Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আয়েশা আক্তার |
২০১৩ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ১০০ প্রভাবশালী ও অনুপ্রেরণাময় নারীর নাম প্রকাশ করে থাকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। বিবিসির ২০২৪ সালের প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের রিক্তা আক্তার বানু। চলুন আজকে তাঁর এই সফলতার যাত্রা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
বিবিসি ১০০ নারী, ২০২৪ প্রকাশ করা হয় গত ৩রা ডিসেম্বর। পাঁচটি বিভাগে তারা সারাবিশ্বের ১০০ নারীর নাম প্রকাশ করেন। এর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি বিভাগে স্থান করে নিয়েছেন রিক্তা আক্তার বানু। পেশায় নার্স রিক্তা আক্তার বানু বহু প্রতিকূলতার মোকাবেলা করে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করে এই তালিকায় জায়গা করে নেন।
শুরুর যাত্রা
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করেন রিক্তা আক্তার বানু। তিনি পেশায় একজন নার্স। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জেষ্ঠ্য নার্স তিনি। ১৯৯৯ সালে তার কোলজুড়ে আসে কন্যা তানভীন দৃষ্টিমনি (ব্রহ্মপুত্র)। রিক্তা বানু যে অঞ্চলে বাস করেন, সেখানে অটিস্টিক শিশু কিংবা প্রতিবন্ধী শিশুকে অভিশাপ হিসেবে দেখা হয়।
নিজের অটিস্টিক ও সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত কন্যাকে লেখাপড়ার জন্য ২০০৭ সালে বিদ্যালয়ে পাঠান। কিন্তু মাত্র তিন বছরের মধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষ তিনবার তাকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর রিক্তা বানু আবার চেষ্টা করেন তানভীনকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে, কিন্তু বহু অনুরোধ সত্ত্বেও, কয়েকদিনের মধ্যেই শিক্ষকরা তাকে আর পড়াতে চাননি।
বারবার স্কুলে ভর্তি করানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হওয়ার যন্ত্রণা থেকেই তিনি নিজের জমি বিক্রি করে ২০০৯ সালে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। সেই স্কুলের নাম দেন ‘রিক্তা আক্তার বানু লার্নিং ডিজেবিলিটি স্কুল’। বর্তমানে সেখানে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছে। স্কুলটি প্রাথমিকভাবে অটিস্টিক কিংবা শেখার প্রতিবন্ধকতা থাকা শিশুদের জন্য নির্মিত হলেও বর্তমানে এই স্কুল বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধিমত্তা ও শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুদেরও লেখাপড়া করার ব্যবস্থা করেছে।
শেষ কথা
বহু প্রতিকূলতার মোকাবেলা করে রিক্তা আক্তার বানুর তৈরি করা এই স্কুল অটিস্টিক এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি সমাজের বিরুপ মনোভাব পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি শুধু একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেননি, বরং প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে অবদান রেখেছেন। তাঁর মতো সংগ্রামী নারীরা আমাদের সমাজ পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছেন।
Comments