক ফ্রাইড চিকেনের জন্য বিখ্যাত। তাদের মেন্যুতে রয়েছে,

মসলাদার ভাজা মুরগির পিস, ফিশ ফিলেট, চিংড়ি, সালাদ, হুমাস, কর্ন কাপ।
তারা তুলনামূলক কম দামে খাবার সরবরাহ করে, যা তাদের আরব বিশ্বের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় করেছে।

সম্প্রতি কে এস এ আলবাইক তাদের একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ঢাকার গুলশানে চালু করেছে।

আলবাইক মেনুতে পাওয়া যায় মজাদার ফ্রাইড চিকেন, সি-ফুড, স্যান্ডউইচ, এবং আরও অনেক কিছু।

আলবাইক মেনুতে থাকে বিভিন্ন ধরনের ফ্রাইড চিকেন, সি-ফুড ও স্যান্ডউইচ যা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। | ছবি সংগৃহীত।

আলবাইক বনাম অন্যান্য ফাস্ট ফুড ব্র্যান্ড (যেমন কেএফসি)
আলবাইক এবং কেএফসির মধ্যে মূল পার্থক্য হলো স্বাদ এবং কাস্টমারদের আস্থা অর্জন করা।

  1. স্বাদ: আলবাইকের মশলাদার চিকেন এবং সস কেএফসির তুলনায় ভিন্ন তাই অনেকেই আলবাইকে বেশি পছন্দ করে।
  2. দাম: আলবাইকের খাবার কেএফসির চেয়ে তুলনামূলক সস্তা।
  3. স্থানীয়তা: সৌদি আরব এবং আরব বিশ্বের মানুষের খাদ্যাভ্যাস এবং রুচির সাথে আলবাইকের খাবার আরও মানানসই। এবং আলবাইক আরবদের সংস্কৃতি বহন করে। আর এখানেই আলবাইক এবং অন্যান্য ফাস্ট ফুড ব্র্যান্ড এর মধ্যে পার্থক্য।
আলবাইক বনাম কেএফসি: স্বাদ, মূল্য এবং গুণগত মানের দিক থেকে তুলনামূলক বিশ্লেষণ।

আলবাইক বনাম অন্যান্য ফাস্ট ফুড ব্র্যান্ড (যেমন কেএফসি): স্বাদের ভিন্নতা ও গুণগত মানের প্রতিযোগিতা। | ছবি সংগৃহীত।

আলবাইক শুধু একটি ফাস্ট ফুড চেইন নয়। এটি সৌদি আরবের একটি সাংস্কৃতিক প্রতীক। কেএফসি বা অন্যান্য ব্র্যান্ডের তুলনায় আলবাইক তার স্বতন্ত্র স্বাদ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতির সাথে মানানসই বৈশিষ্ট্যের কারণে সবসময়ই আরব বিশ্বের মানুষের হৃদয়ে আলাদা স্থান দখল করে রেখেছে।

“তথ্যসূত্র”

এটিএস-বান্ধব জীবনবৃত্তান্ত তৈরির সহজ গাইডলাইন

Previous article

বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার কিছু সহজ উপায়

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *